
দেশের রাজনীতি হঠাৎ করেই যেন ক্যাম্পাসমুখী হয়ে গেছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক মেরূকরণ, সংস্কার ও জুলাই সনদ থেকে দৃষ্টি সরে গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের দিকে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে প্রধান দলগুলো এখনো যোজন দূরত্বে। এ সময়ে আলোচনার কেন্দ্রে থাকার কথা বহুল কাঙ্ক্ষিত এই সনদ ও তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া। দেখে মনে হচ্ছে, ডাকসু ছাড়াও রাকসু, চাকসু, জাকসুসহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন আগামী কয়েক মাস রাজনৈতিক সচেতন মানুষের মনোযোগের কেন্দ্রে থাকবে।
একসময় দ্বিতীয় পার্লামেন্টের খ্যাতি পাওয়া ডাকসু নির্বাচন এরই মধ্যে মূলধারার সংবাদপত্র, তাদের মাল্টিমিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ও সোশ্যাল মিডিয়ার বড় অংশ দখল করে নিয়েছে। টিভি টকশোতে ‘ডাকসু’র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নিয়ে জমজমাট বিতর্কের আয়োজন করা হচ্ছে। দর্শকরাও ভবিষ্যৎ রাজনীতির কর্ণধারদের মেধা ও চিন্তার পরিধি বিচার-বিশ্লেষণ করছেন গভীর নিবেশে। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় ডাকসু নির্বাচনের উত্তাপ মধ্য সেপ্টেম্বর কিংবা তার পরও থাকতে পারে।
ডাকসুসহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংসদের নির্বাচন আগামী জাতীয় নির্বাচনের ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে আলোচনা রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। জাতীয় নির্বাচনি ট্রেনের ‘টেস্ট রান’ হিসেবে দেখা যেতে পারে ডাকসুর নেতৃত্ব নির্ধারণী ভোটাভুটিকে। আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফলে তারুণ্যের ভোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে প্রবল মত বিদ্যমান। ২০০৮ সালের পর তরুণরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাননি। এক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, নতুন ভোটার তালিকায় প্রায় ৪০ শতাংশের মতো রয়েছেন, যারা প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন। বস্তুত তরুণরাই পরবর্তী রাষ্ট্র ক্ষমতানির্ধারণী সংসদ নির্বাচনে প্রধান নিয়ামক শক্তি।
বিভিন্ন জরিপের ফলাফলে বলা হচ্ছে, প্রায় অর্ধেক ভোটার এখনো মনস্থির করেননি, আগামী নির্বাচনে কোন দলকে ভোট দেবেন। সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা বা এখনই মত জানাতে বিরত থাকা ভোটারদের সিংহভাগই তরুণ। ডাকসুসহ অন্যান্য ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে প্রভাবক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ডাকসু নির্বাচনে প্রায় ৪০ হাজার তরুণ শিক্ষার্থী তাদের নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন। গত বছরের আগস্টে জীবনবাজি রেখে স্বৈরাচারের বন্দুকের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিল এই ৪০ হাজার তরুণ তুর্কি। ডাকসুর ব্যালটে তাদের দেওয়া রায় জাতীয় নির্বাচনের ১২ কোটি ৭৮ লাখ ভোটারের ওপর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলতে পারে।
স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৪ বছরে ডাকসুর ৫৪টি নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে মাত্র আটটি। ২০১৯ সালে যে নির্বাচনটি হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলার সুযোগ রয়েছে। সে নির্বাচন অনেকটা নিয়ন্ত্রিত ও পাতানো ছিল। ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন ডাকসু ফাংশনাল ছিল না। সেই অর্থে ১৯৯০ সালের পর ডাকসুতে শিক্ষার্থীদের মতামত প্রতিফলিত হওয়ার মতো কোনো ভোট হয়নি। প্রতিনিধিত্বশীল ডাকসু গঠনের সুযোগ এসেছে ৩৫ বছরের মাথায়।
