আমান আব্দুল্লাহ (Aman Abdullah)
"শহীদ জিয়ার আদর্শ" ফ্রেইজটা শুনলেই আমার মুচকি হাসে আসে। "সানি লিওনির সতীত্ব" শুনলে যে হাসিটা আসার কথা। পার্থক্য হলো, সানি লিওনির ক্ষেত্রে হাসি আসে সানি লিওনিকে নিয়ে। আর জিয়াউর রহমানের ক্ষেত্রে হাসি আসে যারা এই আদর্শের কথা বলে, তাদেরকে নিয়ে।
শেখ মুজিবের আদর্শ কি? আমরা সবাই জানি। স্বজনপ্রীতি, লুটপাট, নির্যাতন। পরিস্কার বিষয়। তার আদর্শের অনুসারী মুজিববাদের লোকজনের মাঝে এ নিয়ে কোন দ্বিমুখীতা নাই। তারা তাদের আব্বা মজু গুন্ডার আদর্শের অনুসারী।
জিয়ার আদর্শ কি? তার আদর্শের দাবীদার লোকজন কি আসলেই তার অনুসারী? জিয়া কি টিভি স্টেশন বা টেম্পু স্ট্যান্ড দখল করেছিলেন?
আমি সাদাসিধা মস্তিস্কের মানুষ। জিয়ার আদর্শ বলতে বুঝি একটাই, মেরিটোক্রেসি। যে দাবীতে চব্বিশে এসেও মানুষ জীবন দিয়েছে। যোগ্য হলে রাজাকার হলেও ব্যাপার না। নিয়ে এসে মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে দিয়েছেন। জিয়ার এই আদর্শ কতটা মজবুত ছিলো তার নমুনা হলো, এ আদর্শের অন্যতম কঠিন সাইড ইফেক্টটা তিনি ততোধিক শক্তভাবে চর্চা করেছিলেন। যিরো স্বজনপ্রীতি। মেরিটোক্রেসিতে বিশ্বাসী মানুষজনও পরিবার পরিজনকে সামান্য একটু সমর্থন দেয়। এটা স্বাভাবিক মানবিক দুর্বলতা। অনেক সময় কিছুটা অধিকারও হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এক্ষেত্রে এই ভদ্রলোক মানুষ ছিলেন না। ছিলেন অমানুষ। জিয়া পরিবারতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন অথবা পরিবারতন্ত্রের চর্চা করতেন, শত্রুও বলতে পারবে না। জিয়া বেঁচে থাকলে তারেক রহমানের কপালে খারাবি ছিলো। তালি দেয়া প্যান্ট পরেই বেচারাকে আজীবন দৌড়ের উপর থাকতে হতো।
তাহলে তিনি শেখ হাসিনা ডাইনিটাকে দেশে ফেরার অনুমতি দিয়েছিলেন কেন? আমার মনে হয় এখানে তিনি যুদ্ধের পরিকল্পনার মতো স্ট্রাটেজিক চিন্তা করেছিলেন। সম্ভবত তার প্ল্যান ছিলো, মাতারি কুটনি ডাইনিটা, তখন পর্যন্ত যে ছিলো অনভিজ্ঞ এবং অযোগ্য, দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিবে। তখনো তো জানার উপায় ছিলো না যে সে সাইকোপ্যাথ হয়ে গেছে। বিপরীতে তার নিজের নেতৃত্বে বিএনপি থাকবে। কয়েক বছরেই মানুষের সামনে পরিস্কার হবে কে যোগ্যতর। তখন আওয়ামী লীগ এমনিতেই দুর্বল হয়ে যাবে। শত্রুর জন্য খারাপ অপশন দেয়ার চালটা তিনি চেলেছিলেন। কিন্তু ভাড়ৎবাবু এসে ট্রাম্পের উপর যে ওভারট্রাম্প করবে, এইটা উনার হিসাবে মনে হয় ভালোভাবে ছিলো না।
জিয়ার আদর্শের সাথে সবচেয়ে বড় বেঈমানি করেছে তার কমরেডরা। জিয়ার লাশ কবরে যাওয়ার আগেই তারা ফিরে গেছে পরিবারতন্ত্রে। কারণ তাদের কেউ জিয়ার মতো আত্মবিশ্বাসী ছিলো না। এরা সবাই টিপিকাল বাঙ্গু গোলাম। সুতরাং জিয়ার বিধবা স্ত্রীকে নিয়ে এসে শিখন্ডী বানানোর চেষ্টা করেছে। খালেদা জিয়া নিজ যোগ্যতায় তাদেরকেও কিছুটা ওভারট্রাম্প করেছেন, সে অন্য আলোচনা। এবং আলটিমেটলি তাতে বাংলাদেশী রাজনৈতিক সংস্কৃতির ভালো কিছু হয়নাই।
তিপ্পান্ন বছরের প্রতিটা উত্থান পতন মনযোগ দিয়ে, সময় নিয়ে, সততার সাথে বিবেচনা করার চেষ্টা করলে দেখি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে একজনই ছিলেন। শুধু একজন না, তার ব্যাতিক্রম হওয়ার পরিধি অন্যদের সাথে এতো বিশাল যে, এইটাকে বলা যায় অলৌকিক একটা ঘটনা। জাতির জীবনে অথবা মানুষের জীবনেও, মিরাকল বারবার ঘটেনা। জিয়াউর রহমানের মতো কেউ বাংলাদেশে আর কোনদিন আসবে না। অসম্ভব। জিয়াকে ধারণ করার মতো জাতি আমরা না। জিয়ার মতো মানুষদেরকে দাঁড়াতে দেয়ার মতো শক্ত মাটি এই পলিমাটির উপদ্বীপে নাই। লেটস গেট রিয়েল। সামষ্টিকভাবে এখন আমাদের যে অবস্থা, আমরা কি এইরকম কোন নেতাকে একোমোডেট করতে পারবো?
সুতরাং যারা জিয়ার আদর্শের কথা বলে, স্বাভাবিকভাবেই তাদেরকে দেখে মুচকি হাসি আসে। তারা "শহীদ জিয়ার আদর্শ" বিক্রিবাটা করে আরো অনেকদিন খেয়ে পড়ে বেচেবের্তে থাকবে এই দেশে। এটা এই দেশে একটা প্রত্যাশিত বিষয়। যাকে বলে, এটাই বাস্তব। তবে জিয়া যে আদর্শের মানুষ ছিলেন, সেই আদর্শ আর যাই হোক, শুক্রানু বা ডিম্বানু পরিবাহিত কোন আদর্শ ছিলো না।