
২০১৯ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের আগে এমফিল প্রোগ্রামে ভর্তি যথাযথ প্রক্রিয়ায় না হওয়ায় তৎকালীন জিএস (সাধারণ সম্পাদক) ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর ভর্তি বাতিল হচ্ছে। এ ঘটনায় করা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি এই সুপারিশ করেছে। এখন সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে চূড়ান্ত হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ডাকসুর তৎকালীন এক প্রার্থী আবেদনের প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটি গোলাম রাব্বানীসহ দুইজনের ভর্তি বাতিলের সুপারিশ করেছে। এখন একাডেমিক কাউন্সিল এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।
গোলাম রাব্বানীর ডাকসুর জিএস পদের কী হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডাকসুর তৎকালীন প্রার্থীদের কেউ যদি এ বিষয়ে অভিযোগ করে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখবে।
জানা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ২০১৯ সালে ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের কারচুপির অনুসন্ধানে নতুন তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং এন্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের ২০১২-২০১৩ সেশনের শিক্ষার্থী ও ডাকসুর জিএস প্রার্থী মো. রাশেদ খাঁন ঢাবি উপাচার্য বরাবর একটি আবেদনপত্রে অবৈধ উপায়ে ভর্তি হয়ে ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সকল সদস্যদের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে অনুরোধ করেন।
এদিকে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে বলছে, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন-২০১৯ অনুষ্ঠানের বিষয়ে কিছু প্রার্থী/প্যানেলের পক্ষ হতে ভোটদান, অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়া, ভোট কারচুপি করা, ভোট দানের জন্য কৃত্রিম লাইন সৃষ্টি করা, ভোট কেন্দ্র দখল করা, ব্যালট পেপারে অবৈধভাবে সিল মারা, ভোট দানে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা, অবৈধ উপায়ে ভর্তি হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা, ব্যালট-বাক্সসহ নানা কারচুপি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। তবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণাদি ও সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহের সাক্ষাৎকার হতে প্রাপ্ত তথ্যসমূহ পর্যালোচনা করে কমিটির কাছে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে যে, ক্রিমিনোলজি বিভাগের গোলাম রাব্বানী, মেহজাবিন হক ও ফাহমিদা তাসনিম অনির এমফিল প্রেগ্রামে ভর্তি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। অতএব তাদের ভর্তি আইনের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ বাতিল বলে গণ্য হবে। এ অবস্থায় বৈধ ছাত্রত্ব না থাকার কারণে ২০১৯ সালের ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে জনাব গোলাম রাব্বানীর প্রার্থীতা বৈধ ছিল না। সুতরাং এই কমিটি গোলাম রাব্বানীর জিএস নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টিকে অবৈধ ঘোষণার জন্য জোর সুপারিশ করে।
তদন্ত কমিটির সিদ্ধান্তে বলা হয়, এই তিনজনের এমফিল প্রোগ্রামে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তির অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হওয়ায় তাদের এম.ফিল ভর্তি সাময়িকভাবে বাতিল করা হলো। তাদের এমফিল ভর্তি বাতিলের বিষয়টি একাডেমিক কাউন্সিলে উপস্থাপন করা হোক। পাশাপাশি তদন্ত কমিটির এই সুপারিশ বাস্তবায়নে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সুপারিশ প্রদানের জন্য আইন উপদেষ্টাকে অনুরোধ করা হল।