
বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত করেনি। যারা নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী সবাই যার যার এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মনোনয়ন নিশ্চিত করার জন্যও যোগাযোগ রাখছেন। যদিও এরই মধ্যে বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তার পরেও আনুষ্ঠানিক চিঠি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কারোর মনোনয়নই নিশ্চিত নয়। এদিকে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সব আসনে তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করে সংশ্লিষ্ট এলাকায় কাজ করার জন্য প্রার্থীদের নির্দেশ দিয়েছে।
বিএনপির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংসদীয় আসনগুলোতে প্রার্থী বাছাইয়ের প্রস্তুতি হিসেবে ইতোমধ্যে একাধিক জরিপ সম্পন্ন করা হয়েছে। গত দেড় দশকে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটিতে অংশ নিলেও দুটি নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। এই দীর্ঘ সময়ে দলটির নেতা-কর্মীদের আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থাকলেও নির্বাচনি চ্যালেঞ্জে ঘাটতি রয়েছে। প্রার্থী নির্বাচনে এবার সেই দিকটিও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতি আসনে ১০-১২ জন করে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে দৌড়ঝাঁপে নেমেছেন। এরই মধ্যে নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় তারা গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। পাশাপাশি দলীয় মনোনয়ন লাভে তাঁরা কেন্দ্রেও দৌড়ঝাঁপ করছেন। এ ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা, দলীয় নেতাদের মতামত, দলের জন্য ত্যাগ-তিতিক্ষা, বিগত দিনের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা, দুঃসময়ে নেতা-কর্মীদের পাশে থাকা, সততা, শিক্ষাগত যোগ্যতাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এসব মানদণ্ড যাচাই করেই বিএনপি প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জানতে চাইলে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রার্থীর জনপ্রিয়তাসহ যাঁকে মনোনয়ন দিলে আসনটি নিশ্চিত হবে, তাঁকেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে। কারণ সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় একটা আসন জয়লাভের ওপর সরকার গঠন নির্ভর করে। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, দলের চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির বিশেষ সহকারী শেখ রবিউল আলম বলেন, ফ্যাসিস্টমুক্ত পরিবেশে ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে মানুষ উদগ্রীব হয়ে আছে। বিএনপি আন্দোলন-সংগ্রাম ও সংগঠন পরিচালনা করে নির্বাচন করার জন্য। ফলে নির্বাচনের জন্য আলাদা করে প্রস্তুতি নেওয়ার কিছু নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু বিএনপির নয়, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত প্রায় সব দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরাই নির্বাচনি এলাকার ভোটারদের মাঝে নিজেদের জনপ্রিয়তা প্রমাণে সব ধরনের তৎপরতা শুরু করেছেন। প্রার্থীরা মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ, উঠান বৈঠকসহ নির্বাচনি গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপির সমমনা দলগুলো সর্বোচ্চসংখ্যক আসনে ছাড় পেতে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজনসহ বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে দরকষাকষি শুরু করেছে। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর মধ্য থেকে এবার যাঁদের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, শুধু তাঁদেরই আসন ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে ঠিক কতটি আসনে ছাড় দেওয়া হবে, তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিএনপির দীর্ঘদিনের রাজপথের মিত্রদল জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের আহ্বায়ক ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তাঁর নির্বাচনি এলাকা নড়াইল-২-এ নিয়মিত হাটবাজার থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লায় উঠান বৈঠক করছেন। তিনি জানান, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপি জোটগতভাবে যত কর্মসূচি দিয়েছে সব কর্মসূচি পালন করেছেন। তিনি আশাবাদী মিত্রদলগুলোকে মূল্যায়ন করলে তাঁর আসনে ছাড় দেওয়া হবে।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমরা ৩০০ আসনের সব আসনেই প্রাথমিক প্রার্থী বাছাই চূড়ান্ত করেছি। কিন্তু এটা অফিশিয়াল ডিক্লারেশন নয়। আসনটা দেওয়া হলেও এটা জামায়াতের অধীন। যে কোনো সময় যে কোনো প্রয়োজনে জামায়াত সিদ্ধান্ত দিলে যে কোনো প্রার্থীকে আসন ছেড়ে দিতে বলা হতে পারে।’
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব জালালুদ্দিন বলেন, আসন্ন নির্বাচনে আমরা চেষ্টা করব সব দল ও মতকে ঐক্যবদ্ধ করে জোটবদ্ধ অংশ নেওয়ার। তবে সংস্কার এবং বিচারের কার্যক্রম দৃশ্যমান হওয়ার পরই নির্বাচন ব্যবস্থা করা জরুরি। এর জন্য যদি নির্বাচন আগামী বছরের এপ্রিলে হয় আমাদের আপত্তি নেই। ফেব্রুয়ারিতে হলেও আপত্তি থাকবে না। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুখপাত্র গাজী আতাউর রহমান বলেন, প্রার্থীকেন্দ্রিক প্রচারণা আমরা এখনো শুরু করিনি। যদিও আমাদের প্রার্থী প্রস্তুত রয়েছেন। এখনো অতীত বন্দোবস্ত রয়েছে। এর মধ্যে যদি নির্বাচন হয়ে যায়, তাহলে শুধু ক্ষমতার হাতবদল হবে। মৌলিক কোনো পরিবর্তন হবে না। আর জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা পুরোটাই ব্যর্থ হবে। অতীতে যেসব রাজনৈতিক দল দেশ চালিয়েছে তাদের নিয়ে মানুষ হতাশ।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, নির্বাচন প্রস্তুতির কাজ আস্তে আস্তে শুরু হচ্ছে এবং কৌশল ঠিক করা হচ্ছে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, রাজনৈতিক দলের সব সময়ই এক ধরনের নির্বাচনি প্রস্তুতি থাকে। জোটগতভাবে নাকি সমঝোতা করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব, এ বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি, নির্বাচন এগিয়ে এলে আলোচনা হবে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। মনোনয়ন চূড়ান্ত হচ্ছে।