
যশোরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে অপরাধ। নির্বিঘ্নে ঘটছে চুরি-ছিনতাইসহ হত্যাকাণ্ড। গত ৫ মাসে জেলায় অন্তত ৩৫ জন খুন ও ২২ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। একই সাথে বেড়েছে চাঁদাবাজি, অপহরণ, ছিনতাই, চুরির মত অপরাধ। আইনশৃংখলা বাহিনীর নিরবতায় সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা। এতে করে বেড়েছে অপরাধ প্রবণতা। ব্যবসায়ীরা উৎকন্ঠার মধ্যে দিন পার করছে। তবে জেলা পুলিশের দাবি, যেকারণেই অপরাধ হোক, আমরা আইনী পদক্ষেপ নিচ্ছি।
জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভার তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় পাঁচ মাসে (এপ্রিল-আগস্ট) ৩৫টি হত্যা মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এরমধ্যে জুলাই মাসে ৬টি খুন, ধর্ষণ ৭টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ২৩টি, অপহরণ ৯টি, চুরি ১২টি, সড়ক দুর্ঘটনা ৪টি, মাদকদ্রব্য ও চোরাচালানের মামলা ৭০ টি মামলা হয়েছে। জুন মাসে ৮টি খুন, ১০টি ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন ১৮টি, অপহরণ ৯টি, চুরি ২২টি, সড়ক দুর্ঘটনা ১০টি, মাদকদ্রব্য ও চোরাচালানের ৭৯টি মামলা হয়েছে। মে মাসে খুন ৭টি, মানবপাচার ৫টি, অপহরণ ১৭টি, চুরি ২০টি, সড়ক দুর্ঘটনা ১০টি, অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে ৪টি ও চোরাচালনের একটি মামলা হয়েছে। এপ্রিল মাসে ৬টি খুনের মামলা হয়েছে। গত আগস্ট মাসের জেলায় অন্তত ৭টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সর্বশেষ জেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায় মাদক, নিরব চাঁদাবাজিসহ অপরাধ দমনে পুলিশ প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
১২ আগস্ট দিবাগত মধ্যরাতে যশোর সদরের দৌলতদিহি গ্রামের আওয়ামী লীগের কর্মী রেজাউল ইসলামকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে বাড়ির পাশেই কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন হয়নি। একইদিনে অভয়নগর উপজেলার শ্রীধরপুর ইউনিয়নের শংকরপাশা গ্রামের বিলপাড়া এলাকা লিমন শেখ নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার হয়। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার কেশবপুরে গৌরোঘোনা এলাকায় একটি ক্ষেতে তারেক সরদার নামে এক ভ্যানচালকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। দুইদিনে তিনজন খুন হয়েছেন।
এদিকে, চৌগাছা উপজেলার সুখপুকুরিয়া গ্রামের সংখ্যালঘু পরিবারের এক বাকপ্রতিবন্ধী নারীকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে বুধবার (১৩ আগস্ট) দুইজনের নামে মামলা হয়েছে। ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে ভুক্তভোগীরা। এক পর্যায়ে ঘটনার ১২ দিন পর মামলা করেছেন ভিকটিম ওই নারী।
এ বিষয়ে চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, অভিযোগ পাওয়ার তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছি। ভিকটিম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। দুই আসামি গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ভিকটিম খুবই দরিদ্র পরিবারের। ঘটনার পর ভিকটিম ও তার পরিবার চাচ্ছিলেন স্থানীয়ভাবে মীমাংসার। এজন্য পুলিশের কাছে আসতে দেরি করেছেন। আমাদের কাছে অভিযোগ আসার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি।’
মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক পরিচালক বিনয়কৃষ্ণ মল্লিক বলেন, সার্বিক বিবেচনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল না। খুন, ধর্ষণের ঘটনা উদ্বেগের। অপরাধ দমনে আইনশঙ্খলা বাহিনীকে আরও কঠোর হওয়া উচিত।’
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক তানভিরুল ইসলাম সোহান জানান, যশোরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল না। প্রতিনিয়ত অপরাধ ঘটছে। শহরের যশোর-খুলনা সড়কের আইটি পার্কের বিপরীতে মটরপার্টসের দোকানের গোডাউনে চুরির ঘটনা ঘটছে। সব মিলিয়ে এক ধরণের আতঙ্কের মধ্যে পার করছেন ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে যশোর জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাসার বলেন, প্রত্যেকটি অপরাধের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে। সবকটি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করে আসামি গ্রেফতার করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কারণে সব ঘটনা ঘটছে, বিষয়টি এমন নয়। অপরাধের ধরণের ভিন্নতা রয়েছে। কিছু খুনের ঘটনা আছে ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে। আর কিছু আছে প্রকৃত আইনশৃঙ্খলা অবনতিজনিত কারণে। যেকারণেই অপরাধ হোক, আমরা আইনী পদক্ষেপ নিচ্ছি। পুলিশ তৎপর রয়েছে, জনগণকে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’