Image description

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশকে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাদের তোষামোদ বা বিশেষ সুবিধা না দিতে সতর্ক করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘আপনারা কোনো দলের দিকে ঝুঁকবেন না। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করাটাই আপনাদের দায়িত্ব। আইন মেনে, জনগণের স্বার্থে কাজ করতে হবে।’ রাজারবাগ পুলিশ লাইনে গতকাল নির্বাচনী প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ আহ্বান জানান। নির্বাচনকালীন পুলিশ সুপারদের (এসপি) লটারির মাধ্যমে পদায়ন করা হবে বলেও জানান তিনি।

পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা যদি এখন থেকেই তেল দেয়া শুরু করেন, নির্বাচনের পর কিন্তু সেই তেল শেষ হয়ে যাবে। তাই যার কাছে যতটুকু তেল আছে, সেটা রিজার্ভ করে রাখুন। একটা কথা মনে রাখবেন, এখন যারা পরাজিত হয়ে প্রস্থান করেছে ১০ বছর পর তারা আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে ফিরবে। সেজন্য কোনো বিতর্কিত ভূমিকায় পুলিশ বাহিনীকে সম্পৃক্ত করা যাবে না।’

নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আশা করি আসন্ন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। বিগত ১৮ ও ২৪ (২০১৮ ও ২০২৪) সালসহ অতীতের বাজে নির্বাচনগুলোর কথা মাথা থেকে ফেলে দিতে হবে। আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশ পুলিশ এমন নজির স্থাপন করুক, যা শুধু দেশে নয় বিদেশেও প্রশংসিত হয়। বাংলাদেশ পুলিশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যেভাবে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করেছে, তেমনি দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানেও নিজেদের পেশাদারত্বের প্রমাণ দিতে সক্ষম হবে। নির্বাচনী প্রশিক্ষণ পুলিশ সদস্যদের আরো সক্ষম করবে, তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে এবং পেশাদারী মনোভাব গড়ে তুলবে। নির্বাচনের আগে লটারির মাধ্যমে পুলিশের বদলি ও পোস্টিং দেয়া হবে।’

রাজবাড়ীর ঘটনায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘রাজবাড়ীর ঘটনা আমরা তদন্ত করে দেখছি। পাঁচজনকে এরই মধ্যে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তদন্ত শেষ হলে পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হবে। কারা এর সঙ্গে জড়িত ছিল, তখনই তা জানা যাবে। কারো অবহেলা বা গাফিলতি ছিল কিনা, সেটা তদন্তেই বের হবে।’ বর্তমানের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অতীতের তুলনায় কিছুটা খারাপ বলেও স্বীকার করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের পর পুলিশে কতটা পরিবর্তন এসেছে তার প্রমাণ হবে আগামী জাতীয় নির্বাচন। প্রশিক্ষণকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং যথাযথভাবে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচন উৎসবমুখর অবস্থায় নিয়ে যেতে পারব।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. নাসিমুল গণি বলেন, ‘দেশকে একটা উৎসবমুখর নিরাপদ নির্বাচন উপহার দেয়া, জনগণকে নিরাপদ রাখা এবং পুলিশের হারিয়ে যাওয়া সম্মান পুনরুদ্ধার পুলিশেরই দায়িত্ব। আমরা দেশে যেন একটা সুন্দর, সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে পারি এবং জনগণ যেন খুশি হয় সেভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’

পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, ‘পুলিশের প্রায় দেড় লাখ সদস্য নির্বাচনের সময় মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের প্রত্যেকের কর্মকাণ্ড জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নিরীক্ষিত হবে। প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতির মাধ্যমে প্রতিটি পুলিশ সদস্যকে দক্ষ ও সুশৃঙ্খল হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের মূল লক্ষ্য। নির্বাচনের সময় নানা ধরনের চাপ, চ্যালেঞ্জ ও প্রলোভনের মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু আমাদের শপথ হচ্ছে আইনের শাসন নিশ্চিত করা এবং জনগণের আস্থা অটুট রাখা। কোনো পরিস্থিতিতেই পক্ষপাতিত্বের সুযোগ নেই। আমাদের প্রতিটি সিদ্ধান্ত হতে হবে আইনের বিধান ও ন্যায়বিচারের আলোকে।’ সততা, দক্ষতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য নিজ বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান পুলিশপ্রধান।