
সিলেটের আলোচিত রায়হান হত্যা মামলার প্রধান আসামি পুলিশের সাবেক এসআই আকবর হোসেন এখন কোথায়? উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পরদিনই ১১ই আগস্ট সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি বেরিয়ে যান। এরপর ১৪ই আগস্ট হাইকোর্টের চেম্বার জজ আদালতে তার জামিন স্থগিত করে ১০ দিনের মধ্যে নিম্ন আদালতে এসে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হলেও তিনি এসে হাজির হননি। ফলে সিলেটে প্রশাসনের কাছে এখন বড় প্রশ্ন- সাবেক এসআই আকবর এখন কোথায়? কারণ, এসআই আকবরের জামিন লাভের খবরটি সবার অজানা ছিল। কারাগার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর বিষয়টি জানাজানি হয়। গত দু’দিন আগে সিলেটে ম্যাজিস্ট্রেট-পুলিশ কনফারেন্সেও বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। পলাতক আকবর হোসেনকে খুঁজে বের করে আইনের হাতে সোপর্দ করার তাগিদ দেয়া হয়েছে ওই বৈঠকে।
২০২০ সালের ১০ই অক্টোবর রাতে নগরের কাস্টগড় থেকে রায়হানকে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে আসে পুলিশ। রাতভর নির্যাতন চালিয়ে তাকে মুমুর্ষু অবস্থায় পরদিন সকালে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা রায়হানকে মৃত ঘোষণা করেন। রায়হান হত্যার ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তৎকালীন পুলিশ কর্মকর্তারা। তবে সিলেট জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠায় শেষপর্যন্ত পুলিশি নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যু হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয়। ঘটনার পরদিন কর্মস্থল থেকে পালায় বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তখনকার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা ও রায়হান হত্যার প্রধান আসামি এসআই আকবর হোসেন। পুলিশ সক্রিয় থাকায় ওই বছরের ৯ই নভেম্বর ভারত পালানোর সময় কানাইঘাটের আলোচিত ডোনা সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার হয় এসআই আকবর। গ্রেপ্তারের পর থেকে সিলেটের কারাগারে ছিল এসআই আকবরসহ ৫ আসামি। কারাগারে থাকা অবস্থায় গত ১০ই আগস্ট উচ্চ আদালত থেকে জামিন পায় আকবর। আর জামিনের আদেশের পরদিনই সে কারাগার থেকে বেরিয়ে যায়। আর আকবর জামিন পাওয়ায় প্রতিবাদে সরব হন নিহত রায়হানের মা সালমা বেগম। পরে ১৪ই আগস্ট চেম্বার জজ আদালতে তার জামিন স্থগিত করা হয়। রায়হান হত্যা মামলার আইনজীবী ব্যারিস্টার ফজল চৌধুরী গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, হাইকোর্টের চেম্বার জজ আদালত সাবেক এসআই আকবরের জামিন বাতিল করে ১০ দিনের মধ্যে নিম্নআদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু আত্মসমর্পণের সময় পেরিয়ে গেলেও সে আদালতে এসে হাজির হয়নি। ফলে সে এখন পলাতক। তিনি বলেন, সিলেট মহানগর জজ আদালতে বিচারাধীন থাকা এ মামলার ধার্য তারিখ আজ। দেখা যাক সে আজ আদালতে আসে কি না।
সিলেট জেলা জজ আদালতের পিপি এডভোকেট আশিক উদ্দিন মানবজমিনকে জানিয়েছেন, রায়হান হত্যা মামলা ন্যায়বিচারের স্বার্থে এখন তিনি দেখভাল করবেন। মঙ্গলবার এ নিয়ে রায়হানের মায়ের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। মহানগর জজ বদলি হয়ে যাওয়ায় আজ হয়তো আদালতে শুনানি নাও হতে পারে। তবে নতুন জজ আসার পর খুব দ্রুত মামলার শুনানি গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, যেহেতু উচ্চ আদালতের কথামতো আকবর নিম্নআদালতে আসেনি, সুতরাং এখন পলাতক হয়ে গেছেন। এদিকে, প্রায় ২২ দিন আগে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এ থাকা সাবেক এসআই আকবর জামিনে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে তার কোনো হদিস মিলছে না। কোথায় আছে সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও কিছু বলতে পারছেন না। এখন পর্যন্ত তাকে প্রকাশ্য দেখা যায়নি। গুঞ্জন আছে জামিনে মুক্তিলাভের পরপরই এসআই আকবর দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। জামিন পাওয়ার পরদিনই এমন আশঙ্কা করেছিলেন নিহত রায়হানের মা সালমা বেগমও। এসআই আকবর ছাড়া এ মামলায় আরও ৩ আসামি আগে জামিন পেয়েছিলেন। এর মধ্যে সাবেক এসআই হাসান উদ্দিন শুরু থেকেই পলাতক। বন্দরবাজার ফাঁড়ির সাবেক কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও হারুনুর রশীদ জামিন পাওয়ার পর এক তারিখ এসে আদালতে হাজিরা দিয়েছিলেন।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, গত তারিখে তারা আদালতে না এসে সময় নিয়েছেন। বর্তমানে কারান্তরীণ রয়েছে মামলার অপর আসামি সাবেক এএসআই আশেক এলাহী। এ ছাড়া মামলার ৬ নম্বর আসামি কোম্পানীগঞ্জের সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল নোমান ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন। তিনি ফ্রান্সে বসবাস করছেন বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা। এসআই আকবরসহ আসামিদের জামিন হয়ে যাওয়ায় নিহত রায়হানের মা সালমা বেগম আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধান আসামি আকবর দেশ ছেড়ে পালাতে পারে। এজন্য তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করেছেন। জানান, রায়হান হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণা করা হবে। এ অবস্থায় প্রধান আসামিসহ অন্য আসামিরা জামিন পাওয়ায় মামলার সুষ্ঠু বিচার নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তিনি দ্রুতই পলাতক থাকা আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের হাতে সোপর্দ করার দাবি জানান।