Image description

ডাকসু প্রার্থী শামীমের বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ আনলেন প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন। এক ফেসবুক পোস্টে ইলিয়াস হোসেন জানান জুলাই হত্যার সহযোগী ছিলেন শামীম।

পোস্টের শুরুতেই ইলিয়াস বলেন, সম্প্রতি ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে দুইটি জরিপের ফলাফল গতকাল আমাদের হাতে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সোচ্চারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাপ্টার এবং বেসরকারি সংস্থা ন্যারেটিভ এই জরিপ দুইটি চালায়।

জরিপে বেশ কিছু ইন্টারেস্টিং তথ্য আমাদের হাতে এসেছে। সোচ্চারের জরিপে অংশ নেয় ৯৯১ জন শিক্ষার্থী, আর ন্যারেটিভের জরিপে অংশ নেয় ৫২৬ জন শিক্ষার্থী। জরিপগুলোতে ডাকসু নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের বেশ ভালোই আগ্রহ দেখা গিয়েছে। ৮৪% শিক্ষার্থীরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চান আর ৮৭% শিক্ষার্থী মনে করেন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।
তবে বেশ বড় অংশের ভোটার কাকে ভোট দেবেন তা এখনো নির্ধারণ করতে পারেননি। ভিপি পদ নির্ধারণে নারীদের মধ্যে ৫৪% এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি, আর পুরুষদের মধ্যে ২৪% এখনো সিদ্ধান্ত নেননি। অর্থাৎ নির্বাচনে লড়াই যে হাড্ডাহাড্ডি হবে তা বুঝাই যায়, যেসকল ভোটার এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি তাদের শেষ মুহূর্তের সুইং ভোটগুলোই নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণ করবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখানে নারী ভোট এখনো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর।
বেশিরভাগ প্রার্থীই প্যানেল না দেখে ব্যক্তি দেখে ভোট দেওয়ার পক্ষপাতী। ভোটারদের মতে, প্রার্থীদের ব্যক্তিত্ব, ভালো একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড, একাডেমিয়া ও এক্টিভিজমে ব্যালেন্স, সৎ, ধার্মিক, সত্যবাদী, ভালো সংগঠক এমন প্রার্থীরাই এগিয়ে থাকবেন।
 

তিনি লিখেছেন,  ভিপি পদে বরাবরের মতো সাদিক কায়েমই এগিয়ে আছেন। সোচ্চারের জরিপে সাদিক কায়েম পাচ্ছেন ৩২% ভোট। অবাক করার মতো বিষয় হচ্ছে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা গিয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের।

ন্যারেটিভের জরিপে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে আবার সাদিক কায়েমের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেন। শামীম হোসেনের অবস্থান সাদিক কায়েমের বেশ কাছাকাছিই, সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা ৩০-৩৪% ভোটারের ভোটই এখানে গেমচেঞ্জার। শামীম যদি এখান থেকে বড় একটি অংশের ভোট ক্যাচ করতে পারেন, তবে হয়তো আমরা ডাকসু নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চমকটি দেখতে যাচ্ছি। 

ইলিয়াস হোসেন বলেন, শামীম হোসেনের হঠাৎ এই ব্যাপক সম্ভাবনা নির্বাচনী মাঠের অনেক হিসাব-নিকাশই ঘুরিয়ে দিয়েছে। জুলাই আন্দোলনের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড হিসেবে সাদিকের অন্যরকম একটি গ্রহণযোগ্যতা আছে। পাশাপাশি তাকে নিয়ে বড় কোনো বিতর্ক না থাকা, পরিচ্ছন্ন রাজনীতি এবং গত এক বছরে ক্যাম্পাসে শিবিরের ক্রমাগত ইতিবাচক ছাত্রকল্যাণমূলক কার্যক্রম ও ক্রমবর্ধমান ভাবমূর্তি তাকে এই পদে বেশ এগিয়ে রেখেছে। তবে শামীমের হঠাৎ এই উত্থানের রহস্য কী? 

শামীমকে নিয়ে বিস্তারিতভাবে লিখেছেন ইলিয়াস হোসেন। তিনি বলেন, শামীম হোসেন ইংরেজি ডিপার্টমেন্টের ২০১৯-২০ সেশনের একজন ছাত্র। মিশুক, সদালাপী এবং ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে সে পূর্ব থেকেই বেশ পরিচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ফিরিয়ে আনাসহ শিক্ষার্থীদের বেশ কিছু দাবির বিষয়ে তার স্পষ্টভাষী বক্তব্যে অল্প দিনেই তিনি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। তাকে ঘিরে আবার বেশ কিছু বিতর্কও উঠেছে। শুরুতে নিজের রাজনৈতিক অতীত অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে বাম রাজনীতির সাথে তার সম্পৃক্ততার নানা তথ্য পাওয়া যায়। আওয়ামী লীগের ১৪ দলীয় মহাজোটের অন্যতম শরিক দল বাম রাজনৈতিক দল জাসদের ছাত্র সংগঠন জাসদ ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় তার। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাসদ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

মানববন্ধনেও শামীমকে দেখা গেছে জানিয়ে ইলিয়াস বলেন, তাদের বেশকিছু মানববন্ধন ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাকে দেখাও গিয়েছে। জাসদ সেই রাজনৈতিক দল যা আওয়ামী লীগের সাথে ১৬ বছরে ৩টি পাতানো নির্বাচন, শাহবাগ, শাপলা গণহত্যাসহ আওয়ামী লীগের প্রতিটি অপকর্মে সহায়তা করেছে, এমনকি সর্বশেষ জুলাই মাসেও আওয়ামী লীগের সাথে যৌথভাবে মাঠে ছিল জাসদ। শামীমের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলেও ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো পোস্ট পাওয়া যায় না যা বেশ সমালোচনার সৃষ্টি করে, যদিও পরবর্তীতে এসব ঘটনার ব্যাখ্যা দেন শামীম। তবে, শামীমের এই ব্যাখ্যার বাইরেও কিছু তথ্য হাতে এসেছে যা নিচের ছবিতে প্রমাণ রয়েছে৷

আওয়ামী লীগের পাচার করা টাকা শামীম নির্বাচন করছেন এমনটা জানিয়ে ইলিয়াস বলেন, সাবেক ছাত্রলীগ এবং স্বৈরাচারের পা চাটা এসপি মাশরুরের, আওয়ামী লীগ কর্তৃক পাচার হওয়া টাকায় নির্বাচন করছে শামীম। একাধারে শামীম আওয়ামী লীগ এবং ভারতীয় এজেন্সি 'র' এরও প্রার্থী। কোনোভাবেই শামীমের হাত ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হতে দেওয়া হবে না। অরাজনৈতিক দাবি করে শামীম মূলত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার খায়েশ পূরণ করতে চায়। মীরজাফর শামীমের আমলনামা তুলে ধরলাম বাকি সিদ্ধান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন-মেধাবী শিক্ষার্থীদের৷ 

ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে কথিত স্বতন্ত্র প্রার্থী শামিম হোসেন নিজেকে অরাজনৈতিক দাবি করলেও ছাত্রলীগের (বিসিএল) কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে তার অংশ নেয়ার প্রমাণ হাতে এসেছে। এই সংগঠন আর আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ আলাদা। ছবিগুলোতে দেখা যায়, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে রাজু ভাস্কর্যে বিসিএল আয়োজিত মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন শামিম। 

আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, কথিত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বয়কটের দাবিতে বিসিএলের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন তিনি। এ ছাড়াও আরো বেশ কিছু আয়োজনে শামিম হোসেনকে বিসিএলের ব্যানারে অংশ নিতে দেখা গেছে। শিক্ষার্থীদের একটি অংশের অভিযোগ, মূলত ডাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করতেই শামিম নিজেকে অরাজনৈতিক পরিচয় দিয়েছেন। আশা করি মীরজাফর হতে সাবধান থাকবে দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠের মেধাবীরা।