
ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে গরু। না, কোনো চোরাইপথে নয়। সীমান্তবর্তী শার্শা উপজেলার বেনাপোল পোর্ট থানা পুটখালিসহ দেশের কয়েকটি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে হাজার হাজার ভারতীয় গরু। ভারত থেকে গরু আমদানি প্রশ্নে সরকারের অবস্থান বরাবরই নেতিবাচক। ক্ষমতাচ্যুত আ.লীগ সরকার শক্তিশালী চক্রের পক্ষ নিয়ে একাধিকবার ভারতীয় গরু আমদানির চেষ্টা চালায়। কিন্তু দেশীয় ডেইরি শিল্প রক্ষা, উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সমৃদ্ধিকরণের স্বার্থে সেটি ব্যর্থ হয়। স্থানীয় খামারিদের চাপও বড় একটি কারণ। সেই একই চক্র এবার ‘বৈধভাবে’ ভারত থেকে গরু আনতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ভারত সরকারের অনুরোধ এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরকার একটি গোষ্ঠীর ভারতপ্রীতির কারণেই চক্রটি এবার ‘সফল’ হতে চলেছে বলে জানা গেছে।
সুপ্রিম কোর্ট এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, ভারত থেকে গরু আনার বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এখনো অন্ধকারে। কী ধরনের গবাদি পশু ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে, সেগুলোর ধরন, প্রকৃতি এবং গুণগত মান কেমন- এ বিষয়ে কিছুই জানে না প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। উচ্চ আদালতের একটি আদেশ সংযুক্ত করে শুধু রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস, জেলা প্রশাসক, বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’র বিওপি (বেজ অব অপারেশন) এবং সীমান্তবর্তী কয়েকটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে সংযুক্ত করে চেষ্টা চলছে ‘বৈধপথে’ গরু আনার। উচ্চ আদালতের একটি আদেশের ভিত্তিতে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন চেষ্টা চলছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অনুমতি গ্রহণের।
প্রাপ্ত রেকর্ড বলছে, চলতি বছর ২৪ জুন জনৈক শামীম রেজা একটি রিট (নং-১১০৭৭/২০২৫) করেন। সংবিধানের ২৭ এবং ৩১ অনুচ্ছেদে করা হয় এ রিট।
শুনানি শেষে বিচারপতি ফাতেমা নজীব এবং বিচারপতি মো. হামিদুর রহমানের ডিভিশন বেঞ্চ রিট মঞ্জুর করেন। রিটে সরকারের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ ওসমান চৌধুরী। এতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, যশোর, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে বিবাদী করা হয়। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে রিটে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মন্ত্রণালয়কে বিবাদী করা হয়নি। তাদের পাশ কাটিয়ে দায়ের করা হয় এ রিট। ফলে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর অফিশিয়ালি বিষয়টি জানে না।
তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, সাতক্ষীরা, শ্যামনগর উপজেলার নকিপুর গ্রামের মো. আমিনুর রহমান (মেসার্স সরদার ট্রেডার্স মালিক), নাসিম রেজা পিন্টু ও মো. শামীম রেজা (মেসার্স স্টার এজেন্সি, ডিএস কনস্ট্রাকশন লি: এবং ‘হংকং ইন্টারন্যাশনাল’র মালিক) ভারতীয় গরু আমদানির বাংলাদেশি এজেন্ট। ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের সময় এই চক্রটি নানা কৌশলে ভারতীয় গরু আনে। এসব গরুর বড় অংশটি অংশের গন্তব্য ছিল বহুল বিতর্কিত বাণিজ্যিক গরুর খামার ‘সাদেক অ্যাগ্রো’। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটির মালিক ইমরান হোসেনের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও চোরাচালানের মাধ্যমে ১৩৩ কোটি টাকা অর্জনের অভিযোগে মামলা করে সিআইডি।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগে ভারতীয় গরু আনতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে নাসিম রেজা, শামীম রেজা, আমিনুর রহমান সিন্ডিকেট। এই চক্রটি অত্যন্ত চাতুর্যের প্রথমে ৬ মাসের জন্য বিশেষ অনুমতি চেয়ে গত ২১ আগস্ট মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আবেদন করেছে। সেখানে একটি রিটের আদেশ সংযুক্ত করে দেশের সাতক্ষীরা, যশোর, ঝিনাইদহ ও সিলেট সীমান্তের কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে ভারত থেকে গবাদি পশু আমদানির ‘বিশেষ অনুমতি’ চাওয়া হয়। ভারতীয় গরু আনার পক্ষে তার প্রধান যুক্তি হচ্ছে মহামান্য হাইকোর্ট গরু আনার অনুমতি দিয়েছেন। দ্বিতীয় যুক্তি হচ্ছে, উল্লেখিত পয়েন্টগুলো দিয়ে ভারতীয় গরু চোরাইপথে দেশে ঢোকার কারণে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। তাই হাইকোর্টের আদেশ এবং গতবছর ২২ সেপ্টেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয়ের প্রণীত ০৮.২০১৪/১১৩ নীতিমালার আলোকে বিশেষ বিবেচনায় যথাযথ শর্ত মোতাবেক তারা বিশেষ অনুমতি প্রার্থনা করছেন। আবেদনে বলা হয়, বর্ণিত পয়েন্টগুলো দিযে চোরাইপথে গবাদি পশু আনায়নের কারণে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। এ কারণে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের বিষয়ে বর্ণিত রিট পিটিশনের আলোকে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের ২২/০৯/২০২৪ ইং তারিখের নীতিমালার আলোকে বিশেষ বিবেচনায় অনুমতি চাওয়া হয়।
তথ্যানুসন্ধানে আরো জানা যায়, ‘মেসার্স স্টার এজেন্সি’র মালিক মো: নাসিম রেজা পিন্টুর উদ্দেশ্য কৌশলে ভারত থেকে গরু আনা। দেশীয় ডেইরি শিল্পের উন্নয়নের স্বার্থে তৎকালীন সরকার ২০১৪ সাল থেকে ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ করে দেয়। অথচ নাসিম রেজা পিন্টু তার আগে ২০১৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সীমান্ত শাখা-২ থেকে (প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে) কৌশলে অনুমোদন বাগিয়ে ভারতীয় গরু আনেন। এ লক্ষ্যে তিনি শার্শা উপজেলার পুটখালি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশে পাকা রাস্তায় স্থায়ীভাবে বিট (খাটাল) স্থাপন করে নিয়েছেন। ভারতীয় গরু নিষিদ্ধ হওয়ার পরও ২০১৫ সালের ৩০ মার্চ নাসিম রেজা ও শামীম রেজা ১ বছরের জন্য ওই বিট নবায়ন করেন। ২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল থেকে ২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত পুটখালি বিওপির অধীনে খাটাল নবায়ন করান। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, একটি নীতিমালার অধীনে বিওপির বিটগুলো পরিচালিত হওয়ার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অধিকাংশ গরুই বাইপাস করার অভিযোগ রয়েছে। জেলা প্রশাসন স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণসহ প্রতি ৩ মাসে একবার বিট পরিদর্শন করে মতামত দেয়ার বিধান থাকলেও মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে স্টার এজেন্সি জেলা প্রশাসন থেকে ইতিবাচক প্রতিবেদন নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে রাজস্ব ফাঁকি দেয়ারও। নাসিম রেজা পিন্টু ও শামীম রেজা যশোর শার্শা উপজেলার নাভারন রেলবাজার গ্রামের শফিউর রহমানের পুত্র। এ দুই ভাই ‘ডিএস কনস্ট্রাকশন লি’, ‘হংকং ইন্টারন্যাশনাল’ নামক দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভারত থেকে গরু আনে। রাজধানীর ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার রোড-৫, বাড়ি-২৭/এ, ফ্ল্যাট-২ ঠিকানায় প্রতিষ্ঠান দুটির রেজিস্ট্রেশন নেয়া।
একইভাবে মো: আমিনুর রহমানের মালিকানাধীন মেসার্স সরদার ট্রেডার্স, শ্যামনগর উপজেলার ১৭ বিজিবি ব্যাটালিয়ানের আওতাধীন কৈখালি/দুরমুজখালি/খড়মি বিওপির অধীন খাটাল স্থাপন করে ভারতীয় গরু আনছে দীর্ঘদিন ধরে। আমিনুর সাতক্ষীরা, শ্যামনগর উপজেলার নকিপুর গ্রামের গোলাম সরদারের পুত্র।
এদিকে কোনো ধরনের কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে যদি ভারত থেকে গরু আনা হয় সেটির ক্ষয়ক্ষতি শুধু গ্রামীণ অর্থনীতিতেই সীমাবদ্ধতা থাকবে না, জাতীয় অর্থনীতিতেও বিরূপ পড়ার আশঙ্কা করছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ডেইরি খামারিরা। বরিশাল মঠবাড়িয়ার তাশরিক ডেইরি ফার্মের মালিক মো: জালাল মাতবর বলেন, ভারতীয় গরু আমদানি করা হলে সরকারের রাজস্ব হয়তো কিঞ্চিৎ আহরিত হবে কিন্তু অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে বহুমাত্রিক। ডেইরি ফার্মগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। রাখালরা কর্মসংস্থান হারাবে। ফরোয়ার্ড-ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ প্রতিষ্ঠান ও কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মাঝারি পর্যায়ের এ খামারি বলেন, দেশীয় ডেইরি শিল্প সুরক্ষা ও উন্নয়নে সরকারের বরঞ্চ উচিত গোখাদ্য উপাদানের (খৈল, ভূসি, গম, প্রোটিন) ক্রয়মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গো-খাদ্য মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া। এতে ব্যয় কমবে। নি¤œ আয়ের মানুষ আমিষের ঘাটতি পূরণে কম মূল্যে গোশত কিনতে পারবে। সেটি না করে গোশতের মূল্য কমাতে যদি ভারতের গবাদি পশু আনা হয় ডেইরি শিল্পটি নিঃশেষিত হবে। শিল্প বন্ধ হয়ে গেলে সরকার শুল্ক পাবে কোত্থেকে?
গবাদি পশুর অর্গানাইজ খামারি সাইদুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি উদ্যোগে এলসির মাধ্যমে গরু আমদানি করা হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, কাস্টমস এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে অবশ্যই সম্পৃক্ত করতে হবে। অন্যথায় এটিকে ‘চোরাইপথে গরু আনা’ বলতে হবে। এতে সরকার রাজস্ব হারাবে। দেশীয় খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গ্রামীণ অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি গবাদি পশু। যে বাড়িতে ১০টির বেশি গরু রয়েছে তারা অর্গানাইজড খামারি। সারা দেশে এ ধরনের সাড়ে ৩ লাখের বেশি খামারি রয়েছেন। যেসব কৃষকের দুই থেকে পাঁচটি গরু রয়েছে তারা প্রান্তিক খামারি। এদের সংখ্যা ১১ লাখের বেশি। ছোট-বড় মিলিয়ে ১৮ লাখ গরুর খামারি রয়েছেন। এর সঙ্গে সরাসরি এক কোটি লোক জড়িত। ভারতীয় গরু আমদানি প্রচেষ্টার খবরে এসব লোকের এখন মাথায় হাত।
ভারত থেকে গরু আমদানি হলে খামারিরা চরম বিপাকে পড়বে বলে জানান প্রান্তিক খামারিরা।
মানিকগঞ্জ থেকে ইনকিলাব প্রতিনিধি জ. ই. আকাশ জানান, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ভারতীয় গরু আসা বন্ধ হওয়ার পর থেকেই দেশের গো-খামারি বেশ সমৃদ্ধি লাভ করেছেন। হঠাৎ করেই ভারত থেকে গরু আমদানির চেষ্টায় খামারিদের মাঝে বেশ উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
মানিকগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, এ জেলার ৭ উপজেলায় ছোট-বড় সর্বমোট ১৩ হাজার ২৯৪টি গো-খামার রয়েছে। এর মধ্যে ২টি গরু থেকে শুরু কোনো কোনো খামারে ৫ শতাধিক গরু রয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে জানা যায়। জেলার হরিরামপুরের কৌড়ি এলাকায় কান্ট্রি ফিল্ডস ফার্ম হাউস অ্যান্ড কোম্পানি লি. নামে একটি মডেল খামার রয়েছে। প্রায় ১০ একর জমির ওপর নির্মিত এই মডেল খামারে বর্তমানে ষাঁড় ও গাভি মিলে প্রায় পাঁচ শতাধিক গবাধি পশু রয়েছ। গত কোরবানি ঈদে অনলাইনেই এই মডেল খামার থেকে বিভিন্ন জাতের প্রায় আড়াইশ গরু বিক্রয় করা হয়। এ ছাড়াও প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার লিটার দুধ ঢাকার স্থানে রফতানি করা হয় বলে জানা যায়।
তবে জেলার বেশ কয়েকটি ছোট-বড় গো-খামারিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিদেশ থেকে গোশত কিংবা গরু আমদানি করলে দেশীয় খামারের ওপর অনেক বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে বর্তমান বাজারের তুলনায় গরুর দাম অনেকটা কমে আসবে। এতে করে খরচের তুলনায় দেশীয় খামারিরা গরুর দাম না পেলে প্রান্তিক গো-খামারিরা পথে বসে যাবে বলে দাবি করেন অনেকে। ঝুঁকির মধ্যে পড়বে দেশীয় হাজার হাজার গো-খামারিরা।
একই উপজেলার পূর্ব খলিলপুর এলাকার আরবিএস প্লাস অ্যাগ্রো প্রা. লি. এর ম্যানেজার মো. মনির খান জানান, ভারত থেকে গরু আমদানি করলে আমাদের দেশের খামারিদের অনেক বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবে। কারণ আমাদের দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে খামার রয়েছে। কোরবানির ঈদ বাজার থেকে ফেরত অনেক গরু এখনো খামারে রয়ে গেছে। আমাদের যে হারে খরচ হয়, আমরা আসলে সে হারে মূল্য পাই না। যার ফলে কোরবানি ঈদের পরও অনেক গরু আমাদের খামারে রয়ে গেছে। ফলে আমরা এমনিতেই অনেক লোকসানে আছি। এখন যদি ভারত থেকে গরু আমদানি করা হয় তাহলে আমাদের দেশের গরুর দাম আরো নেমে আসবে। এতে করে আমাদের দেশের খামারিরা আরও ধ্বংসের মুখে পড়বে।
ভারত থেকে গরু আমদানি করলে দেশীয় খামারের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পডরবে কি না, জানতে চাইলে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মো. মুজিবর রহমান ইনকিলাবকে জানান, প্রভাব তো পড়বেই। দেশের বাইরে থেকে গোশত কিংবা গরু আমদানি এটা তো আসলে সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়। তবে দেশের বাইরে থেকে যদি গোশত কিংবা গরু আমদানি করা হয়, তাহলে দেশের খামারিদের ওপর আর্থসামাজিকতার একটা প্রভাব তো পড়বেই।
ইনকিলাবের পাবনা জেলা সংবাদদাতা রনি ইমরা জানান, পাবনার খামারিরা গো-খাদ্যের উচ্চমূল্যের কারণে আর্থিক সংকটে পড়েছেন। গো-খাদ্যের খরচ জোগাতে না পেরে অনেকে গরু বিক্রয় করে দিচ্ছেন। গতকাল রোববার পাবনা বেড়া উপজেলার পৌর গো-খামারি ফরুক আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, আমার খামারে মোট ৩০টি গরু ছিল। গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়াতে ঠিকমতো খাদ্যের জোগান না দিতে পেরে ৭টি গরু বিক্রয় করে দিয়েছি। এমনিতেই ব্যাপক লোকসানের মধ্যে আছি। এর মধ্যে ভারতীয় গরু আমদানি করলে আমরা পথে বসে যাব।
ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে দেশের ক্ষুদ্র খামারি ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গরু মোটাতাজাকরণ খামারি ও স্থানীয় সংগঠনগুলো। তাদের মতে, দেশীয় ডেইরি ও ফ্যাটেনিং খাতকে ধ্বংস করতেই চক্রটি দেশে গরু আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারকে ভুল বুঝিয়ে কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে চেষ্টা চলছে গরু আমদানির। প্রাণিসম্পদে দেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বরং ‘রেড মিট’ রফতানিও করছে। তা সত্ত্বেও এ মুহূর্তে ভারত থেকে গরু আমদানির অনুমতি প্রদান অত্যন্ত রহস্যজনক। অবিলম্বে সরকারের উচিত এই চিন্তা থেকে সরে আসা।
এদিকে মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবেরের সঙ্গে। উচ্চ আদালতের আদেশ এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আবেদন সম্পর্কে অবহিত করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আরো তথ্য-উপাত্ত প্রয়োজন। খোঁজখবর নিয়েই কথা বলা সম্ভব।