
জুলাই সনদে মতামত জানানো সময় বাড়ানো হয়েছে। আগামী শুক্রবার (২২ আগস্ট) পর্যন্ত মতামত জমা দেওয়া যাবে।
বুধবার (২০ আগস্ট) জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জনসংযোগ বিভাগ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ‘আপনাদের অবগতির জন্য জানানো যাইতেছে, জুলাই সনদের মতামত জমাদানের সময় ২২ আগস্ট বিকেল ৩টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ধন্যবাদ।’
এর আগে গত শনিবার রাতে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে বহুল আলোচিত ও প্রত্যাশিত জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫-এর সমন্বিত চূড়ান্ত খসড়া দলগুলোকে দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। মূলত সংস্কার কমিশনের বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাবের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দুপর্বের ধারাবাহিক আলোচনায় ৮৪টি বিষয়ে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়। সনদে বাস্তবায়নের ৮টি অঙ্গীকারনামা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার স্পষ্ট বর্ণনা উল্লেখ নেই। উল্লেখ্য, ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক মাস বাড়ানো হয়েছে। সনদ চূড়ান্তকরণ ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলতি মাসেই আবারও বৈঠক করার কথা রয়েছে।
ঐকমত্য কমিশন বলছে, সনদে এমন অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলো কোনো কোনো দল একমত হননি। সেসব বিষয়ে দলগুলো নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন। ওই সব বিষয়ও ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা ভিন্নমতের বিষয়গুলোও উল্লেখ করা হয়েছে জুলাই সনদের খসড়ায়।
প্রথম পর্বের আলোচনায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন, জেলা সমন্বয় কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক দলকে তথ্য অধিকার আইনের আওতায় আনা, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠা, আইনজীবীদের আচরণবিধি, গণহত্যা ও ভোট জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন, তথ্য অধিকার আইনের সংশোধন, দুর্নীতিবিরোধী কৌশলপত্র প্রণয়নসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা রয়েছে। দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় ২০টি মৌলিক সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে ১১টি বিষয়ে ভিন্নমতসহ ঐকমত্য হয়। আর ৯টি বিষয়ে ভিন্নমতসহ সিদ্ধান্ত হয়।
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, এই জুলাই জাতীয় সনদ একটি রাজনৈতিক ডকুমেন্ট। যেটি সব ঐকমত্যের ভিত্তিতেই তৈরি করা। আগামী সংসদের আগে কী প্রক্রিয়ায় আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি করা যাবে, সেটাই মূল প্রশ্ন। জুলাই সনদের আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি হলে সেটা নির্বাচনের আগে থেকেই বহাল হবে নাকি পরে বহাল হবে, সেটি নিয়েও বলবেন রাজনীতিবিদরা। আমরা শুধু বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রস্তাবনা তাদের কাছে তুলে ধরব।
বিএনপি বলছে অসামঞ্জস্য আছে
জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়ায় কিছু বিষয়ে বিএনপি অসামঞ্জস্য দেখছে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, এ বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে শিগগিরই মতামত জানানো হবে। গতকাল রোববার গণমাধ্যমকে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, গত শনিবার সন্ধ্যায় আমরা সনদের খসড়া হাতে পেয়েছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই মতামত জানাব। আপাতত মনে হচ্ছে কিছু বিষয়ে অসামঞ্জস্যতা আছে এবং কিছু বিষয় সঠিকভাবে উপস্থাপিত হয়নি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু কালবেলাকে বলেন, জুলাই সনদে ঐক্যের স্বার্থে বিএনপি ছাড় দিয়েছে এবং সহযোগিতা করেছে। এখন বাস্তবায়ন করা সরকারের দায়িত্ব। তিনি আরও বলেন, সনদকে সাংবিধানিক রূপ দিতে হলে সংসদে যেতে হবে; কিন্তু বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে যারা নানা দাবি তুলছে, তারা আসলে ব্যর্থ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করছে।
সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় : জামায়াত
জামায়াতে ইসলামী বলছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অবশ্য আগামী নির্বাচনের আগে সনদ বাস্তবায়ন না হলে আন্দোলনে নামারও ঘোষণা দিয়েছে দলটি। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ গতকাল কালবেলাকে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংস্কার প্রয়োজন এটা অন্তর্বর্তী সরকারেরই প্রতিশ্রুতি জাতির কাছে। যে কারণে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নাই। তিনি বলেন, এটা (সনদ) যেভাবে আলোচনার ভিত্তিতে নির্ধারিত হইছে। খসড়ায় সেই জিনিসগুলো কোনো ধরনের গ্যাপ আছে কি না, দেখতে হবে। অনেক সময় প্রিন্টিংয়েরও মিস্টেক (ছাপায়ও ভুল) হয়। ঐকমত্য কমিশনসহ সবাই মিলে কষ্ট পরিশ্রম করছে। অনেক সময় গেছে। এটার জন্য রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যদিয়ে একটি খসড়া তৈরি হইছে। এটা চূড়ান্ত করার পরে আইনি বাধ্য বাধকতার মধ্যে আনা হবে। তারপর বাস্তবায়ন করা হবে। এই ধাপগুলো এখনো অবশিষ্ট। সেগুলো না হলে তো, এটা লিখিত সনদ লাভ নেই। আইনি দলিল না হলে তো লাভ নেই। প্রথমে আইনি দলিল, দ্বিতীয় হচ্ছে এটার বাস্তবায়ন। এই দুটি যদি হয়, তাহলে এই দলিল বা আইনি ভিত্তি রচিত হয়ে জুলাই সনদ যদি কার্যকর হয় এবং তার ভিত্তিতে যদি নির্বাচন হয়, সংস্কারের বিষয়গুলো নিশ্চিত হবে। নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে, এটা আমরা আশা করছি। সরকার এটাই করবে আমরা প্রত্যাশা রাখি।