
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এ আদেশ দেন।
এর আগে এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট আজ বেলা ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে ডাকসুর নির্বাচনপ্রক্রিয়া ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকার কার্যক্রম আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করেছিলেন। বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ ওই আদেশ দিয়েছিলেন।
ওই আদেশের ফলে ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ডাকসু নির্বাচন আটকে গিয়েছিল। হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে চেম্বার আদালতে আবেদন করেন আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে আদেশ দেন।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী ও আলোচিত সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী শিশির মনিরকে এই রিটের পক্ষের আইনজীবী হিসেবে নিযুক্ত করায় ডাকসুর ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম আবিদ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
আজ বিকেলে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক বিক্ষোভে তিনি বলেন, ‘‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই রিটের পক্ষে যে আইনজীবী নিযুক্ত করেছেন সে হচ্ছে শিশির মনির। হে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্পষ্ট ভাষায় বলছি, আজকে থাকার কথা ছিল কবরে, কিন্তু আছি এখানে। আমাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে সেই প্রশাসনে বসেছে। তোমাকে তো কোনো দলের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য বসানো হয়নি।’’
তার এই বক্তব্যের পর সামাজিক মাধ্যমসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। বিষয়টির পক্ষে-বিপক্ষে চলছে যুক্তিতর্ক। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মামলা ও আইনি বিষয়গুলো দেখার জন্য ১০-১২ জন আইনজীবীদের একটি প্যানেল রয়েছে। এরমধ্যে একজন শিশির মনির। ৫ আগস্টের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট কর্তৃক এটি অনুমোদিত হয়।
জানতে চাইলে প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবীদের একটি প্যানেল রয়েছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মামলা ও আইনি বিষয়গুলো দেখে থাকেন। সেখানে মোট ১০ জন আইনজীবী রয়েছেন। আজকের এই রিটে আইনজীবী শিশির মনির বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষের হয়ে আইনি লড়ছেন। তিনি কোনো ব্যক্তির পক্ষে লড়েননি।
তিনি আরও বলেন, এটি রিট করা হয়েছে ডাকসুর জিএস প্রার্থী এসএম ফরহাদের বিরুদ্ধে। তবে রিটের বিবাদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও ডাকসুর নির্বাচন কমিশনার।
এদিকে, সন্ধ্যায় তিনি আবিদ ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসও দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘‘রিট করা হয়েছে প্রার্থিতার বৈধতা নিয়ে, স্থগিত হচ্ছে নির্বাচন। আইনজীবী ছিলেন তাদেরই মতাদর্শের। কিছু সময়ের জন্য গোটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে যেভাবে উত্তপ্ত করা হয়েছে সেটা পরিকল্পিত কিনা, সবকিছু মিলিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহবান জানাচ্ছি।’’
প্রসঙ্গত, গাজীপুরের টঙ্গীস্থ তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসা থেকে আলিম শেষ করে ২০১৬-১৭ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক শিক্ষা বিভাগে ভর্তি হন আবিদুল ইসলাম খান। ঢাবি ক্যাম্পাসে এসে ছাত্রদলের রাজনীতিতে জড়ান তিনি। ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেল থেকে সদস্য পরে নির্বাচন করেন তিনি। সর্বশেষ ২০২৫ সালের ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেল থেকে ভিপি পদে নির্বাচন করছেন। এছাড়া বর্তমানে তিনি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি কবি জসীম উদ্দীন হল ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।