
সংসদীয় আসন পুনর্বহালের দাবিতে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় চলমান বিক্ষোভ-অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করেছে সর্বদলীয় ঐক্য পরিষদ।
মঙ্গলবার দুপুর থেকে শনিবার পর্যন্ত তা স্থগিত থাকবে। দাবি পূরণ না হলে রোববার নতুন করে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে পরিষদের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়।
সর্বদলীয় ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিত্বকারী এবং আলগী ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. পলাশ মিয়া বলেন, দুপুর দেড়টায় ভাঙ্গা ঈদগাহ জামে মসজিদ চত্বরে সর্বদলীয় নেতাদের উপস্থিতিতে কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মোদাররেছ আলী ইছা।
এ সময় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, খেলাফত মজলিসের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এই ঘোষণার ফলে গণপরিবহনের যাত্রী ও চালকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘিরে সোমবারের সহিংসতাকে ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ দাবি করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী ইছা বলেন, “যারা জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায় না, তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা নিক্সনের টাকায় এবং কাজী জাফর উল্যাহর ইন্ধনে এই ধ্বংসাত্মক হামলা চালিয়েছে।”
এ সময় তিনি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করেন।
মঙ্গলবার পূর্বঘোষিত তিন দিনের কর্মসূচির শেষ। এদিন সকালে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ও বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে দুই ঘণ্টা অবরোধ করা হয়। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
পাশাপাশি সহিংসতা রোধে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন এলাকায় টহল দিতে দেখা গেছে।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মহাসড়কের হামিরদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দেখা যায়, স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
ফরিদপুর-৪ আসনের সঙ্গে আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে যুক্ত করার দাবি জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ইব্রাহিম খান বলেন, আলগী ইউপি চেয়ারম্যানকে বিনাশর্তে মুক্তি দিতে হবে, মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, রাতের বেলায় প্রশাসন দিয়ে হয়রানি করা যাবে না এবং নতুন করে মামলা দেওয়া যাবে না।
গত ৪ অগাস্ট নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত গেজেটে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসে ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গার আলগী ও হামিরদি ইউনিয়নকে পাশের ফরিদপুর-২ আসনে সংযুক্ত করা হয়।
এর প্রতিবাদে গত কয়েকদিনে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় তিন দফায় ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক এবং রেলপথ অবরোধ করে আন্দোলন করেছে স্থানীয়রা। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার মানুষ।
চলমান এই বিক্ষোভ-অবরোধকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের ঘটনায় রোববার রাতে ৯০ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত পরিচয় ১৫০ জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ।
অন্যদিকে কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার সকালে ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দুটি স্থানে অবরোধ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। এতদিন উপজেলার আলগী ও হামেরদীবাসী আন্দোলন করলেও এদিন অন্য ইউনিয়ন থেকে হাজার হাজার মানুষ যোগ দেন।
বেলা ১টার দিকে বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার জনতা লাঠিসোঁটা, রামদা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মিছিল নিয়ে যোগ দেন। মুহূর্তেই সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালান তারা।
এ সময় ১০ থেকে ১২ জন আর্মড পুলিশ সদস্য দৌড়ে গিয়ে পাশের ভাঙ্গা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মসজিদে আশ্রয় নেন। এক পর্যায়ে মাদ্রাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও মসজিদের লোকজন অবস্থান নিয়ে তাদের রক্ষা করেন।
এরপর সেখান থেকে বিক্ষুদ্ধরা থানার দিকে চলে যান। তারা থানায় থাকা গাড়ি ও থানা ভাঙচুর করেন। তখন ভেতরে আটকা পড়েন পুলিশ সদস্যরা। পরে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়েও ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। আগুন দেওয়া হয় সেখানে থাকা মোটরসাইকেলে।
পরে ভাঙচুর চালানো হয় হাইওয়ে অফিস ও পৌরসভা কার্যালয়ে।
পরে রাত ১০ টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক ও জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার সহ উধ্বর্তন কর্মকর্তারা।
পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান মোল্যা বলেন, ইউনিয়ন দুটিকে পুরনো আসনে রাখার বিষয়টি পুনর্বিবেচনাকরণে রাতেই নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।