
কালুরঘাটের পশ্চিম তীরের বালু উত্তোলনকারী শ্রমজীবী মানুষ জীবিকা হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন। ডুব দিয়ে ও দেশীয় যন্ত্রে বালু তুলে তারা জীবিকানির্বাহ করে আসছিলেন। কিন্তু পুলিশের বাধায় বালু তোলা ও বিক্রি বন্ধ হওয়ায় আয়হীন মানুষগুলো পরিবার-পরিজন নিয়ে মহাবিপদে পড়েছেন। অথচ ড্রেজার দিয়ে রাঘববোয়ালদের বালু উত্তোলন থেমে নেই। চান্দগাঁও থানা পুলিশ বলছে, বালু উত্তোলন ও মাটি কাটা অবৈধ। তাই কালুরঘাটে বালু উত্তোলন বন্ধ করা হয়েছে।
জানা যায়, পশ্চিম তীরে ব্যবসা বন্ধ হলেও কর্ণফুলীর পূর্ব তীর, নতুন ব্রিজ, ভেল্লাপাড়া ব্রিজে বালু ব্যবসা চলছে। চরে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে রাঘববোয়ালরা। ব্যবসা এখন আওয়ামী লীগ নেতাদের হাত থেকে বিএনপি-জামায়াত নেতা-সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও নৌকা মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে। কালুরঘাটের খেজুরতলা থেকে ছোটপুল পর্যন্ত ছোট ছোট ২০-২৫টি বালুর সাইট রয়েছে। কর্ণফুলী নদীর বাইরের চর ও বেতাগীসহ বিভিন্ন চর থেকে বালু এনে এসব স্থানে বিক্রি করা হয়। নদীতে ডুব দিয়ে তাবা (বালু তোলার দেশীয় যন্ত্র) দিয়ে শ্রমিকরা বালু তুলে প্রথমে নৌকায় রাখেন। নৌকাভর্তি হলে নদীতীরের নির্দিষ্ট সাইটগুলোয় মজুত করেন। সেখান থেকে দিনমজুররা বালু ট্রাকে লোড করে। এভাবে ২০-২৫টি সাইটে কয়েকশ শ্রমিক কাজ করেন। ভোলা, বরিশাল, কুমিল্লা, চকরিয়া, স্থানীয় বাসিন্দাসহ শ্রমিজীবীরা এ কাজ করে জীবিকানির্বাহ করেন। একটি নৌকা বালুভর্তি করতে একেকজন শ্রমিককে কয়েকশবার ডুব দিতে হয়। সারা দিন কাজ করে তারা ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার করেন। ডুব দিয়ে বালু তোলার পাশাপাশি কেউ কেউ ছোট ছোট মেশিনেও বালু তোলেন। এ পেশায় একসময় কয়েক হাজার মানুষ জড়িত থাকলেও ড্রেজার ও বালু তোলার অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি চলে আসায় মাফিয়াদের হাতে বালুর ব্যবসা চলে গেছে। পুলিশ প্রশাসন, জেলা প্রশাসনসহ সবকিছু ‘ম্যানেজ’ করে তারা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তাদের হাতে সাধারণ ব্যবসায়ী ও শ্রমজীবী মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছেন।
মাসখানেক আগে নৌকা দিয়ে বালু তোলা ও বালু বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দেন চান্দগাঁও থানার কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হারিছ। ১৫ দিন আগে অভিযান চালিয়ে আলমগীর কোম্পানি নামে এক বালু ব্যবসায়ীর নৌকা জব্দ করা হয়। আলমগীর ও শ্রমিক শুক্কুরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এদিকে পুলিশের ভয়ে বালুর সব সাইট বন্ধ রয়েছে। বালু উত্তোলনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহকারী কয়েকশ শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ জীবিকাহীন হয়ে পড়েছে। জীবিকা হারিয়ে তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন। দিনে এনে দিনে খাওয়া মানুষগুলো আয়হীন হয়ে পড়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মহাবিপদে পড়েছেন। কালুরঘাটের বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়ার নেপথ্যে দুটি কারণ থাকতে পারে। একটি হলো-তাদের ওপর পুলিশের চাঁদা। অন্যটি হলো-রাঘববোয়ালদের সুবিধা করে দেওয়া। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী একাধিক ব্যবসায়ী ও শ্রমজীবীর অভিযোগ-যে চর থেকে শ্রমজীবীরা বালু আনতে পারছেন না, সে চর থেকে ড্রেজার দিয়ে দেদার বালু তোলা হচ্ছে। বড় বড় নৌকা ভরে বালু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কর্ণফুলীর পূর্ব তীর, নতুন ব্রিজ, ভেল্লাপাড়া ব্রিজসহ বিভিন্ন সাইটে। জানা যায়, এসব বালুর ব্যবসা গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের নেতারা নিয়ন্ত্রণ করলেও বর্তমানে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। কালুরঘাটের সাধারণ শ্রমজীবীদের বালুর ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে চান্দগাঁও থানার ওসি জাহেদুল কবির যুগান্তরকে জানান, বালু ও মাটি উত্তোলন অবৈধ। এ অবৈধ ব্যবসা তিনি বন্ধ করেছেন। একটি মামলাও হয়েছে। তবে অন্য কোথায় কেউ ব্যবসা করছেন কি না, তিনি জানেন না।