
গাজীপুরের শ্রীপুরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে অস্ত্রসহ এক ব্যবসায়ীকে আটকের পর র্যাবের দুটি গাড়ি আটকে বিক্ষোভ করেছে গ্রামবাসী। ওই সময় গ্রামবাসী প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী শ্রীপুর-বরমী আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনা সদস্যরা এসে র্যাব সদস্যদের উদ্ধার করে নিয়ে যান। রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলার বরমী ইউনিয়নের বরামা চৌরাস্তা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী আটক ব্যক্তিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে ৭টার দিকে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল পৌঁছার পর সেখান থেকে সরে যায় গ্রামবাসী।
র্যাবের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ব্যবসায়ীর নাম মোশারফ হোসেন (৪০)। তিনি বরমী এলাকার আহমদ আলীর ছেলে।
স্থানীয় বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান জানান, বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে গাজীপুরের পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের র্যাবের সদস্যরা দুটি গাড়িতে বরামা চৌরাস্তা এলাকায় যান। সেখানে তারা মোশারফ হোসেনের দোকানে অভিযান চালিয়ে একটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করেন। পরে তাৎক্ষণিক তারা (র্যাব) মোশারফ হোসেনকে হাতকড়া পরিয়ে তাদের গাড়িতে তোলেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কাসেম জানান, ব্যবসায়ীকে আটকের খবরটি ছড়িয়ে পড়লে ব্যবসায়ীরা র্যাবের দুটি গাড়ির সামনে-পেছনে অবস্থান নেন। পরে তাদের সঙ্গে যুক্ত হন গ্রামবাসীও। একপর্যায়ে তারা র্যাবের গাড়ি দুইটির সামনে-পেছনে কাঠ, বাঁশ ও গাছ ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করেন। এতে শ্রীপুর-বরমী আঞ্চলিক মহাসড়কে সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, খবর পেয়ে থানা পুলিশের দুইটি গাড়িও সেখানে পৌঁছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, আটকে রাখা গাড়িগগুলোর সামনে-পেছনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিলেন গ্রামবাসী। ওই সময় তারা (গ্রামবাসী) বিভিন্ন স্লোগানও দেন। একপর্যায়ে র্যাবের গাড়ি থেকে মোশারফ হোসেনকে ছিনিয়ে নেন তারা।
মোশারফ হোসেনের মামা আফাজ উদ্দিন দাবি করেন, তার ভাগনে নির্দোষ। মোশারফ হোসেনের কাছে কোনো অস্ত্র ছিল না। র্যাব অস্ত্র উদ্ধার অভিযান দেখিয়ে মোশারফ হোসেনকে আটক করেছিলেন। উদ্ধার করা অস্ত্রও মোশারফ হোসেনের নয়।
তবে এ অভিযোগের বিষয়ে র্যাবের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মনোয়ারা বেগম দাবি করেন, গত শুক্রবার রাতে ওই এলাকার মো. জহিরুল ইসলাম লিটন নামে এক কুখ্যাত সন্ত্রাসী কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিলেন। ওই ঘটনার প্রতিবাদে ওইদিন রাতেই তার বাড়ি ঘেরাও করেছিলেন গ্রামবাসী। কিন্তু লিটন পালিয়ে যাওয়ায় তাকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। পরে লিটনের স্ত্রীর করা অভিযোগে র্যাব সদস্যরা মোশারফ হোসেনকে আটক করেছিলেন।
মনোয়ারা বেগম আরো জানান, আটকের পর তারা মোশারফ হোসেনকে ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে র্যাবের গাড়িগুলোর সামনে-পেছনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। শুধু ছেড়ে দেওয়ায় নয়, তার (মোশারফ) বিরুদ্ধে কোনো অস্ত্র মামলা দেওয়া হবে না এমন গ্যারান্টিও চেয়েছিলেন তারা। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল পৌঁছার পর গ্রামবাসী ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) ড. চৌধুরী মো. যাবের সাদেক বলেন, ‘র্যাবের সঙ্গে স্থানীয় লোকজনের সমস্যা হয়েছিল। তাদেরকে আটকে রাখা হয়। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল পৌঁছলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মিলে পরিস্থিতি শান্ত করে।’