
আলোচিত ও সমালোচিত সাবেক জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউর রহমানকে আদালত থেকে কারাগারে ফেরত নেওয়ার সময় অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশের এক এসআই ও ১০ কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বরখাস্তরা হলেন, এসআই আবুল কাশেম, কনস্টেবল মনিরুজ্জামান, মো. কবির হোসেন, ইমরান, নির্জন খান, শামীম আলম, মো. রনি হোসেন, শরীফুল ইসলাম, তানভির রহমান, মো. আবু সাইদ মিয়া ও রবীন্দ্র দাস।
তথ্যটি নিশ্চিত করে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
পুলিশের অফিস আদেশে বলা হয়, অত্র জেলার নিম্নবর্ণিত পুলিশ সদস্যরা পুলিশ লাইন্সে কর্মরত থাকাকালে এএসআই/এমআই (ফোর্স) অফিসের ঘট সিসি নং-২৮৩/২৫, তারিখ-১২/০৮/২০২৫ মূলে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে হাজতি মতিউর রহমানকে বিজ্ঞ মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ, ঢাকায় হাজির করার জন্য রওনা করেন। হাজতি আসামিকে বিজ্ঞ আদালতে হাজিরা প্রদান শেষে ফিরতি পথে নিম্নবর্ণিত পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত স্কট দল কোনো স্থানে দুপুরে খাবার খাওয়ার যাত্রাবিরতি করেন।
এতে বলা হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানায়, দলের সদস্যরা হাজতিকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানের শর্তে উৎকোচ গ্রহণ করেন। এ সংক্রান্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠনপূর্বক বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসন্ধানের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। ৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করে। দাখিলকৃত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, বর্ণিত হাজতি মতিউর রহমানকে আদালতে হাজিরা প্রদানের পর ফেরত আনার সময় স্কর্ট ডিউটি অফিসার ও ফোর্স কর্তৃক অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়।
আদেশে আরও বলা হয়, হাজতি মতিউর রহমানকে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগার হতে ঢাকায় আদালতে হাজির করা হয় এবং হাজিরা শেষে তাকে ফেরত আনার পথে যাত্রাবিরতির ব্যবস্থা করা হয়। যাত্রাবিরতির সময় খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। স্কর্ট ইনচার্জের ব্যবস্থাপনায় হাজতিকে আলাদা কক্ষে বসিয়ে খাবার খাওয়ানো হয় এবং অন্য পুলিশ সদস্যরা বাইরে সাধারণ স্থানে খাবার গ্রহণ করেন। হাজতিকে আলাদা কক্ষে খাওয়ানো প্রচলিত স্কর্ট ডিউটির শৃঙ্খলার পরিপন্থি এবং ইনচার্জের দায়িত্ব পালনে শৈথিল্যের প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে তারা উপস্থিত থেকেও হাজতিকে আলাদা কক্ষে খাওয়ানোর অনিয়ম প্রতিরোধে উদ্যোগ নেননি, যা তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলার ইঙ্গিত বহন করে।
সার্বিকভাবে পর্যলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, হাজতিকে আলাদা কক্ষে খাওয়ানোর ঘটনা সত্য এবং এটি স্কর্ট ডিউটির শৃঙ্খলার পরিপন্থি।
অফিস আদেশে বলা হয়, নিম্নবর্ণিত অফিসার ও ফোর্সগণের উপরোক্ত কার্যকলাপ বিভাগীয় নিয়মশৃঙ্খলার পরিপন্থি, অসৎ উদ্দেশ্য, অসদাচরণ ও জনসম্মুখে পুলিশের ভাবমূর্তিকে চরমভাবে ক্ষুণ্ণ করায় নিম্নবর্ণিত অফিসার ও ফোর্সদের পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল ১৯৪৩-এর প্রবিধান ৮৮০ মোতাবেক অদ্য ০৬/০৯/২০২৫ পূর্বাহ্নে ‘চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত’ করা হলো। সাময়িক বরখাস্ত থাকাকালীন তারা বিধি মোতাবেক বেতন ও ভাতাদি আহরণ করবে। তাছাড়া সাময়িক বরখাস্তকালীন পুলিশ লাইন্সে সার্বক্ষণিক হাজির থেকে সাদা পোশাকে নিয়মিত রোলকল দিবেন এবং পিটি, প্যারেডে হাজির থাকবেন।