
বরিশালের বাবুগঞ্জের চাঁদপাশা মাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের পৌরনীতি ও সুশাসন বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক সাহেদা পারভিন। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান তিনি। বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মানুযায়ী কলেজ কর্তৃপক্ষ ও মন্ত্রণালয় থেকে ছুটি নেওয়ার কথা থাকলেও তা না নিয়েই চলে যান তিনি। গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর এভাবে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর সেখানকার নাগরিকত্ব পান তিনি।
সাহেদা পারভিন নাগরিকত্ব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে বাংলাদেশ থেকে বেতন নিচ্ছেন। প্রায় ১ বছর কলেজে না এসে এভাবে বেতন নিচ্ছেন তিনি। বৈধ পন্থায় ছুটি না নিয়ে বিদেশে অবস্থান করছেন। শুধু তাই নয়, ২০২৭ সাল পর্যন্ত এভাবে বিদেশ ছুটিতে থেকে অবসরে যাওয়ার আবেদনও করেছেন তিনি। অবশ্য কলেজ কর্তৃপক্ষ তার এই আবেদন গ্রহণ করেনি। শিক্ষা বোর্ডের ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
কলেজসূত্র জানায়, কেবল সাধারণ ছুটির একটি আবেদন দিয়ে চলে যান সাহেদা। ৪ মাস পর সেখান থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি দেন। এতে চিকিৎসার প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন উল্লেখ করে চান আরও ২ মাসের ছুটি। মানবিক দিক বিবেচনায় ওই আবেদন গ্রহণ করে তাকে বাড়তি ২ মাসের ছুটি দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। আবেদন অনুযায়ী জুনে কলেজে যোগদানের কথা থাকলেও আসেননি তিনি। উপরন্তু নতুন একটি আবেদনে যুক্তরাষ্ট্রে থেকে অস্ত্রোপচার করতে হবে এবং সিরিয়াল পাচ্ছেন না জানিয়ে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত ছুটি বাড়ানোর আবদার করেন। ওই বছরের জুনে চাকরির বয়স ২৫ বছর হবে সাহেদার। সেক্ষেত্রে অবসরকালীন পূর্ণ ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদী পাওয়ার উপযুক্ত হবেন তিনি।
পরিচয় না প্রকাশের শর্তে কলেজের এক কর্মকর্তা জানান, বিদেশে থেকে অবসর পর্যন্ত ছুটি কাটিয়ে বেতনসহ অন্যান্য সুবিধাদি নেওয়ার উদ্দেশ্যেই মূলত আবেদন করেন সাহেদা। শেষ পর্যন্ত সেই আবদার পূরণ হয়নি তার।
চাঁদপাশা মাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ তাহমিনা আক্তার বলেন, সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বিদেশে গেলেও চিকিৎসার কথা শুনে বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখেছিলাম আমরা। দ্বিতীয় দফায় ২ মাসের ছুটিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তৃতীয় আবেদনে যখন তিনি ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত ছুটি চান, তখনই সন্দেহ হয় আমাদের। পরে খোঁজখবর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে তার স্থায়ী হওয়া এবং নাগরিকত্ব পাওয়ার তথ্য পাই। যেহেতু তার বেতন স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যায়, তাই বেতনভাতা আটকানোর কোনো সুযোগ নেই আমাদের। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে সাহেদার নাগরিকত্ব গ্রহণ সংক্রান্ত সব প্রমাণ হাতে আসে।
তিনি বলেন, কাজে যোগদানের জন্য পরপর ৩টি নোটিশ দেওয়া হয় তাকে। সেসব নোটিশের কোনো উত্তর দেননি বা দেশেও ফেরেননি তিনি। সর্বশেষ ১১ আগস্ট অনুষ্ঠিত কলেজ গভর্নিং কমিটির সভায় সশরীরে উপস্থিত থাকতে বলা হয় তাকে। তারপরও তিনি না আসায় ও বিনা ছুটিতে আরও ২ মাস অনুপস্থিত থাকায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে কমিটি। একই সঙ্গে কেন তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না, তা জানতে চেয়ে নোটিশ দেওয়া হয়।
কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি এইচএম তসলিম উদ্দিন বলেন, প্রায় এক বছর এভাবে অননুমোদিত ছুটি কাটানোর পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি আমরা বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে জানাই। শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের নির্দেশে গঠিত ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি বিষয়টির অনুসন্ধান করে। তদন্তে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গমন এবং সেখানকার নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রমাণ মেলার পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, মিথ্যা তথ্য দিয়ে ছুটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থেকে এক বছরে বেতনভাতা বাবদ প্রায় ৫ লাখ টাকা নিয়েছেন সাহেদা পরভিন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এই কলেজ শিক্ষক। এ ব্যাপারে তাকে বিরক্ত না করতেও বলেন তিনি।
শীর্ষনিউজ