Image description
যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসন » আজ রাতে চার্টার্ড ফ্লাইটে করে ফেরত আসবে একদল বাংলাদেশি । » গত ২ আগস্ট ফেরত পাঠানো ৩৯ বাংলাদেশিকে হাতকড়া ও শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছিল । » অসহিংস অভিবাসীদের শিকল পরিয়ে ফেরত পাঠানোটা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের পরিপন্থী ।

উন্নত জীবনের স্বপ্ন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে অপমানজনকভাবে ফেরত আসতে হচ্ছে বাংলাদেশিদের । প্রত্যাবাসনকালে হাতে পরানো হচ্ছে হাতকড়া , শিকলে বেঁধে রাখা হচ্ছে শরীর । অবৈধভাবে অবস্থানের অভিযোগে দেশটি থেকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছেন আরও একদল বাংলাদেশি । আজ রাত ৯ টার দিকে একটি চার্টার্ড বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজে করে তাঁদের ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে । উড়োজাহাজটিকে ৭২ ঘণ্টা ঢাকায় অবস্থানের অনুমতি দেওয়া হলেও কতজন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে , তা এখনো নিশ্চিত নয় । যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো নতুন কিছু নয় ।

এর আগে গত ২ আগস্ট ভোরে একটি সামরিক পরিবহন উড়োজাহাজ সি- ১৭ ঢাকায় অবতরণ করে । সেই ফ্লাইটে এক নারীসহ ৩৯ বাংলাদেশিকে দেশে পাঠানো হয় । ফেরত আসা ব্যক্তিদের অভিযোগ , প্রায় ৬০ ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রায় তাঁদের হাতকড়া ও শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছিল । ঢাকায় পৌঁছে ওই ফ্লাইটে ফেরত আসা ফাহিম নামের এক যাত্রী বলেন , ‘ আমাদের হাতকড়া ও শিকলে বাঁধা অবস্থায় উড়োজাহাজে করে ফিরিয়ে আনা হয়েছে । ঘণ্টার পর ঘণ্টা যন্ত্রণা নিয়ে বসে থাকতে হয়েছে , খেতে দেওয়া হয়েছে শুধু রুটি আর পানি । এমনকি টয়লেটে যাওয়ার সময়ও একজন অফিসার আমাদের নিয়ে যেতেন , আবার শিকলে বেঁধে দিতেন । অবশেষে ঢাকায় অবতরণের সময় শিকল খোলা হয় । ”

পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ এইচএসআইএর ইমিগ্রেশন বিভাগের সূত্র বলছে , এর আগে চলতি বছরের ৮ জুন একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে ৪২ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনা হয় । ফিরিয়ে আনা ৪২ বাংলাদেশির মধ্যে ১৬ জনের ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ পরিচয়পত্র যাচাই নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল । তাঁদের মধ্যে একজন যুক্তরাষ্ট্রে মামলায় হেরেও সেখানে অবস্থান করছিলেন , আরেকজন আলাদা মামলায় সাজা ভোগ করেছিলেন । সবাইকে অনিয়মিত অভিবাসী হিসেবে শনাক্ত করা হয় । একাধিক সূত্র জানিয়েছে , চলতি বছরের ৬ মার্চ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ৪৬ দিনে একাধিক চার্টার্ড ফ্লাইটে অন্তত আরও ৩৪ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল । ২০২৪ সালের শুরু থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশির সংখ্যা ১৫০ ছাড়িয়েছে ।

এর আগে ২০১৬ সালে বাংলাদেশিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে । তাঁরা বিশেষ ফ্লাইটে এসেছিলেন , আর যাত্রাপথে হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়েছিল । এই দৃশ্য তখন দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করে । এভাবে শিকল পরানোয় মানবাধিকার ও মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে তখন , যা নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ও মার্কিন প্রশাসনের মধ্যে আলোচনাও হয়েছিল । অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন , প্রত্যাবাসনের সময় হাতকড়া ও শিকল ব্যবহার সীমিত করা উচিত । শুধু বিশেষ নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি থাকলেই শুধু হাতকড়া পরানো যেতে পারে । অপরাধমুক্ত ও অসহিংস অভিবাসীদের হাতকড়া বা শিকল পরিয়ে ফেরত পাঠানোটা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের পরিপন্থী ।

ফেরত আসা ব্যক্তিদের পুনর্বাসন সহায়তা নিশ্চিত করা , সচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করা এবং পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখা জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা । অভিবাসীদের এভাবে হাতকড়া বা শিকল পরিয়ে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক ( মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম ) শরিফুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন , উন্নত জীবনের স্বপ্ন নিয়ে মানুষ অভিবাসী হতে চাইবেন , এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া । একই সঙ্গে গন্তব্য দেশ চাইলে তাঁদের ফিরিয়েও দিতে পারে । তবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাতকড়া পরিয়ে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত দুঃখজনক । এটি অভিবাসনপ্রত্যাশী মানুষের জন্য সারা জীবনের ট্রমা হয়ে থাকে । আমরা আশা করি , আগামীতে প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়া আরও মানবিক হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র

কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে গুরুত্ব দেবে । প্রসঙ্গত , মার্কিন আইন অনুযায়ী বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অবস্থানকারী অভিবাসীদের আদালতের রায় বা প্রশাসনিক আদেশে দেশে ফেরত পাঠানো যায় । আশ্রয়ের আবেদন ব্যর্থ হলে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ ( আইসিই ) তাঁদের প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করে । সাম্প্রতিক সময়ে এ প্রক্রিয়া দ্রুততর করার কারণে চার্টার্ড ও সামরিক ফ্লাইটের ব্যবহার বেড়েছে । বেশির ভাগ অভিবাসী মেক্সিকো বা লাতিন আমেরিকার দেশ হয়ে বিপুল অর্থ ব্যয় করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন । প্রসঙ্গত , ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে । এর ধারাবাহিকতায় একাধিক দফায় বাংলাদেশিসহ দক্ষিণ এশিয়ার বহু নাগরিককে ফেরত পাঠানো হচ্ছে ।