Image description

শেখ হাসিনাসহ এবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান, শেখ হাসিনার অনুগত বিচারপতি নিজামুল হক নিজাম এবং ২০০৯ সালে হাসিনা সরকারের আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। তারা জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বাদী এবং সাক্ষীদের বাধ্য করেছিলেন।

স্কাইপি কেলেঙ্কারিখ্যাত এ আওয়ামী বিচারপতিকে জামায়াত নেতাদের মৃত্যুদ- দেয়ার পুরস্কারস্বরূপ পরবর্তীতে আপিল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগ করেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী সরকারের অন্যতম উচ্ছিষ্টভোগী বিচারপতি নাসিম ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ২০১২ সালের ১১ ডিসেম্বর জনৈক প্রবাসী আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে স্কাইপি অডিও কল প্রকাশিত হলে তিনি পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে তাকে তথ্য কমিশনের চেয়ারম্যান করা হয়। ২০২১ সালের ১২ নভেম্বর তাকে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলেরও চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়া পর্যন্ত তিনি এ পদ আঁকড়ে ছিলেন। আওয়ামীলীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম আত্মগোপনে চলে যান। তিনি দেশেই রয়েছেন নাকি পালিয়েছেন- এ নিয়ে রয়েছে ধূম্রজাল।

জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানে বাধ্য করার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার সঙ্গে ভারত পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাসহ ৪০ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগও দাখিল করেন তিন সাক্ষী। 
গতকাল বুধবার চীফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এ অভিযোগ করেন তারা। ওই তিন সাক্ষী হলেন- মাহবুবুল আলম হাওলাদার, মাহতাব উদ্দিন ও আলতাফ হাওলাদার। তাদের পক্ষে অভিযোগটি দায়ের করেন অ্যাডভোকেট পারভেজ হোসেন।

শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য আসামিদের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম, সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, পিরোজপুর-১ আসনের এমপি একেএম আউয়াল ওরফে সাইদুর রহমানও রয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে অ্যাডভোকেট পারভেজ হোসেন বলেন, ২০০৯ সালে মাহবুবুলকে ডেকে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলা করতে বলেন এমপি আউয়াল। তবে রাজি না হওয়ায় তাকে তৎকালীন পিপি কার্যালয়ে তুলে নেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এরপর দীর্ঘ নির্যাতনের একপর্যায়ে তার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে সাঈদীর নামে মিথ্যা মামলা দিতে বাধ্য করেন। পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও এ মামলার প্রথম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করেন। তখনও তাকে যাত্রাবাড়ী থানার অধীনে কথিত সেইফ হোমে এনে ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয়। অভিযোগকারী বাকি দুই সাক্ষীরও একইভাবে জবানবন্দি নেন তৎকালীন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম।

এর আগে, ২১ আগস্ট সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে গুমসহ নির্যাতনের দায়ে শেখ হাসিনাসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন সাক্ষী সুখরঞ্জন বালি। অভিযোগের পাশাপাশি তিনি শেখ হাসিনাসহ জড়িতদের বিচার দাবি করেন।
উল্লেখ্য, এই প্রথম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কোনো চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল হলো অভিন্ন ট্রাইব্যুনালে।