
কুমিল্লায় ভাড়া বাসা থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ও তার মায়ের হত্যায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার বিলম্ব হলে কুমিল্লা শহর অচলের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টায় কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়স্থ পূবালী চত্বরে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
পরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কুমিল্লা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। এসময় তারা ‘বিচার, বিচার, বিচার চাই; প্রশাসন বিচার চাই; আমার বোন কবরে; খুনি কেনো বাহিরে; সুমাইয়ার রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’ নানা স্লোগান দেন তারা।
নিহতরা শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং তার মায়ের নাম ফাতেমা আক্তার।
মানববন্ধনে কুবি শিক্ষার্থী হাসান অন্তর বলেন, ‘রবিবার রাতে কুমিল্লায় সুমাইয়া ও তার মাকে ভাড়া বাসায় হত্যা করা হয়েছে। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমরা হুঁশিয়ারি দিচ্ছি, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সঠিক তদন্ত না হলে কুমিল্লা শহর অচল করে দেওয়া হবে।’
ভুক্তভোগীর সহপাঠী ও লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মুনিয়া আফরোজ বলেন, ‘আমাদের সহপাঠী ও তার মায়ের নির্মম হত্যাকাণ্ডে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। এ ধরনের নৃশংস ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং জড়িত সবাইকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক, যেন আর কোনো পরিবার এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।’
জানা যায়, কুমিল্লার উত্তর কালিয়াজুড়ি এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন ও তার মা ফাতেমা আক্তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আজ সকালে কালিয়াজুরি এলাকার নেলী কটেজ নামে একটি ভবনের দ্বিতীয়তলা থেকে মরদেহ দুটি উদ্ধার করা হয়।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম জানান, মরদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাড়ির মালিক আনিসুল ইসলাম রানা বলেন, চার বছর আগে কুমিল্লা আদালতের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম এই বাসাটি ভাড়া নেন। নুরুল ইসলামের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার সন্তানদের নিয়ে এখানে থাকতেন। তারা অন্য কারও সঙ্গে তেমন যোগাযোগ করতেন না।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রবিবার সকালে (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা ৮ মিনিটে এক ব্যক্তি মাথায় টুপি ও সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে ওই বাসায় প্রবেশ করেন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বেলা ১১টা ২২ মিনিটে তিনি বাসা থেকে বের হয়ে যান এবং ১১টা ৩৪ মিনিটে আবারও বাসায় প্রবেশ করেন। এরপর দুপুর ১টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত আর কোনো ফুটেজ পাওয়া যায়নি।
গতকাল রাতে তাহমিনা আক্তারের দুই ছেলে ঢাকা থেকে বাসায় ফিরে ঘরের দরজা খোলা অবস্থায় দেখতে পান। তারা প্রথমে ভেবেছিলেন মা ও বোন ঘুমাচ্ছেন। কিন্তু অনেকক্ষণ কোনো সাড়া না পেয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখেন তারা নড়ছে না। পরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা দ্রুততম সময়ে দোষীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনার চেষ্টা করব। ইতোমধ্যে কিছু আলামত পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে তা বলা যাচ্ছে না। আমরা তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো।’