এবারের ডাকসু নির্বাচন নানা দিক থেকেই আলাদা গুরুত্ববহন করছে। অনেকগুলো রেকর্ডও গড়তে যাচ্ছে। এক বছর আগে ছাত্র-জনতার তীব্র গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ও পলায়নের পর এটি প্রথম কোনো নির্বাচন। পেশিশক্তির দাপট ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে দেড় দশক ধরে শিক্ষার্থীদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে ওঠা ছাত্রলীগমুক্ত ক্যাম্পাসে এবারের ডাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে। মুজিববাদী ছাত্রলীগের অংশগ্রহণ ছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশে এটি প্রথম নির্বাচন। আবার ক্ষমতাসীন সরকার-সমর্থিত কোনো প্যানেল না থাকাও এ নির্বাচনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
এবারের নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দল-সমর্থিত ছাত্রসংগঠনগুলো কোনো রাখঢাক ছাড়াই স্বাচ্ছন্দ্যে অংশ নিচ্ছে। দীর্ঘ সময় তারা নিজ পরিচয়ে ক্যাম্পাসে দাঁড়াতেই পারেনি। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলও এবার সবচেয়ে অনুকূল পরিবেশে লড়ছে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রলীগকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে না। এ নির্বাচনে ভিপি পদে রেকর্ডসংখ্যক ৪৮ জন লড়ছেন। প্রার্থীর সংখ্যাও ইতিহাসে সর্বাধিক। সব হল সংসদে এবার প্যানেল দিতে পারেনি বা দেয়নি কোনো ছাত্রসংগঠন। ১৮টি হলের মধ্যে ১৪টিতে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিয়েছে ছাত্রদল। শিবিরসহ অন্যরা কৌশলী ভূমিকা নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থন দিচ্ছে। তারা হলকে রাজনীতির প্রভাবমুক্ত রাখার কথা বলছে।
ডাকসুর ইতিহাসে নজর দিলে দেখা যাচ্ছে, ১৯২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) যাত্রা শুরু করে। জন্মের পর থেকে ৩৭ বার নির্বাচন হয়েছে। ডাকসুর প্রথম ভিপি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন যথাক্রমে মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ও যোগেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত। ১৯২৮-২৯ সেশনে ভিপি ও জিএস নির্বাচিত হন এ এম আজহারুল ইসলাম এবং এস চক্রবর্তী, ১৯২৯-৩২ সময়কালে রমণী কান্ত ভট্টাচার্য ও কাজী রহমত আলী, ১৯৪৭-৪৮ সেশনে অরবিন্দ বোস এবং গোলাম আযম, ১৯৫৩-৫৪ সালে এস এ বারী এটি ও জুলমত আলী খান।
এরপর ধারাবাহিকভাবে ভিপি ও জিএস নির্বাচিতদের মধ্যে রয়েছেন নিরোদ বিহারী নাগ এবং আব্দুর রব চৌধুরী, একরামুল হক ও শাহ আলী হোসেন, বদরুল আলম এবং মো. ফজলী হোসেন, আবুল হোসেন ও এ টি এম মেহেদী, আমিনুল ইসলাম তুলা এবং আশরাফ উদ্দিন মকবুল, বেগম জাহানারা আখতার ও অমূল্য কুমার, এস এম রফিকুল হক এবং এনায়েতুর রহমান, শ্যামা প্রসাদ ঘোষ ও কে এম ওবায়েদুর রহমান, রাশেদ খান মেনন এবং মতিয়া চৌধুরী, বোরহান উদ্দিন ও আসাফুদ্দৌলা, ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী এবং শফি আহমেদ, মাহফুজা খানম ও মোরশেদ আলী, তোফায়েল আহমেদ এবং নাজিম কামরান চৌধুরী, আ স ম আব্দুর রব ও আব্দুল কুদ্দুস মাখন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সবসময় শাসক দল-সমর্থিতদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের আটটি ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল সরকার-সমর্থিতদের জন্য সুখকর হয়নি। ১৯৭০ সালের নির্বাচন ও ২০১৯ সালের এক তরফা নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন ছাড়া আওয়ামী লীগের সহযোগী ছাত্রসংগঠন মুজিববাদী ছাত্রলীগ ডাকসু নির্বাচনে জয় পায়নি। ১৯৭২-৭৯ সময়কালে ডাকসুর ভিপি ও জিএস পদে দায়িত্ব পালন করেন ছাত্র ইউনিয়নের মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও মাহবুব জামান। ১৯৭৩ সালের নির্বাচন ভন্ডুল হয়ে গিয়েছিল। ১৯৭৯, ১৯৮০ ও ১৯৮২ সালে হয়েছিল ডাকসু নির্বাচন। প্রথম দুটি নির্বাচনে যথাক্রমে জাসদ-ছাত্রলীগের এবং বাসদ-ছাত্রলীগের প্রার্থী হয়ে ভিপি ও জিএস পদে জিতেছিলেন মাহমুদুর রহমান মান্না ও আখতারুজ্জামান। উল্লিখিত তিনটি নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও জয় পায়নি।
১৯৮২ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ১৯৮৯ পর্যন্ত ভিপি ও জিএস পদে যথাক্রমে দায়িত্ব পালন করেন আখতারুজ্জামান ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। ১৯৮৯-৯০ সেশনে দায়িত্ব পালন করেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ এবং মুশতাক আহমেদ। এ নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবির অংশগ্রহণ করলেও জয়ী হতে পারেনি। ১৯৯০ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ১৯৯০-৯১ সেশনের জন্য ভিপি ও জিএস নির্বাচিত হন ছাত্রদলের আমানউল্লাহ আমান এবং খায়রুল কবির খোকন। এজিএস নাজিম উদ্দিন আলম। এরপর ২০১৯ সাল পর্যন্ত আর ডাকসু নির্বাচন হয়নি। সর্বশেষ ২০১৯ সালের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে ছাত্র অধিকার পরিষদের নুরুল হক নুরকে ভিপি পদ দিয়ে বাকি সব পদে ছাত্রলীগের রব্বানী (জিএস), সাদ্দামসহ (এজিএস) ২৩ প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যেখানে প্রতিবছর ডাকসু নির্বাচন হওয়ার কথা, সেখানে বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে মাত্র আটবার সেই নির্বাচন হয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ধূমায়িত হলেও নির্বাচন আদায়ে বড় ধরনের আন্দোলন দেখা যায়নি। তবে ২০১২ সালে ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে উচ্চ আদালতে একটি রিট হয়েছিল। ২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চের যুগান্তকারী আদেশে ডাকসু নির্বাচনের পথ সুগম হয়। ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। এই নির্দেশ বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার জন্য পুলিশ বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়। সে আদেশ প্রতিপালনে ২০১৯ সালের পাতানো নির্বাচন হয়।
ডাকসু, রাকসু, জাকসুসহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারা জাতীয় রাজনীতিতে উজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছেন। সাড়ে ৩ দশক ধরে ডাকসুসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্বের শূন্যতা তৈরি হয়েছে। যার ফল হিসেবে দেখা গেছে বিগত পার্লামেন্টগুলোয় ব্যবসায়ীদের আধিক্য। ৫৪ বছরে ৪৬টি নির্বাচন না হওয়ায় অন্তত ১০০ জন নেতা থেকে বঞ্চিত হয়েছে দেশ। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নেতৃত্ব উঠে না আসায় জাতীয় রাজনীতিতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আবার ছাত্রদের প্রতিনিধিত্বশীল সংসদ না থাকায় শিক্ষাঙ্গন হয়ে উঠেছে পেশিশক্তির দাপট ও সন্ত্রাসের লীলাভূমি। নির্বাচন হলে যেহেতু ভোটের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে ধরনা দিতে হয়, সে কারণে ছাত্রসংগঠনের নেতারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাধ্য হয়ে হলেও সংযত ও পরিশীলিত আচরণ করেন। গণরুমের বিভীষিকা ও রুমে রুমে টর্চার সেলের ভয়ানক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হতো না।
