Image description

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কুষ্টিয়ার চারটি আসনে নির্বাচনী উত্তাপ স্পষ্ট। বিএনপি, জামায়াতসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এরই মধ্যে প্রচারে নেমে পড়েছে। প্রতিদিনই এলাকায় সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করছেন দলগুলোর নেতারা।

স্বাধীনতার পর কুষ্টিয়াকে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবেই বিবেচনা করা হতো।

তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাসদ চারটি আসনই দখলে নেয়। এরপর টানা ১৬ বছর ওই অবস্থান ধরে রেখেছিল ক্ষমতাসীন জোট। কিন্তু সরকার পতনের পর বদলে গেছে দৃশ্যপট। বিএনপি এবার ফেরার লড়াইয়ে নামছে সর্বশক্তি নিয়ে।
 
অন্যদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও সব আসনে প্রার্থী দিয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে চাইছে।

১৯৭৩ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত কুষ্টিয়ার এই আসনগুলো আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাসদের মধ্যে পালাক্রমে ভাগ হয়েছে। তবে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বেশির ভাগ আসনই ছিল বিএনপির দখলে। সেই সময়কার উন্নয়ন সামনে রেখে এবারও ধানের শীষের পক্ষে ভোট চাইছেন বিএনপি নেতারা।

আর জামায়াত নেতারা তুলে ধরছেন বিগত সরকারগুলোর ব্যর্থতা; দিচ্ছেন নতুন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি।

জেলার চারটি আসনের সব কটিতেই বিএনপিতে এখন অভ্যন্তরীণ বিভেদ লক্ষ করা যাচ্ছে। একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকায় স্থানীয় নেতারা মনে করছেন, নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসবে, কোন্দলও তত বাড়বে। তবে দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, মনোনয়ন চূড়ান্ত হলে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন।

কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) : ১৯৭৩ ও ১৯৭৯ সালে এই আসনে জয়ী হয় বিএনপি।

এরপর ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে যায় জাতীয় পার্টির দখলে। পরে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে আবার বিএনপি জয়ী হলেও ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত একটানা আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এখন বিএনপি একাধিক ভাগে বিভক্ত হয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক এমপি ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি রেজা আহম্মেদ বাচ্চু মোল্লা, উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলতাফ হোসেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শহীদ সরকার মঙ্গল, নুরুজ্জামান হাবলু মোল্লা ও যুবদল নেতা শরিফ উদ্দিন জুয়েল। এখানে জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন মাওলানা বেলাল উদ্দিন। মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই তিনি মাঠে তৎপরতা চালাচ্ছেন। এনসিপির নেত্রী নুসরাত তাবাচ্ছুমও নির্বাচন করতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।

বিএনপির দুর্গে ভাগ চায় জামায়াত

কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা-মিরপুর) : এই আসনে গত ১১টি নির্বাচনের মধ্যে চারবার জয় পেয়েছে বিএনপি, একবার জামায়াত ও একবার জাতীয় পার্টি। বাকি পাঁচবার জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। শেষ তিন নির্বাচনে এই আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাসদের হাসানুল হক ইনু জয়ী হন। গত নির্বাচনে তরুণ নেতা কামারুল আরেফিন জয়ী হলেও সরকার পতনের পর তিনি দেশ ছেড়ে চলে যান, ইনু গ্রেপ্তার হন। বর্তমানে এলাকা জামায়াত-বিএনপির নিয়ন্ত্রণে।

এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরিদা মনি এবং জাতীয় পার্টির নেতা আহসান হাবীব লিংকন (ধানের শীষ প্রতীক পেতে চান)। তাঁরা সক্রিয় আছেন। জামায়াত থেকে প্রার্থী হয়েছেন আব্দুল গফুর, যিনি ২০০৯ সালে মিরপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।

কুষ্টিয়া-৩ (সদর) : ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে এই আসনটি ছিল বিএনপির হাতে। এরপর ২০০৮ থেকে টানা ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সর্বশেষ সংসদ সদস্য ছিলেন মাহবুবউল আলম হানিফ। বর্তমানে এই আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। তাঁরা হলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন আহম্মেদ, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক কাজল মাজমাদার, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামীম উল হাসান অপু, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ সোহবার উদ্দিন এবং লন্ডনপ্রবাসী ব্যারিস্টার তারেক বিন আজিজ।

জামায়াত থেকে প্রার্থী হয়েছেন জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা মুফতি আমীর হামজা। এর বাইরে ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দলও নির্বাচনে প্রার্থী দিতে পারে।

কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) : ২০০৮ সাল থেকে এই আসনটিও আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। তবে এর আগ পর্যন্ত এটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। এখন দলের একাধিক শীর্ষ নেতা নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি সৈয়দ মেহেদী আহম্মেদ রুমী, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ সাদী, প্রবীণ নেতা নুরুল ইসলাম আনসার ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সদস্য হাফেজ মো. মইনুদ্দিন।

জামায়াত থেকে প্রার্থী হয়েছেন কুমারখালী উপজেলা নায়েবে আমির মো. আবজাল হোসেন। দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ চালাচ্ছেন।

কুষ্টিয়ার রাজনীতিতে এখন ফের সরগরম অবস্থা। বিএনপি ও জামায়াত জোটের নেতারা হারানো অবস্থান ফিরে পেতে মরিয়া। অন্যদিকে দলীয় কোন্দল ও বহু প্রার্থীর প্রতিযোগিতা তাদের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিচ্ছে। আসনভিত্তিক লড়াই যেমন জোরালো হচ্ছে, তেমনি মাঠের রাজনীতি আবার সক্রিয় হচ্ছে।