
বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলা ও পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ, এই দুইপ্রান্তে বসবাসকারী প্রায় লক্ষাধিক সাধারণ মানুষের চলাচলে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সাড়ে ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি গার্ডার ব্রিজ। সেতুর মূল অংশের কাজ শেষ হয়েছে প্রায় দুই বছর কিন্তু অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ পুরোটাই অসম্পন্ন। ফলে এটি দিয়ে পারাপার তো দূরে থাক, মই দিয়েও ওঠা যায়না সেতুতে।
ফলে যোগাযোগ রক্ষায় চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন ওই এলাকার পথচারী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, স্কুল কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ দুই পাড়ের লক্ষাধিক ভিন্ন পেশাজীবি সাধারণ মানুষ। সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুটির দুই প্রান্তের নিম্নভাগ মূল সড়ক থেকে গড়ে ১৩ফুট উঁচু। সেতুর একপাশের ঢাল নেমেছে একটি ভবনের ছাদে। ফলে এ্যাপ্রোচ সড়কের সঠিক রেসিও লেভেল নিয়ে চরম জটিলতা দেখা দিয়েছে। সেতুটির নির্মাণকাজে এমন বেহালবস্থার বিষয়টি জানতে চাইলেও দায়িত্বরত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।
একইসাথে ঠিকাদারের পক্ষেই সাফাই গান সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর। উপজেলা প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, মির্জাগঞ্জ ও বেতাগী উপজেলার সংযোগস্থল জলিশাবাজার সংলগ্ন বেড়েরধন নদির উপর ২০২১—২০২২ অর্থবছরে জাইকার অর্থায়নে মির্জাগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর দরপত্র আহবান করেন। ৬ কোটি ৩২লাখ ৯৩ হাজার ৪৩৭ টাকা ব্যয়ে গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পান এনায়েত এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
তবে শুরু থেকেই নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিলো ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে, ব্রিজের নির্মাণ কাজে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রীর ব্যবহার,রাতের আধারে ঢালাইয়ের অভিযাগসহ নানা অনিয়ম তুলে ধরেন এলাকাবাসী।
এ নিয়ে গণমাধ্যমে নানা সংবাদও প্রকাশ হয় একাধিকবার, কিন্তু তদরকি করার জন্য দায়িত্বরত অধিদপ্তরের সাথে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের যোগসাজস থাকার ফলে খুব একটা কর্ণপাত করেননি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

একাধিক বাসিন্দা জানান, এমন দায়সারা ভাবে ব্রিজের মূল কাঠামোর কাজ শেষ করলেও এ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ ফেলে রেখেছেন বছরের পর বছর ধরে। ফলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ওই দুই পাড়ের সাধারণ মানুষ। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন দুই পাড়ের ৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ ও সাধারণ পথচারী ও ব্যবসায়ীরা।
মির্জাগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী চন্দন কুমার চক্রবর্তি যুগান্তরকে বলেন, ঠিকাদারের সাথে কথা হয়েছে বৃষ্টি কমলে কাজ করবে। আর আমি দরপত্র আহ্বানের সময়ে দায়িত্বরত ছিলাম না তাই অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ হয়েছে কিনা সঠিক বলতে পারবো না।
কাজের মেয়াদের বিষয়ে তিনি আরো বলেন, নির্মাণকাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে এটি সঠিক, তবে মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি করা হয়েছে বাড়ানো হয়েছে কিনা সঠিক জানা নেই। তবে এটি নিশ্চিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বৃষ্টি শেষ হলেই কাজটি করবেন।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) বিপুল সিকদার যুগান্তরকে বলেন, উপজেলার হোসনাবাদ ইউপি কার্যালয়ের সামনেই ব্রিজটি, ফলে বেশ জনগুরুত্বপূর্ণ। বছরের পর বছর ধরে এমন দুর্ভোগ হতো না যদি এটির দরপত্র বেতাগী উপজেলা প্রকৌশলী বিভাগ আহবান করত, আমরা এতোদিনে নিরসণের চেষ্টা করতাম। তবে এ বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরকে বেতাগী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবহিত করা হবে।