
গভীর রাতে এক ছাত্রীকে বাসায় প্রবেশে দারোয়ানের বাধা, এরপর কথা কাটাকাটি। সামান্য এ ঘটনা কী করে ইতিহাসের ভয়াবহ সংঘর্ষে রূপ নিলো? – তা ভাবাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক- শিক্ষার্থী সবাইকে। দিনভর গ্রামবাসীর সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষে হাতহত হয় চারশোর বেশি ছাত্র ও শিক্ষক। অথচ গত ৬ দশক এ গ্রামবাসীর সাথে সুখ, দু:খ ভাগাভাগি করে বড় হয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। সামান্য ঘটনা থামাতে না পারার পেছনে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা বলছেন শিক্ষার্থীরা। আবার কেউ কেউ পাচ্ছেন বড় ধরণের ষড়যন্ত্রের আভাস।
রাত প্রায় ১২টা। জোবরা গ্রামের একটি ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে বাসায় ঢুকতে বাধা দেয় দারোয়ান। তারপর কথা কাটাকাটি। এরপর পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় গ্রামবাসীর সাথে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষে জড়িয়ে যায় ছাত্ররা। মধ্যরাত থেকে গতকাল (রোববার, ৩১ আগস্ট) দিনভর দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত হয় চারশোর বেশি ছাত্র, প্রো ভিসি, প্রক্টর, সাংবাদিক। ভাংচুর করা হয় পুলিশের গাড়িসহ অন্তত ১০টি যানবাহন। শিক্ষাঙ্গন অস্থির করার ষড়যন্ত্রের আভাসও পাচ্ছেন কেউ কেউ।
শিক্ষার্থীরা জানান, আনসার পর্যন্ত প্রশাসন ম্যানেজ করতে পারেনি। এর দায় প্রশাসনকে নিতে হবে। এটা সম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনীহা আর বাহিনীগুলোর ব্যর্থতা। এর সুযোগ নিয়েছে স্থানীয়রা।
ছাত্রনেতাদের অভিযোগ, সামান্য ঘটনা বড় হওয়ার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দূরদর্শিতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্লিপ্ততা দায়ী। সারাদিন সংঘর্ষ দমাতে কাউকে তৎপর দেখা যায়নি। প্রায় ৪ ঘণ্টা পর বিকেল চারটার দিকে সেনাবাহিনী প্রবেশ করে। জারি হয় ১৪৪ ধারা। ততক্ষণে রক্তাক্ত ছাত্ররা কাতরাচ্ছে মেডিকেলের বিছানায়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ছোট একটা ঘটনা থেকে সূত্রপাত হলো এবং সেটাকে এত বড় করা হয়েছে। যেটা আমরা মনে করি এতে ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। চাকসু বানচালের হয়তো ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। এসব সম্ভাবনা আমরা উড়িয়ে দিচ্ছি না।’
চবি ছাত্রদল সভাপতি মো. আলাউদ্দীন মহসিন বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন কাউকেই আমরা পাশে পাইনি। সম্পূর্ণভাবে আমি দোষারোপ করছি প্রশাসনকে। প্রশাসন সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। চাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ সংঘাত হচ্ছে। কেউ কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন।’
প্রায় ৩৬ বছর পর, মাত্র দুই দিন আগেই ঘোষণা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকসু নির্বাচনের তফসিল। এরপর পরই এমন ঘটনা নির্বাচন বানচাল ও চবির পরিস্থিতি ঘোলাটে করার ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন ছাত্রদের অনেকে।
তবে সন্দেহ আরও দানা বাঁধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বক্তব্যে। উপাচার্য দাবি করেন, সারাদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা জায়গায় যোগাযোগ করেও সহায়তা পাননি। এছাড়া সদ্য ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর একটি পক্ষ পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চেষ্টা করছে দাবি উপাচার্যের।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, ‘একটা ভাইব্রেন্ট পরিস্থিতির মধ্যে আমরা ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনা করে চাকসু নির্বাচন ঘোষণা করেছি। ঠিক তার পরপর এ ঘটনা ঘটেছে। সুতরাং এখানে নানারকম চিন্তা করার বিষয় রয়েছে। সেগুলো আমরা বিবেচনা করছি। বিশ্ববিদ্যালয় স্বাভাবিক রাখতে যা করণীয় তা করতেই আমরা এখানে আছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী আশেপাশের গ্রামগুলোতে থাকেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে যারা জীবিকা নির্বাহ করেন সেসব স্থানীয়রাও পড়েছেন বড় বিপাকে।