
এসব কী হচ্ছে দেশে? ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর শিল্পপতিসহ অনেকের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছিল। তারা গত রেজিমের দোসর হিসাবে নানারকম দুর্নীতির মাধ্যমে প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নিয়েছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা থাকায় তাদের হিসাব জব্দ করা হয়। কিন্তু ঘটেছে এক অস্বাভাবিক ঘটনা। টাস্কফোর্সের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এবং ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে জব্দ থাকা একাধিক ব্যাংক হিসাব খুলেছেন আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইল্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান কর্মকর্তা।
অভিযোগ উঠেছে, বিপুল অঙ্কের আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে এই অনৈতিক কাজটি করা হয়েছে। এই সুযোগে ওরিয়ন গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট রেজাউল করিম ও এনা গ্রুপের এনায়েত উল্ল্যাহ খন্দকার তাদের হিসাব থেকে যথাক্রমে ৮০ ও ২০ কোটি টাকা তুলে নিতে সক্ষম হয়েছেন। বিএফআইইউ প্রধানের এমন অনৈতিক কার্মকাণ্ডের তদন্ত করছে দুদক। অন্তর্বর্তী সরকার যখন গত রেজিমে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে, ঠিক তখন জব্দকৃত হিসাব থেকে টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনা নতুন সংকটের জন্ম দিচ্ছে, সন্দেহ নেই। বিএফআইইউ প্রধানের একটি অশালীন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছড়িয়ে পড়লে এ কাজেরও তদন্ত শুরু হয়েছে।
আমরা অবাক হয়ে যাই, বিএফআইইউ-এর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার প্রধান হিসাবে এমন একজনকে বসানো হয়েছে, যিনি আর্থিক ও যৌন কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত। সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ অনুসারে নৈতিক স্খলন বা অসদাচরণের অভিযোগে সরকারি কর্মচারীদের শাস্তি হিসাবে নিম্নপদে অবনমন, চাকরি থেকে বরখাস্ত অথবা অপসারণ করা যাবে। বিএফআইইউ প্রধানের বিরুদ্ধে চলমান তদন্তে যদি তার দোষ প্রমাণিত হয়, তাহলে তাকে অবশ্যই এই আইন বলে শাস্তি দিতে হবে। গত রেজিম যে দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজ রেখে গেছে, আমরা তা থেকে মুক্ত হতে চাই। কিন্তু সেই দুর্নীতির ধারাবাহিকতা যদি চলতে থাকে, তাহলে দেশ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তাই বর্তমান আমলের দুর্নীতিগ্রস্তদের অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে অন্যদের সতর্ক করতে হবে।