
খুলনার ডুমুরিয়ায় যুবদল নেতা এস এম শামীম হোসেনকে পারিবারিক কলহের জেরে খুন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় তাঁর স্ত্রী ফাতেমা আক্তার ও কিশোর শ্যালককে (১৭) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ফাতেমা আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, শামীমকে হত্যার জন্য যে ছুরিটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি কয়েক দিন আগে শামীম স্ত্রীর কাছে রেখেছিলেন। হত্যার পর সেই ছুরি বাড়ির পাশের জলাশয়ে ফেলে দেওয়া হয়, পরে সেটি উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গতকাল সোমবার বিকেলে ডুমুরিয়া উপজেলার আঠারোমাইল এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে শামীমের স্ত্রী ও শ্যালককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ও র্যাব-৬–এর যৌথ দল।
খুলনা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সি-সার্কেল) আবির সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘শামীমের স্ত্রী ফাতেমা জানিয়েছেন—শামীম দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত এবং বেকার। আগে তাঁর যে গ্যারেজটা ছিল, সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে। এসব বিষয় নিয়ে শামীম তাঁর স্ত্রীর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন। একপর্যায়ে তিনি (ফাতেমা) স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এই কাজের জন্য তিনি তাঁর ফুফাতো ভাইকে বাড়িতে ডেকে আনেন। ঘটনার রাতে বাড়ির তিনতলায় বসে ইয়াবা সেবন করছিলেন শামীম। সে সময় তাঁর স্ত্রী পাশে বসে ছিলেন। ওই সময় তিনি তাঁর ভাইকে ফোন দিয়ে তিনতলায় ডাকেন। শামীমের শ্যালক তিন তলায় এলে স্ত্রী ওয়াশরুমে যাওয়ার অজুহাতে রুমের বাইরে দাঁড়ান। এ সময় ভাইকে ইশারা করলে বড় একটা ছুরি দিয়ে সে শামীমকে কোপ মারে। ছুরিটা শামীম কিছুদিন আগে এনে স্ত্রীর কাছে রাখতে দিয়েছিলেন।’
আবির সিদ্দিকী আরও বলেন, ফাতেমা আক্তারের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বাড়ির পাশের জলাশয় থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় অধিকতর তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
গত শুক্রবার রাত ১১টার দিকে ডুমুরিয়ার আঠারোমাইল এলাকার তিনতলায় নিজ বাড়িতে খুন হন যুবদল নেতা শামীম হোসেন। তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়। নিহত শামীম সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ইসলামকাটি ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।
গত রোববার বিকেলে নিহত যুবদল নেতার মা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রশিদা বেগম অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে ডুমুরিয়া থানায় মামলা করেন। তদন্তে শামীমের মাদকসংশ্লিষ্টতা, পারিবারিক অশান্তি, আর্থিক লেনদেন ও রাজনৈতিক বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছিল।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শামীমের মা-বাবা দুজনই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। প্রায় ২৫ বছর আগে তাঁরা তালার উথালিগ্রাম থেকে ডুমুরিয়ার আঠারোমাইলে এসে বসবাস শুরু করেন। একসময় মা–বাবার বিচ্ছেদ হয়। শামীম আগে আঠারোমাইল বাজারে মোটরসাইকেল মেকানিকের কাজ করতেন। বর্তমানে তাঁদের তিনতলা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় পরিবার নিয়ে থাকতেন তিনি। নিচতলা ভাড়া দেওয়া। তিনতলায় কেউ থাকতেন না। তৃতীয় তলায় প্রায়ই বহিরাগত মাদকসেবীদের আড্ডা বসত, সেখানে যেতেন শামীমও। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না।
ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদ রানা বলেন, শামীম হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে স্ত্রী ও শ্যালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর স্ত্রী স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শ্যালককে যশোর কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে।