
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) তিন দশকেরও বেশি সময় পর কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৯৮৯ সালের পর থেকে বন্ধ থাকা রাকসু নির্বাচন আবারও ফিরছে ২০২৫ সালে। নির্বাচন নিয়ে এখন সরগরম ক্যাম্পাস, শিক্ষার্থীদের আড্ডায় রাকসু নিয়ে বইছে আলোচনার ঝড়। তবে সময়ের ব্যবধানে রাকসুর সর্বশেষ নির্বাচনের স্মৃতি যেন ইতিহাসের পাতায় চাপা পড়ে গেছে।
১৯৮৯ সালের আবহ
১৯৮৯ সালের একদম শেষ সময়। রাজনীতি নিয়ে উত্তাল, সারাদেশে আন্দোলনের ঝড়। সেই উত্তপ্ত সময়েও অনুষ্ঠিত হয়েছিল সর্বশেষ রাকসু নির্বাচন। সেদিন ভোটারের লম্বা লাইন, প্রচারণায় মুখর ক্যাম্পাস—সব মিলিয়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল।
রাকসু তখন শুধু একটি ছাত্র সংসদ ছিল না, ছিল রাজশাহীর ছাত্রসমাজের দাবি-দাওয়ার কেন্দ্রবিন্দু। ১৯৮৯ সালের সেই নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছিলেন এক ঝাঁক তরুণ নেতা, যারা পরবর্তীতে জাতীয় রাজনীতিতেও রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
সর্বশেষ রাকসু নির্বাচনে নির্বাচিত যারা
সর্বশেষ রাকসু নির্বাচনে (১৯৮৯) সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী (বর্তমানে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব) এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) রুহুল কুদ্দুস বাবু নির্বাচিত হন। এছাড়া, উপ সহ সভাপতি (প্রভিপি) পদে মো. আব্দুল কাদের সরকার, সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) আলমগীর হোসেন, ক্রীড়া সম্পাদক মো. সাকিলুর রহমান সোহাগ, সহ-ক্রীড়া সম্পাদক মুস্তাফিজুর আলি খান পাপ্পু, সাহিত্য সম্পাদক মো. শামসুল ওয়াসে, সহ-সাহিত্য সম্পাদক মো. আব্দুল মান্নান, প্রমোদ সম্পাদক আজম শান্তনু, সহ-প্রমোদ সম্পাদক ইমামুল আজম শাহী, সাধারণ কক্ষ সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম, সহ-সাধারণ কক্ষ সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান ফসি, মহিলা সম্পাদক বৃত্তা রায় দীপা, সহ-মহিলা সম্পাদক মাহবুবা ইয়াসমিন রিতা, পত্রিকা সম্পাদক জাকিরুল হক টিটন, সহ-পত্রিকা সম্পাদক জগদীশ রায় জনি, সমাজসেবা সম্পাদক মো. করিম শিকদার ও সহ-সমাজসেবা সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন আসলাম সরকার।
১৯৮৯ সালের পর থেকে রাকসু নির্বাচন যেন হারিয়ে যাওয়া এক অধ্যায় হয়ে গিয়েছিল। বর্তমান শিক্ষার্থীদের কাছে সেটি শুধুই ইতিহাসের অংশ। তবে এবার নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে সেই ইতিহাস আবারও জাগ্রত হবে, ছাত্ররাজনীতি আবারও যুক্ত হবে নতুন অধ্যায়।
বর্তমান শিক্ষার্থীদের অনেকেই জানেন না রাকসুর শেষ নির্বাচনে কারা নেতৃত্বে এসেছিলেন। ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, সর্বশেষ রাকসু নির্বাচন হয়েছিল ৩৫ বছর আগে। দীর্ঘ এই ব্যবধানের কারণে বর্তমান শিক্ষার্থীরা আগের নেতৃত্ব, ভিপি বা রাকসুর ইতিহাস সম্পর্কে তেমন জানে না। তথ্যপ্রবাহের অভাবেই এ শূন্যতা তৈরি হয়েছে। তাই প্রশাসনের উচিত আর্কাইভ, নথিপত্র ও প্রচারণার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে রাকসুর ইতিহাস ও প্রাসঙ্গিক তথ্য সহজভাবে তুলে ধরা।
রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রফেসর ড. আমজাদ হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের হাতে রাকসুর একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে দেব। এতে থাকবে কারা নির্বাচিত হয়েছিলেন, কতবার নির্বাচন হয়েছে এবং এবারের নির্বাচনটি কততম।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সংগঠন সমমনা নয়, তাই এতদিনে সবার কাছে রাকসু সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তবে কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সব ছাত্র সংগঠনকে একই প্ল্যাটফর্মে আনার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে ভোটার তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে। তবে রাকসুর ইতিহাস প্রচারের দায়িত্ব মূলত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।
দীর্ঘ সময় পর রাবি ক্যাম্পাস আবারও সাক্ষী হতে যাচ্ছে নতুন এক ইতিহাসের। আসছে ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বহুল প্রত্যাশিত রাকসু নির্বাচন।