Image description

যারা ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাস করেন- তারা বলছেন, নির্বাচন যথাসময়ে নাও হতে পারে। তাদের যুক্তি হচ্ছে, সরকার প্রধান নির্বাচনের কথা বললেও তার ঘনিষ্ঠজনরা ঘোষিত সময়ে নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে মোটেই আগ্রহী নয়। তাদের কথা- পিআর পদ্ধতি, গণভোট, বিচার ও সংস্কার ছাড়া নির্বাচন করা ঠিক হবে না। প্রতিদিনই তারা নতুন নতুন শর্ত হাজির করছে। এতে করে জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে।

অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করছেন, প্রফেসর ইউনূসের ঘনিষ্ঠজনেরা নির্বাচনবিরোধী অবস্থান কেন নিচ্ছেন। এসব তো তার অজানা থাকার কথা নয়। প্রফেসর ইউনূস ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ব্যাপারে জাতির সামনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অনেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন- নির্বাচন যথাসময়েই হবে। নির্বাচন ছাড়া বিকল্পই বা কী! কেউ কেউ অবশ্য মনে করেন, প্রফেসর ইউনূসের এই অবস্থান জেনেও তার ঘনিষ্ঠ মিত্ররা পানি ঘোলা করছেন নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে। তারা মনে করেন, নির্বাচন যত বিলম্বিত হবে ততই কোণঠাসা হবে বিএনপি, জনপ্রিয়তা কমবে। এই সুযোগে তারা মাঠ দখল করে নেবেন। বাস্তব অবস্থা তা কিন্তু নয়। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আবারো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। জামায়াত নেতাদের এটা অজানা থাকার কথা নয়। একটি শক্তি ক্ষমতা তাদের কব্জায় নিয়ে যাবে। অন্য শক্তিও বসে থাকবে না। তারাও শক্তির লড়াই দেখিয়ে মঞ্চ দখল করার চেষ্টা করবে। 

বলাবলি হচ্ছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার নিজের লোকদের বোঝাতে কেন অক্ষম। নাকি তিনি নিজেকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখছেন কৌশলগত কারণে। সময় যত গড়াচ্ছে, ততই তার অবস্থান নাজুক হচ্ছে। নির্বাচনকালীন প্রশাসন কেমন হবে এ নিয়ে চারদিকে নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এ সপ্তাহের গোড়ার দিকে এক কূটনৈতিক আড্ডায় গিয়েছিলাম। সেখানে শুনলাম, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানে সক্ষম কিনা এমন প্রশ্ন। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বর্তমানে যে হাল তাতে অনেকের মধ্যেই এই সংশয় রয়েছে। তারা বলছেন, এই প্রশাসনের পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা করা একটি দুরূহ কাজ হবে।  অতি সমপ্রতি ঢাকাস্থ একজন শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিক প্রধান বিচারপতির সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন। এই সাক্ষাৎ ঘিরেই অন্তহীন জল্পনা-কল্পনা। ওদিকে, নির্বাচন ঠেকাতে নানামুখী খেলা চলছে। নির্বাচন কমিশনের উপরেও চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। যে কারণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন স্পষ্ট করেই বলেছেন, কোনো চাপের কাছে তিনি নতি স্বীকার করবেন না। প্রয়োজনে পদত্যাগ করবেন।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কোনো নির্বাচন কমিশনের তরফে এমন খোলামেলা বক্তব্য কখনো আসেনি। নাসির উদ্দিন একজন সৎ ও স্বচ্ছ মানুষ। তিনি যা বিশ্বাস করেন তাই করেন। কোনো অসুস্থ রাজনীতি, পর্দার আড়ালের কোনো খেলায় তিনি যে আত্মসমর্পণ করবেন না- এই বার্তাই তিনি দিয়েছেন জাতির সামনে। বিপ্লবের পর প্রতিবিপ্লব হয়- এটাই নাকি নিয়তি। আর এর মূল উপাদান হচ্ছে গুজব। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে যেভাবে গুজব ডালপালা মেলেছে তাতে করে অনেকেই শঙ্কিত। আবারো গণতন্ত্রের মৃত্যু হয়ে যায় কিনা!