Image description

গাজায় ইসরাইলের চলমান সামরিক আগ্রাসন ও ত্রাণবহরে বাধা দিয়ে মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষের ঘটনায় বিশ্বব্যাপী বইছে নিন্দার ঝড়। জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে গাজা সিটিকে ‘দুর্ভিক্ষপীড়িত’ এলাকা ঘোষণা করার পর থেকে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ আরও জোরালো হয়ে উঠেছে।

ইসরাইলি বাহিনীর টানা বোমাবর্ষণে গাজা সিটিতে প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ, যাদের মধ্যে নারী, শিশু ও ত্রাণপ্রার্থীরাও রয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, চলমান আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৬২ হাজার ৬২২ জন নিহত এবং ১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৭৩ জন আহত হয়েছেন।

ইসরাইল এবার শুধু হামলা নয়, গাজা শহরে কর্মরত চিকিৎসাকর্মীদেরও বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরম উদাহরণ বলে মন্তব্য করেছে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। মানবাধিকার সংস্থাগুলো সতর্ক করে জানিয়েছে, এই পদক্ষেপ প্রায় ১০ লাখ মানুষকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার বড় পরিকল্পনার অংশ হতে পারে।

খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সহায়তায় বাধা দিয়ে গাজা শহরে অবরোধ সৃষ্টি করায় জাতিসংঘ সেখানকার পরিস্থিতিকে দুর্ভিক্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

জাতিসংঘ-সমর্থিত খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, ৫ লাখ মানুষ ও ১ লাখ ৩২ হাজার শিশু বর্তমানে চরম অপুষ্টির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এসব শিশুর জীবন এখন হুমকির মুখে।

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী সিডনি, মেলবোর্ন ও ব্রিসবেনজুড়ে ৪০টির বেশি বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন গ্রুপ’ আয়োজিত এই আন্দোলনে ৩ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ অংশ নেন। শুধুমাত্র ব্রিসবেনেই অংশগ্রহণ ছিল ৫০ হাজারের বেশি।

স্থানীয় টিভি চ্যানেল ‘চ্যানেল ১৩’-এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এখন পর্যন্ত সাতবার যুদ্ধবিরতির চুক্তি আটকে দিয়েছেন।

সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নেতানিয়াহুর চাপে বারবার ব্যর্থ হয়েছে শান্তি আলোচনার চেষ্টা। তার সঙ্গে আরও চাপে ছিলেন কট্টরপন্থী মন্ত্রীরা—বেজালেল স্মোট্রিচ ও ইতামার বেন গভির।

গাজার শিশুদের পক্ষে কথা বলার আহ্বান জানিয়ে আমেরিকার সাবেক ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছেন তুরস্কের ফার্স্টলেডি এমিনে এরদোয়ান।

তিনি বলেন, “গাজা শিশুদের কবরস্থানে পরিণত হয়েছে। এখন সময় এসেছে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কণ্ঠস্বর ও শক্তি একত্র করার।”

তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনের শিশুদের জন্য যেভাবে মেলানিয়া সমর্থন জানিয়েছিলেন, গাজার শিশুদের ক্ষেত্রেও যেন তেমন উদ্যোগ নেন।

প্রায় দুই বছর ধরে চলা গাজা যুদ্ধ শুধু মৃত্যুর মিছিলই বাড়াচ্ছে না, বরং এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে ফিলিস্তিনিদের। বিশ্ব সম্প্রদায়ের আহ্বান ও জনমত জোরালো হলেও ইসরাইলি দমননীতি অব্যাহত রয়েছে। এখন দেখার বিষয়, আন্তর্জাতিক চাপ কতটা কার্যকর হয় এই ভয়াবহতা থামাতে।
শীর্ষনিউজ