
জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। এর আগেই পুলিশ আনসারের বদলি পোস্টিং, মামলা-সংক্রান্ত বিষয়সহ নানা তদবির নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিদিনই হাজির হন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সচিবালয়ে প্রবেশ করার পাস নিয়ে ঢুকে যাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রের বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে। বিভিন্ন্ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের পাশাপাশি খোদ কর্মকর্তারাও নিজেদের বা অন্যের তদবির করছেন। সাবেকদের অনেকে প্রতিদিন আসছেন তদবির নিয়ে। এসব তদবিরকারী ঠেকাতে কঠোর হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যেই সে ধরনের উদ্যোগও নিয়েছে মন্ত্রণালয়টি। মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা এসব তথ্য জানিয়েছেন। নিরাপত্তার স্বার্থে তদবিরকারীদের ঠেকাতে ইতোমধ্যেই সচিবালয়ের ভিতরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করার জন্য মন্ত্রণালয়ের প্রবেশ পথে বিশেষ গেট চালু করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইস্যুকৃত বিশেষ পাস ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রবেশের সুযোগ আর মিলবে না। কয়েকদিন ধরেই গেটটি থাকলেও গতকাল সকাল থেকে বিশেষ পাস দেখিয়ে প্রবেশ কার্যক্রম চালু হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, স্টিকারবিহীন কোনো গাড়ি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢুকতে পারছে না। আর বিশেষ পাস ছাড়া সকাল থেকে কোনো ব্যক্তিকেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে সাংবাদিকদের জন্য এ ব্যবস্থা শিথিল রয়েছে। চালু হওয়া এ গেটের দুই পাশে দুজন পুলিশ সদস্যকে অবস্থান করতে দেখা গেছে। যাদের ভিতরে ঢোকার অনুমোদন আছে, তাদের কার্ড পাঞ্চ করে করে ভিতরে ঢোকানো হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রের একাধিক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য তদবিরকারী হাজির হচ্ছেন নানা আবদার নিয়ে। মামলা থেকে মুক্তি, রদবদল, লাইসেন্স নেব বলে ঢুকে যান তদবিরকারীরা। এতে কর্মকর্তাদের স্বাভাবিক কাজে গতি কমছে। কেউ সচিবালয়ে প্রবেশ করলেই যেন সব জায়গায় যেতে না পারে, সেজন্য এ ব্যবস্থা। যার যে মন্ত্রণালয়ে কাজ সেখানে সে যাবে। ভবিষ্যতে সচিবালয়ের সব ভবনে এমন পদ্ধতি চালু হবে বলেও জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সচিবালয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে শুধু গেটে নিরাপত্তাব্যবস্থা আছে। পাস দিয়ে ভিতরে ঢোকার পর যে যার ইচ্ছেমতো বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে অনায়াসে যাতায়াত করতে পারেন। তবে বিশেষ করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দর্শনার্থীদের আনাগোনা বেশি। অনেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাস নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তদবির করতে আসেন। এসব তদবির বাণিজ্য বন্ধ করতেই মূলত এ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (সচিবালয় নিরাপত্তা শাখা) যুগ্ম সচিব মো. জসিম উদ্দীনের কাছে সচিবালয়ের ভিতরে আবার বিশেষ গেট কেন জানতে চাইলে বলেন, অনেক ভিজিটর আছে যারা এক জায়গা যাবে কিন্তু সচিবালয়ে পাস পেয়ে সব মন্ত্রণালয়ে ঘুরে বেড়ান। নিরাপত্তার পাশাপাশি এ তদবির ঠেকাতে এটি করা হয়েছে। তবে যারা কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সাংবাদিক তাদের সমস্যা নেই। তাদের জন্য মাস্টার কার্ড থাকবে সেটি দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। ভবিষ্যতে অন্য মন্ত্রণালয়গুলোতে মানে ভবনে এটি করা হবে। যাতে করে যে ব্যক্তি যে মন্ত্রণালয়ের কাজে আসবেন এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
এদিকে, পুলিশের তদবির ঠেকাতে গত জুলাই মাসে সাত দফা জরুরি নির্দেশনা জারি করে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) চিঠি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই কর্মস্থল ছেড়ে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে প্রবেশ করেন পুলিশের কিছু সদস্য। নিজেদের পদোন্নতি-পদায়নসহ বিভিন্ন ইস্যুতে এই পুলিশ সদস্যরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নানাভাবে তদবির করার পরিপ্রেক্ষিতে এ চিঠি দেওয়া হয়। জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে অসছে সুবিধাজনক স্থানে বদলি হতে তদবিরকারীর সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও নিজেদের এলাকায় পছন্দের কর্মকর্তা নিতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। এর মধ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ গেটের ব্যারিকেড বসিয়ে দিল।