এবারের ডাকসু নির্বাচনে শেষ হাসি কে হাসবে, তার পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন। পাঁচটি প্যানেলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সীমাবদ্ধ থাকবে বলে বলা হলেও প্রধান তিনটি পদের লড়াইটা শেষ পর্যন্ত দ্বিমুখী হয়ে যেতে পারে। ছাত্রদল ও শিবিরের মধ্যে লড়াই জমে উঠেছে এরই মধ্যে। ছাত্রদলের ভিপি পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের আবু সাদিক কায়েম গণঅভ্যুত্থানের উজ্জ্বল মুখ। তাদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখছেন অনেকে। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, একপেশে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা কম। গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আবদুল কাদের, স্বতন্ত্র উমামা ফাতেমাও ভিপি পদে মূল্যায়নের প্রত্যাশা করছেন। জিএস পদে ছাত্রদলের শেখ তানভীর বারী, শিবিরের এস এম ফরহাদ, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আবু বাকে মজুমদার, বামজোটের মেঘমল্লার বসুরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
তবে এবার প্যানেল ধরে ভোট না-ও পড়তে পারে। ব্যক্তির আচার-আচরণ, মেধা, গণঅভ্যুত্থান ও শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ভূমিকা ইত্যাদি ব্যালটে প্রতিফলিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ৪০ হাজার ভোটারের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ রয়েছে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের কট্টর অনুসারী। তাদের ভোট কোন বাক্সে পড়বে, তা স্পষ্ট হতে আরেকটু সময় লাগবে। জুলিয়াস সিজার নামের এক ছাত্রলীগ নেতা (যিনি সংগঠনটি থেকে এসএম হলের জিএস হয়েছিলেন) ভিপি পদে প্রার্থী থেকে যাওয়ায় তাকে ঘিরে আলোচনা হচ্ছে। জুলাই অভ্যুত্থানে সন্ত্রাসে জড়িত থাকার অভিযোগে তার প্রার্থিতা বাতিলের দাবি করা হলেও তা অগ্রাহ্য হয়েছে। ছাত্রলীগ সমর্থকদের ভোট বামপন্থিদের বাক্সে পড়লে তারাও প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে।
ছাত্রলীগমুক্ত ক্যাম্পাসে বৃহত্তম ছাত্রসংগঠন বিবেচনা করা হয় বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলকে। ডাকসুর ইতিহাসে সংগঠনটি প্রথমবারের মতো সাফল্য পায় ১৯৯০ সালে। ভিপি আমান উল্লাহ আমান ও জিএস খায়রুল কবির খোকনের উত্তরসূরি হিসেবে ডাকসুর হাল ধরার স্বপ্ন দেখছেন আবিদুর রহমান খান ও শেখ তানভীর বারী। নতুন বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ তাদের কীভাবে মূল্যায়ন করে, তা দেখার প্রতীক্ষায় রয়েছে রাজনীতিসচেতন মানুষ। ডাকসু নির্বাচনে ইসলামপন্থিদের অংশগ্রহণ ও সাফল্যের রেকর্ড কম। পাকিস্তান আমলে গোলাম আযম (পরে জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম আযম), নেজামে ইসলামীর মওলানা ফরিদ আহমেদ, মুসলিম লীগের জুলমত আলী খান জয় পেয়েছিলেন। এবারে প্রেক্ষাপট ভিন্ন। তুলনামূলক অনুকূল মাঠে লড়ছে শিবির। এক বছর ধরেই তারা মাঠ প্রস্তুত করেছে বলে শোনা যাচ্ছে। আবু সাদিক কায়েমরা গোলাম আযমের উত্তরসূরি হতে পারবেন কি না—তা দেখার জন্য ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট