Image description
শ্রমবাজারে সম্ভাবনা শেষ মুহূর্তে আটকে যাওয়া ৭ হাজার ৯০০ কর্মীর যাওয়ার প্রক্রিয়া চলমান কৃষি, বাগান ও খনি খাতসহ ১৩ উপখাতে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের আবেদন গ্রহণ করা হবে : মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ফের উন্মুক্ত হলে ৩০ হাজার কর্মী যেতে পারবেন বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। গতকাল বুধবার রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণ ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে গত বছর ৩১ মে বন্ধ হয়ে যায় এই শ্রমবাজার।

আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা খেয়াল রাখছি, যাতে সিন্ডিকেট না হয়। আমরা এবারের মিটিংয়েও মালয়েশিয়া সরকারকে বলেছি সব রিক্রুটিং এজেন্সিকে যেন কর্মী পাঠানোর সুযোগ দেয়। কিন্তু ওরা সব সময় বলে, অন্য দেশের কম রিক্রুটিং এজেন্সি। আমাদের অনেক রিক্রুটিং এজেন্সি। তারপর আমরা বলেছি, এবার ৩০ হাজারের মতো কর্মী যেতে পারে।

সেটা বোয়েসেলের মাধ্যমে পাঠানো হোক।’ তবে বাজার উন্মুক্ত হওয়ার বিষয়ে কোনো স্পষ্ট বক্তব্য আসিফ নজরুলের পক্ষ থেকে আসেনি।

এদিকে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগে কলিং ভিসার কোটা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত উন্মুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি সাইফুদ্দিন নাসিউশন ইসমাইল মঙ্গলবার এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

মালয়েশিয়ার প্রায় সব গণমাধ্যম বিষয়টি প্রকাশ করেছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, কৃষি, বাগান ও খনি খাতসহ মোট ১৩টি উপখাতে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের আবেদন গ্রহণ করা হবে।

এর মধ্যে সার্ভিস সেক্টরের হোলসেল অ্যান্ড রিটেইল, ল্যান্ড ওয়্যারহাউস, সিকিউরিটি গার্ডস, মেটাল অ্যান্ড স্ক্র্যাপ ম্যাটেরিয়ালস, রেস্তোরাঁ, লন্ড্রি, কার্গো ও বিল্ডিং ক্লিনিং খাতে শ্রমিক নিয়োগের সুযোগ থাকছে।

তিনি বলেন, নির্মাণ খাত, অর্থাৎ কনস্ট্রাকশন সেক্টরে নিয়োগ কেবল সরকারি প্রকল্পে সীমাবদ্ধ থাকবে, আর উৎপাদন (ম্যানুফ্যাকচার) খাতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে মালয়েশিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (এমআইডিএ) অধীন নতুন বিনিয়োগকে।

এবারের কলিং ভিসা/বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের আবেদনের সুযোগ শুধু খাতভিত্তিক অফিশিয়াল এজেন্সিগুলো পাবে।

আগের মতো কোনো এজেন্ট বা সরাসরি নিয়োগকর্তা স্বাধীনভাবে আবেদন করতে পারবে না। আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে তা অনুমোদন করবে ফরেন ওয়ার্কার্স টেকনিক্যাল কমিটি এবং পরে জয়েন্ট (যৌথ) কমিটি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এখন ২৪ লাখ ৬৭ হাজার ৭৫৬ জন শ্রমিকের কোটা চালু আছে, যা বছর শেষ (৩১ ডিসেম্বর-২০২৫) পর্যন্ত বহাল থাকবে। এরপর বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ সীমিত করে কেবল দেশের মোট জনশক্তির ১০ শতাংশ পর্যন্ত অনুমতি দেওয়া হবে। তবে এ কোটায় বাংলাদেশ কতজন আবেদন করতে পারবে, তা জানায়নি দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

বাজার উন্মুক্তের বিষয়ে আসিফ নজরুলের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বক্তব্য না থাকলেও গত বছরের শেষ মুহূর্তে আটকে যাওয়া সাত হাজার ৯০০ কর্মী যাওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ থেকে যেতে না পারা কর্মীদের মধ্যে সাত হাজার ৯০০ কর্মী নেবে। বোয়েসেলের মাধ্যমে কর্মীদের যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তবে আমাদের প্রায় ১৮ হাজার কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারেনি। কিন্তু যে সাত হাজার ৯০০ কর্মীর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তাঁদের ভিসা-টিকিট সবই ছিল। আর বাকি কর্মীদের ভিসা হয়েছে একদম শেষ সময়। ফলে তাঁদের বিমানের টিকিট করা সম্ভব হয়নি। এখন শেষ সময় ভিসা হয়েছে—এটা তো আর মালয়েশিয়া দেখবে না। সে জন্য বাকি কর্মীদের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।’

২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর উদ্যোগে দেশটির সরকারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে তৎকালীন সরকার। সে সময় বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের (আরএল-৫৪৯) স্বত্বাধিকারী ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন এবং মালয়েশিয়ার আইটি কম্পানি বেসটিনেটের মালিক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ান নাগরিক দাতোশ্রি আমিন নুরের নেতৃত্বে অনলাইন পদ্ধতি এফডব্লিউসিএমএসের মাধ্যমে ২৫ সদস্যের একটি সিন্ডিকেট তৈরি
করা হয়।

জনশক্তি রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা বাংলাদেশ থেকে যত কর্মী মালয়েশিয়ায় গেছেন, প্রত্যেকের কাছ থেকে এক লাখ ৫২ হাজার টাকা করে বাধ্যতামূলকভাবে সব খরচের অতিরিক্ত টাকা চাঁদা হিসেবে নিয়েছে। ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের ৩১ মে পর্যন্ত চার লাখ ৯৪ হাজার ১৮০ জন কর্মী মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন। প্রতি কর্মীর কাছ থেকে সাড়ে চার-পাঁচ লাখ টাকা করে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই হিসাবে প্রায় ২৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আর চাঁদার নামে কর্মীপ্রতি এক লাখ ৫২ হাজার টাকা হিসাব ধরলেও প্রায় সাত হাজার ৫০০ কোটি টাকা তারা চাঁদা হিসেবে নিয়েছে।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের সময়ে গুটিকয়েক রিক্রুটিং এজেন্সির বেপরোয়া দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে গত বছরের ৩১ মে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যায়। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, সে সময় ওই সিন্ডিকেটের কারণে ১৭ হাজার ৭৭৭ জন কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারেননি।