
রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দিয়ে আওয়ামী লীগবিরোধী মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা চালিয়েছে জাপার নেতাকর্মীরা—এমন অভিযোগ করেছে গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি)।
পরে রাত ৮টার কিছুক্ষণ পর ওই হামলার প্রতিবাদে কাকরাইল এলাকায় মশাল মিছিল বের করে গণঅধিকার পরিষদ। এসময় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিলে হামলার চেষ্টা চালালে উত্তপ্ত হয় পরিস্থিতি। বিক্ষোভকারীরাও তখন মিছিল থেকে ইটপাটকেল ছুড়ে প্রতিরোধ করে এবং পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙে জাপার কার্যালয় চত্বরে প্রবেশ করে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা লাঠিচার্জ করে। সংঘর্ষের বেশ কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এক ভিডিওতে দেখা যায়, সেনাবাহিনী ও পুলিশের একাধিক সদস্য গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর লাঠিচার্জ করছেন।
এক পর্যায়ে লাল টি-শার্ট পরা এক ব্যক্তি ‘জুলাই ভরে দেব’ বলে চিৎকার করে নুরকে বেধড়ক মারধর করে। পরবর্তীতে আরও একটি ভিডিওতে দেখা যায়, লাঠি হাতে থাকা সেই লাল টি-শার্ট পরা ব্যক্তিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা আটক করলেও পরে ছেড়ে দেন।
এই ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী ও পুলিশ সদস্য। আহতদের মধ্যে রয়েছেন—গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান (৩২), হাসান তারেক (২৮), ফারজানা কিবরিয়া (৩০), মইনুল ইসলাম (৩৫), মেহবুবা ইসলাম (৩০), আবু বক্কর (৩০), তারেক আজাদ (২৫) এবং পুলিশ ইন্সপেক্টর আনিছুর রহমান (৪২)।
শুক্রবার রাতেই আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মীর আসাদুজ্জামান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ঘটনার সময় পুলিশ লাল টি-শার্ট পরে নুরের ওপর হামলা করা ব্যক্তিকে পুলিশ খুঁজতেছে। খুব দ্রুত শনাক্ত করতে আমাদের কয়েকটি টিম কাজ করছে।
ভিডিওতে দেখা লাঠি হাতে ওই ব্যক্তিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনী আটক করলেও তাৎক্ষণিক বিষয়টি না জানায় ছেড়ে দিয়েছে বলে জানান তিনি।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, সেখানে প্রথমে পুলিশ-সেনবাহিনী আমাদের ওপর হামলা করছে। সেনাবাহিনীর একজন সদস্য নুরের বুকে লাঠি দিয়ে গুতা দিয়েছে। তারপর নুরুল হক নুর যখন মাঠিতে পড়ে গিয়েছে তখন একটা সময় লাঠি হাতে লাল শার্ট পড়া ওই ব্যক্তিও এসে বেধড়ক মারধর শুরু করে। এ ধরনের সংঘর্ষের ঘটনাগুলোতে সাধরণত সিভিলে ডিবি অথবা গোয়েন্দা সংস্থার লোক থাকে। এখন ওই ব্যক্তিটি কে এটা চিহ্নিত করবে পুলিশ-সেনাবাহিনী।
তিনি আরও বলেন, যারা ভিপি নুরুল হক নুর সহ আমাদের বাকি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে তাদের প্রত্যেকে আইনের আওতায় আনতে হবে। এটা আমাদের দাবি। এটার সুষ্ঠ তদন্ত করতে হবে।
এদিকে গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দোসরদের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে আজকের আমাদের এই বিক্ষোভ সমাবেশ ছিল। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সমাবেশ শেষে আমরা পল্টন জিরো পয়েন্ট থেকে মিছিল নিয়ে নাইটিঙ্গেল মোড়ের দিকে যাচ্ছিলাম। এ সময় জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে দিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে আমাদের পেছন থেকে ইটপাটকেল ছোড়া শুরু হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেই সময় জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে ৩-৪ শতাধিক লোক উপস্থিত ছিল। আমাদের ধারণা, জাতীয় পার্টির পাশাপাশি সেখানে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরাও অবস্থান করছিল।’
আবু হানিফ বলেন, ‘এই ঘটনায় আমাদের ১০-১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের অনেককেই চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।’