
আগামী অক্টোবর মাস থেকে কক্সবাজার-কলকাতা রুটে বিমান চলাচলের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে এই বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক হওয়ার কার্যক্রম। কক্সবাজার শুধু অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর আর নয়, এটি এখন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরের উদ্যোগ বাস্তবায়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কক্সবাজার বিমানবন্দর দিয়ে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা দেশের বিমান খাত ও পর্যটন শিল্পের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজারে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি কক্সবাজার ও পার্শ্ববর্তী এলাকার অর্থনীতি, হোটেল- মোটেল ব্যবসা, রিসোর্ট ও পরিবহন খাতেও নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলবে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজার বিমানবন্দরের নির্মাণাধীন আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ভবন ও রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনকালে বলেছেন, অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করা সম্ভব হবে। প্রথম পর্যায়ে একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু করা হবে। পরবর্তীতে আরও ফ্লাইট যুক্ত করা হবে।
ইতোমধ্যে আগামী ২ অক্টোবর থেকে কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘোষণা দিয়ে আন্তর্জাতিক মর্যাদা দেওয়ার জন্য আইকাওকে গত ৭ আগস্ট চিঠি দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। কক্সবাজার থেকে শুরুতে প্রতি সপ্তাতে ১টি ফ্লাইট পরিচালনা করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। তবে তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। অপর এয়ারলাইন্স ইউএস বাংলা এবং বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোও এই বিমানবন্দর দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
কক্সবাজার বিমানবন্দর দিয়ে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করার জন্য স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে সোমবার বৈঠক করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। বৈঠকে পুলিশ, কাস্টমস, ব্যাংক-বিমা, ইমিগ্রেশন ও বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বেবিচকের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বেবিচক চেয়ারম্যান।
সূত্র জানায়, বৈঠকে স্টেক হোল্ডাররা তাদের নানা প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে দ্রুত সমাধানের কথা বলেন। বৈঠকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কক্সবাজার টু কলকাতা এবং কলকাতা টু কক্সবাজার রুটে সপ্তাহে ১টি করে ফ্লাইট চালানোর প্রস্তাব দেয়। ইউএস বাংলাসহ বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো এই বিমানবন্দর দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহ প্রকাশ করে। তারা জানায়, ফ্লাইট পরিচালানার জন্য তারা কর্মপদ্ধতি নিয়ে কাজ করছে। শীঘ্রই এ বিষয়ে বেবিচককে অবহিত করা হবে।
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চালু হলে কক্সবাজারে শুধু অবকাশ যাপন নয়, আন্তর্জাতিক সম্মেলন, করপোরেট ইভেন্ট ও বৃহৎ পরিসরের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম আয়োজনও সহজ হবে। এতে স্থানীয় কর্মসংস্থানের সুযোগও ব্যাপকহারে বাড়বে। তবে এখনো অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে। সেদিকে জোর দিতে হবে। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাজ দীর্ঘদিন ধরে চলমান ছিল এবং রানওয়ে সম্প্রসারণসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর উন্নয়ন ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। নতুন আন্তর্জাতিক মর্যাদার ফলে কক্সবাজার থেকে মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, এমনকি ইউরোপের নির্দিষ্ট গন্তব্যে সরাসরি যাত্রী পরিবহন সম্ভব হবে।
বিমানবন্দরের নতুন মর্যাদার বিষয়ে সব এয়ারলাইন্স, ফ্লাইট অপারেটর এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে অবহিত করা হয়েছে। বেবিচক আশা করছে, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা বাংলাদেশের আকাশপথে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং দেশের পর্যটন শিল্পকে বৈশ্বিক পর্যায়ে আরও দৃঢ় অবস্থানে নিয়ে যাবে।
বেবিচক সদস্য (পরিচালনা ও পরিকল্পনা) এয়ার কমোডর আবু সাঈদ মেহবুব খান বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার সর্বশেষ প্রস্তুতি নিয়ে সভা হয়েছে। যেসব কাজ বাকি আছে তা ২ অক্টোবরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। সভায় বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের প্রতিনিধি, কাস্টম, পুলিশ, ইমিগ্রেশন, ব্যাংক, গোয়েন্দা সংস্থাসহ যেসব সংস্থাকে বিমানবন্দরে প্রয়োজন তারা উপস্থিত ছিল। ২ অক্টোবর থেকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে। এটা চালু হবার পর ধীরে ধীরে দেশি-বিদেশি ফ্লাইট বাড়বে।