
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার শেরপুর ইউনিয়নের মেরাকোনা আছিরুন্নেছা এলাহি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি বিক্রি করে দিয়েছেন বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ফাতেমা খাতুন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এ ঘটনায় জবাবদিহির চেয়ে উল্টো দম্ভোক্তি করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তিনি বলেন, ‘আমার চাকরিও খেতে পারবেন না, বেতনও বন্ধ করতে পারবেন না। আমার ক্রয়কৃত সম্পত্তি আমি বিক্রি করেছি।’
জানা গেছে, ১৯৭৪ সালে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় ৫০ শতক জমির উপর মেরাকোনা আছিরুন্নেছা এলাহি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। বিদ্যালয়টি ২০১৩ সালে জাতীয়করণ (সরকারিকরণ) হয়। এরপর বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ফাতেমা খাতুন বিদ্যালয়ের জমি নিজের নামে নামজারি করে ২৫ শতক জায়গা বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ ওঠে।
বিষয়টি জানার পর নান্দাইল উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফজিলাতুনেছা বিদ্যালয়ের কাগজপত্র চেয়ে ফাতেমা খাতুনকে তলব করেন। তখনই তিনি উত্তরে বলেন, ‘আমার চাকরিও খেতে পারবেন না, বেতনও বন্ধ করতে পারবেন না। আমি আমার ক্রয়কৃত জমি বিক্রি করেছি।’ শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, বিদ্যালয়ের কাগজপত্র জমা না দিলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন আব্দুল মালেক মাস্টার। তবে তিনি নিজের জমিতে বিদ্যালয় নির্মাণ না করে প্রতিবেশী নূর হোসেন ব্যাপারীর জমিতে তা স্থাপন করেন। পরবর্তীতে নূর হোসেন ব্যাপারীর দুই ছেলে আশ্রব আলী ও জাফর আলী নিজেদের নামে জমিটি নামজারি করে নেন। তবুও আব্দুল মালেক ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে বিদ্যালয়টি রেজিস্ট্রার ও পরে সরকারিকরণ করান। বিদ্যালয়ের নামে জমি রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি কখনও।
সরকারি ভবন নির্মাণের পর দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ের দখলে থাকা ৫০ শতক জমির মধ্যে ২৫ শতক জায়গা বিক্রি করে দেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ফাতেমা খাতুন। তিনি স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি রফিকুল ইসলামের কাছে জমিটি বিক্রি করেন। তার দাবি, চাচা শ্বশুর জাফর আলীর কাছ থেকে জমি কিনে নিজ নামে নামজারি করে তা বিক্রি করেছেন। বাকি ২৫ শতক জমিও শ্বশুর আশ্রব আলীর নামে রয়েছে।
বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষিকা জেসমিন আক্তার বলেন, ‘আমি সাত বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছি। আমার কাছে বিদ্যালয়ের কোনো কাগজ নেই। বোর্ডে ৪১ শতক লেখা থাকলেও বাস্তবে দখলে ২৫ শতক জমি রয়েছে। সেটিরও কাগজ নেই। যে কাগজ আছে, তা আমার শ্বশুর আশ্রব আলীর নামে।’
বিদ্যালয়ের মালিকানা অভিযোগ জানান স্থানীয়রাও, প্রধান শিক্ষিকা জেসমিন আক্তার ও সহকারী শিক্ষিকা ফাতেমা খাতুন দুই জা মিলে বাকি জমি বিক্রির চেষ্টা করছেন। এতে বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তিনজন প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব পালন করলেও কেউ বিদ্যালয়ের জমি সংরক্ষণে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেননি।
এ বিষয়ে শিক্ষক আব্দুল মালেক বলেন, ‘প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে জায়গাটি আশ্রব আলীর কাছ থেকে এওয়াজ বদলনামা দলিল করে নিয়েছিলাম। এখন যদি তারা বলে বিদ্যালয়ের নামে জায়গা নেই, তাহলে নেই! আর যদি তারা বিক্রি করে দেয়, তবে আমার কিছু করার নেই।’
এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফজিলাতুনেছা বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বিদ্যালয়ের কাগজপত্র নেই। প্রধান শিক্ষিকাকে বলেছি কাগজপত্র আনতে। যদি কাগজপত্র দেখাতে না পারে, তাদের বিরুদ্ধে শোকজ দেওয়া হবে। সহকারী শিক্ষিকা ফাতেমা জমি বিক্রির কথা স্বীকার করেছেন।’