Image description

দেশের গত তিনটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি জনগণ। বিষয়টি নিয়ে নতুন ও পুরোনো উভয় ভোটারদের মধ্যে বিরাজ করছিল চরম হতাশা। বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগামী নির্বাচনে তরুণ ভোটারের পাশাপাশি সবাই যাতে উৎসবমুখর পরিবেশে পছন্দের প্রার্থীকে সমর্থন দিতে পারেনÑতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।

ইসি দীর্ঘদিন পর এবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করেছে। সব প্রক্রিয়া শেষ করে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে নতুন ভোটার ৪৫ লাখ ৭১ হাজার ২১৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৮ লাখ ৭০ হাজার ২০৩ জন, নারী ২৭ লাখ ৭৬২ জন ও হিজড়া ভোটার ২৫১ জন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তরুণ ভোটাররা বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারেন। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তরুণ ভোটারদের জন্য আলাদা বুথ থাকবে। তাছাড়া নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা বুথ তো থাকছেই। তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়ানো ও আকৃষ্ট করতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তিনি আরো বলেন, এবারের নির্বাচন যাতে উৎসবমুখর ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়, সেজন্য অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

এর আগে ৯ আগস্ট রংপুরে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বৈঠকে সিইসি বলেছিলেন, আমরা চাই যাতে শান্তিপূর্ণ ও নির্ভয়ে মানুষ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। জনগণ ভোটকেন্দ্রে যাওয়া ভুলে গেছেন। তাদের ভোটকেন্দ্রে নেওয়াই নির্বাচন কমিশনের চ্যালেঞ্জ। এজন্য সচেতনতার প্রয়োজন আছে। আর হালনাগাদ তালিকায় নতুন ৪৫ লাখ ভোটার যোগ হয়েছে। আগামী নির্বাচনে এসব তরুণ ভোটারও ফ্যাক্টর।

জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির জয়-পরাজয়ে তরুণদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বড় ফ্যাক্টর হতে পারে। কারণ, বিগত কয়েকটি নির্বাচনে তরুণ সাড়ে চার কোটি এবং নতুন অন্তর্ভুক্ত আরো ৪৬ লাখ সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ কোটি তরুণ ভোটার ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর জন্য বিশাল ফ্যাক্টর।

ইসির তথ্যানুযায়ী, বিএনপি-জামায়াতবিহীন দশম-দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। যথাক্রমেÑ৪০ ও ৪০ দশমিক ৪০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি দেখানো হয়। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাস্তবে এ দুই নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ৫ শতাংশের বেশি ছিল না।

নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব জাহাঙ্গীর আলম দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ফল ঘোষণার সময় বলেছিলেন, ‘৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি।’ তার ওই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় এবং বিতর্কিত নির্বাচনের বিষয়ে নতুন করে আলোচনা তৈরি করে।

এবার হালনাগাদ তালিকায় মৃত ভোটার বাদ দেওয়া হয়েছে ২১ লাখ ৩২ হাজার ৫৯০ জন। নতুন ও পুরোনো ভোটার মিলিয়ে এবার এখন পর্যন্ত ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৬১ লাখ ৭০ হাজার ৯০০ জন। হালনাগাদে অস্বাভাবিক মৃত ভোটার কর্তন ও একাদশ সংসদে অনেক কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়ার ঘটনায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এক অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন জানান, ভোটার তালিকায় লক্ষাধিক বেশি মৃত ব্যক্তির নাম ছিল। তারা ‘কবর থেকে’ ভোট দিয়েছেন। তিনি

বলেন, ‘এটি আমাদের কল্পনার বাইরের বিষয় ছিল।’

নবম সংসদের পর দ্বাদশ সংসদের আগে প্রায় সাড়ে চার কোটি নতুন ভোটার তালিকায় যুক্ত হলেও তারা ভোট দিতে পারেননি। একতরফা নির্বাচনের কারণে পুরোনো ৮ কোটি ভোটারের অধিকাংশই ভোট বর্জন করেছিলেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়। সংবিধান সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়, যার আওতায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও ভাবা হচ্ছে। সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের আহ্বায়ক ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ আমার দেশকে বলেন, বিগত তিনটি নির্বাচন ছিল প্রহসনের। তাই ভোটদানে মানুষের আগ্রহ ছিল না। তবে নির্বাচনব্যবস্থায় বিভিন্ন সংস্কার ও হালনাগাদের পর নতুন একটি নির্ভুল ভোটার তালিকার মাধ্যমে আশা করা যায় মানুষ ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবে। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হবে।