
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র এজেন্ট পরিচয় দেওয়া বাংলাদেশি বংশোত্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরীকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একজন পুলিশ কর্মকর্তা অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। এমনকি কথিত ওই গোয়েন্দাকে ব্যবহারের জন্য একটি প্রাডো গাড়িও দিয়েছিলেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি সোনারগাঁও হোটেলে গিয়ে এনায়েত করিমের সঙ্গে দেখাও করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এনায়েত করিম চৌধুরী গ্রেপ্তার হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় বর্তমানে দুই দিনের রিমান্ডে রয়েছেন । গত শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিন্টো রোডে একটি প্রাডো গাড়িতে করে সন্দেহজনক ঘোরাঘুরির সময় পুলিশ তাকে আটক করে।
পুলিশ জানায়, তার কাছ থেকে দুটি আইফোন জব্দ করা হয়েছে। প্রাথমিক বিশ্লেষণে ফোনে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। পরে তাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ এবং ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। তার মোবাইল ফোন ও বক্তব্য বিশ্লেষণ করে গত রোববার তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে রমনা থানায় মামলা করে পুলিশ। তিনি ৬ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক থেকে ঢাকায় আসেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এনায়েত করিম ৬ সেপ্টেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পর পুলিশের ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা তাকে অভ্যর্থনা জানান। এরপর ওই কর্মকর্তা তাকে একটি পাঁচ তারকা হোটেলে নিয়ে যান। ব্যবহারের জন্য তাকে একটি প্রাডো গাড়িও (ঢাকা মেট্রো–ঘ–১৭–১১৩৮) দেন। গাড়িটি প্রথম নিবন্ধন ছিল রাজধানীর মতিঝিলের সাদ সিকিউরিটিজ লিমিটেড নামের একটি ব্রোকার হাইসের নামে। এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন। তিনি গত বছর গাড়িটি দেনার কারণে তার একসময়ের ব্যবসায়িকে পার্টনার সোলায়মান রুবেল নামের এক ব্যক্তিকে দিয়ে দেন।
বিআরটিএ নথি থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি গাড়িটির মালিকানা পরিবর্তন হয়। সেখানে যে মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে, সেটি নুরুল আফসার নামের এক ব্যক্তির। তিনি বনানীর রেয়ার গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। গাজীপুরের শ্রীপুরে জমির ব্যবসা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
নুরুল আফসার শ্রীপুরে তাদের কোম্পানির জমির ব্যবসা রয়েছে বলে স্বীকার করলেও এবং মোবাইল নম্বর তার হলেও গাড়িটি তাদের কি না—তা তিনি নিশ্চিত নন। গত শনিবার তিনি ঢাকায় ছিলেন না এবং গাড়ির বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান।
এদিকে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরীকে (৫৫) সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আজ ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুর রহমান তাঁর রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এনায়েত করিমের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম জানিয়েছেন, তিনি বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার চুক্তিভিত্তিক এজেন্ট। বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের নিমিত্তে কাজ করার জন্য তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। এরই মধ্যে তিনি সরকারি উচ্চ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে এবং বিভিন্ন বাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা ও ব্যবসায়ী মহলের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন বলে জানান।
এ বিষয়ে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মাসুদ আলম বলেন, “গাড়িটির বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।”
শীর্ষনিউজ