Image description

নওগাঁয় ককটেল ও রাবার বুলেট উদ্ধারের ঘটনায় ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও মামলা এন্ট্রি হয়নি থানায়। যৌথবাহিনীর সদস্যরা গত ২৭ আগস্ট রাতে সদর উপজেলার হাঁপানিয়া এলাকায় একটি টিনের বাড়ি থেকে ৩টি ককটেল সদৃশ বস্তু উদ্ধার করে। এরপর সেগুলো পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাড়িটির মালিক পাথরঘাটা এলাকার শফির উদ্দীনের ছেলে আফাজ উদ্দীন। তিনি হাঁপানিয়া ইউনিয়ন বিএনপির প্রচার সম্পাদক।

টিনের ওই বাড়িটির মালিক বিএনপি নেতা হওয়ায় এখনো মামলা হিসেবে এন্ট্রি হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ এর আগে হাঁপানিয়া এলাকা থেকে ৩ দফা ককটেল উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ তদন্ত ছাড়াই মামলা এন্ট্রি করে। সদর থানার ওসি নুরে আলম সিদ্দিকী অজ্ঞাতনামা হিসেবে মামলা রেকর্ড করতে পারত বলেও অনেকের মন্তব্য।

এদিকে বাড়িটি পরিত্যক্তের অজুহাত দিয়ে ওসি বলছেন, জিডি হিসেবে রাখা হয়েছে। তদন্ত চলমান এবং মামলা হওয়ার সুযোগ আছে।

আর স্থানীয়রা বলছেন, টিনের ওই বাড়িটিতে বসবাস করা যায় এবং সেটি ভাড়াও দেওয়া হয়েছিল। গত প্রায় দুই মাস আগে ভাড়াটিয়া চলে যাওয়ায় আফাজ উদ্দীনের দখলে আছে।

জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর দায়িত্বরত সদস্যরা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ওইদিন রাত সোয়া ১০টায় উপজেলার হাঁপানিয়া বাজার এলাকায় ঘণ্টাব্যাপী অভিযান চালায়। এই অভিযানে আফাজ উদ্দীনের টিনের বাড়ি থেকে দুটি ছোট ও একটি বড় ককটেল, একটি গ্রিল কাটার, দুটি চাপাতি এবং দুটি তাজা রাবার বুলেট উদ্ধার করা হয়। পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উদ্ধার করা জিনিসগুলো এসআই আব্দুল্লাহ আল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু আজও মামলা হিসেবে এন্ট্রি করা হয়নি। দায় এড়ানোর জন্য শুধু জিডি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে দায়িত্বরত পুলিশের ভূমিকা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।

স্থানীয়রা বলছেন, এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে হাঁপানিয়া বাজার এলাকায় যৌথবাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে আব্দুল বাকিদ পবেল নামের এক ব্যক্তির অফিস ঘর থেকে ৩টি ককটেল সদৃশ বস্তুসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে এবং গত ২২ মে রাতে একই ব্যক্তির দাফালিয়া গ্রামের ফার্ম হাউজ থেকে ৩টি ককটেলসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে। সেই ঘটনায় দীর্ঘ তদন্ত ছাড়াই পুলিশ মামলা এন্ট্রি করে এবং সম্প্রতি মামলার প্রধান আসামি পবেলকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।

এ ছাড়া গত ২৫ জুন রাতে লক্ষ্মণপুর এলাকায় একটি বাগানের মধ্যে পরিত্যক্ত অবস্থায় ককটেল উদ্ধার করে যৌথবাহিনীর সদস্যরা। সেই ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার দূরে জাইফুল নামের একজনকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে আসে পুলিশ এবং মামলা রেকর্ড করে জাইফুলকে কারাগারে পাঠানো হয় বলে সূত্রে জানা যায়। কিন্তু বিএনপি নেতার টিনের বাড়ি থেকে ককটেল ও রাবার বুলেট উদ্ধারের এই ঘটনায় দেখা যায়, পুরো উল্টো চিত্র। পরিত্যক্তের অজুহাতে মামলা এন্ট্রি করেনি। একই এলাকা থেকে ককটেল উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশের পক্ষপাতমূলক আইনগত পদক্ষেপ নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।

বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) ককটেল উদ্ধারের ঘটনা জানতে চাইলে বাড়ির মালিক আফাজ উদ্দীন কালবেলাকে বলেন, ‘ভাই ওটা আমার অফসাইড জায়গা, ওইভাবে আমি কিছু দেখিনি, আমি জানি না, আমাকে ডাকেনি, তাই বলতে পারব না। ভাড়া দিয়েছিলাম, কিন্তু কেউ থাকে আবার কেউ থাকে না। ভাড়াটিয়া দুই মাস আগে চলে যাওয়ার পর আমার দখলে থাকলেও আমি সেখানে থাকি না।’

আর মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই বিষয়ে আমি কিছু জানি না, বলতে পারব না।’

জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আব্দুল্লাহ আল ইসলাম বলেন, ‘এখনো মামলা রেকর্ড হয়নি। এ নিয়ে একই এলাকা থেকে ৪ বার ককটেল উদ্ধার হলো। তাই তদন্ত চলমান আছে। তদন্ত করে যার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে, তাকেই গ্রেপ্তার করা হবে।’

আগের ঘটনায় এতো নিয়ম বা তদন্তের প্রয়োজন হয়নি, এটার ব্যাপারে এতো সময় লাগছে কেন জবাবে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে সেদিন ওসি স্যার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আর মামলা রেকর্ড করার ক্ষমতা ওসি স্যারের। এরপরও কিছু জানার থাকলে ওসি স্যারের কাছে জানতে পারেন।’

সদর থানার অফিসার ইনচার্জ নুরে আলম সিদ্দিকী কালবেলাকে বলেন, ‘এখনো মামলা এন্ট্রি হয়নি। পরিত্যক্ত ঘর হওয়ায় জিডি করা হয়েছে। তদন্ত চলমান আছে। কে বা কারা জড়িত এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তদন্তে যদি আফাজের জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’