
সুখ রঞ্জন চক্রবর্তী ভারতীয় নাগরিক। অথচ তিনি দীর্ঘ বছর ধরে পাবনার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরি করছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে জালিয়াতি করে শ্বশুরের নামে লিজ নেয়া সরকারি সম্পত্তি দখলের অপচেষ্টারও অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্ত সুখ রঞ্জন চক্রবর্তী পাবনা সদর উপজেলার বালিয়াহালট আমজাদ হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। ভারতের জাতীয় পরিচয়পত্র ও আধার কার্ড হিসেবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার দক্ষিণ ব্যারাকপুর শহরের দমদমের সূর্যসেন পল্লি, ৪৬৭ এলাকার বাসিন্দা তিনি। তার বাবার নাম নির্মল কুমার।
তবে পাবনা শহরের ২ নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দাও তিনি। সুখ রঞ্জন চক্রবর্তীর ভারতীয় পরিচয়পত্রের তালিকাভুক্তির নাম্বার ০০০০/০০৮০২/৭৬৩৯৭ এবং আধার কার্ডের নাম্বার ৪০৫০২২৩৪৩৩৫১। ভারতীয় জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার জন্মতারিখ ১ জানুয়ারি ১৯৬৯। আবার বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ীও তার জন্ম তারিখ একই। সে হিসেবে তার বয়স ৫৬ বছর।
তিনি ভারতীয় নাগরিক নন, বাংলাদেশের নাগরিক দাবি করে সুখ রঞ্জন জানান, তার জন্ম পাবনায়। দাদার বাড়ি পাবনা শহরে। পৈত্রিক ভিটা পাবনার সুজানগরে। জন্ম লেখাপড়া সব পাবনাতেই। ১৯৮৬ সালে সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৯২ সালে ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে বিএ অনার্স এবং ১৯৯৩ সালে একই কলেজ থেকে মাস্টার্স পাশ করেন। ২০০০ সাল থেকে পাবনায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ওই বছরই সুজানগর উপজেলার ভবানীপুর ২ নাম্বার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরি জীবন শুরু করেন। চাকরির মেয়াদ আরও ৫ থেকে ৬ বছর আছে বলে জানান সুখ রঞ্জন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সুখ রঞ্জন চক্রবর্তী বাংলাদেশ সরকারের চাকুরিবিধি উপেক্ষা করেই প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকুরি করছেন। অথচ তিনি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের নাগরিক। সেখানে জমিজমা কিনেছেন। ফ্লাট বাড়িও করেছেন। তার স্ত্রী ও বড় ছেলে ভারতেই থাকেন। ছোট ছেলে বাক প্রতিবন্ধী হওয়ায় ভাতা পান, এজন্য তাকে নিয়ে পাবনাতে থাকেন। মাঝেমধ্যে ১৫ দিন বা ১ মাস ছুটি নিয়ে তারা ভারতে যান। সুখ রঞ্জনের শ্বশুর দীপক কুমার রায়ের নামে সরকারি লিজ নেওয়া সম্পত্তি জালিয়াতি করে নিজের নামে নেয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ তার শ্যালক সুমন কুমার রায়ের।
এ বিষয়ে সুখ রঞ্জন চক্রবর্তীর শ্যালক সুমন কুমার রায় বলেন, আমার বাবা শহরের মুরগি পট্টিতে সরকারি জমি লিজ নিয়ে বসবাস করতেন। বাবা মারা যাওয়ার পর আমার মায়ের নামে লিজ দেয়া হয়। মা মারা যাওয়ার পর কাউকে না জানিয়ে শুধুমাত্র আমার বোনকে একমাত্র উত্তরসূরি বানিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছে। এমনকি পৌরসভাতেও আমার একমাত্র বোনকে উত্তরসূরি বানিয়ে আবেদন দিয়েছে। আমার বাড়িতে বসবাস করে এখন আমাকেই বাড়ি ছাড়া করতে চায়।
অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে পাবনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল কবীর বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ ও কাগজপত্র পেয়েছি। ইতোমধ্যেই আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে এ বিষয়ে তদন্ত হবে। অভিযুক্ত সুখরঞ্জন কে তদন্তে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়ে গত ১০ সেপ্টেম্বর চিঠি দেয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রমাণ সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
অভিযুক্ত শিক্ষক সুখ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘এসব অভিযোগের ভিত্তি নেই। মিথ্যা অভিযোগ ছড়ানো হচ্ছে। এসব কাগজপত্র বানানো যায়। মূলত আমার শ্যালক সুমন সম্পত্তি দখল করতে আমার পেছনে লেগেছে। এর আগে শ্বশুরের একটি দোকান বিক্রি করে খেয়েছে। এখন বাড়ি দখলের পাঁয়তারা করছেন। কিন্তু বাড়ি তো সরকারি। আমি কীভাবে দেবো। আমার বিরুদ্ধে তদন্ত হলে আমি প্রমাণ দেবো আমি ভারতীয় নাগরিক নই।’