Image description
 
স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাকে আজীবন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সদস্য হিসেবে দেখতে চাওয়ার বিষয়টি নতুন করে সামনে আসায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন বাম গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট থেকে ডাকসু নির্বাচনে ভিপি প্রার্থী হওয়া শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি।
 
সমালোচনাকারীরা বলছেন, বামপন্থি আর হাসিনা ফ্যাসিস্ট সবাই একসূত্রে গাঁথা। ইমি এখনো ফ্যাসিস্ট হাসিনার লোক। নির্বাচনে তাকে সাধারণ ছাত্রসমাজ প্রত্যাখ্যান করবে। ফলে ডাকসু নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তে ইমির বিতর্কিত বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ায় ভোটেও প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
 
এদিকে স্বৈরাচার হাসিনার প্রশংসা করে দেওয়া ওই বক্তব্যের এখনো কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি ইমি।এমনকি ২০১৯ সালের এই বক্তব্য নিয়ে তিনি যে কিছুটা বিব্রত তার প্রমাণ মিলল আজকের (মঙ্গলবার) সংবাদ সম্মেলনে।এদিন ডাকসু নির্বাচনে ‘প্রতিরোধ পর্ষদের’ পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা উপলক্ষে ঢাবির মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করেন ভিপি পদপ্রার্থী ইমি ও জিএস প্রার্থী মেঘমল্লার বসু। 
 
প্যানেল ঘোষণার পর হাসিনাকে আজীবন ডাকসু সদস্য পদে দেখতে চাওয়ার বক্তব্যের বিষয়ে ইমির মতামত জানতে চান সাংবাদিকরা। কিন্তু ইমি এ বিষয়ে কোনো কথা না বলে চুপ ছিলেন।আবার কিছু একটা বলতে চাইলেও ইমিকে থামিয়ে মেঘমল্লার বসু বলেন, এ বিষয়ে তিনি কথা বলতে চান। 
 
পরে বসু বলেন, পর্ষদের সংবাদ সম্মেলনে আজ আমরা এ বিষয়ে কোনো কথা বলব না। সংবাদ সম্মেলনের পর ক্যাম্পাসে এ বিষয়ে ইমি আপাকে আপনারা আলাদা করে প্রশ্ন করতে পারেন। 
 
বসুর এমন কাণ্ডে হতবাক সাংবাদিকরা। কারণ তারা ইমিকে প্রশ্ন করেছেন। উত্তরটাও তার কাছ থেকেই আশা করেছিলেন।কিন্তু ইমির হয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন বসু। তার মানে কি তিনি ইমিকে ‘রক্ষা’ করতেই এমন কৌশল অবলম্বন করেছেন?
 
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ডাকসুতে নির্বাচিত হওয়ার পর ইমি এক টকশো-তে জানিয়েছিলেন পতিত স্বৈরাচার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আজীবন ডাকসু সদস্য হিসেবে দেখতে চাওয়ার কথা। 
 
সেবার এই প্রস্তাব উত্থিত হওয়ার পর থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছিলেন তৎকালীন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর। তবে ইমি নুরের বিরোধিতা করে সায় দিয়েছিলেন হাসিনার আজীবন সদস্য হওয়ার পক্ষে।
 
একটি বেসরকারি টিভির টকশো-তে এ বিষয়ে কথা বলেন ইমি। সেখানে তিনি ছাড়াও হাজির ছিলেন নুরুল হক নুর ও তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী। 
 
ইমি সেখানে বলেন, ‘আমার হলে যেহেতু নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, কয়েক জায়গায় হয়নি এটি আমাকে মানতে হবে, কিন্তু যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী ছিলেন, এবং তাকে যেহেতু আন্তরিক দেখেছি আমরা, ডাকসু নির্বাচনটি যেহেতু সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করা সম্ভব হয়েছে, তার আন্তরিকতা ছাড়া কিন্তু এটা সম্ভব ছিল না। তিনি আমাদের গণভবনে ডেকে যে আতিথেয়তা দিয়েছেন, অন্তত কৃতজ্ঞতাবশত হলেও তাকে ডাকসুর আজীবন সদস্য ঘোষণা করা উচিত।’
 
পরে সে বছরের ৩০ মে ডাকসুর দ্বিতীয় কার্যনির্বাহী সভায় হাসিনাকে আজীবন সদস্য ঘোষণা করা হয়। যে বিবৃতিতে এই ঘোষণা দেওয়া হয়, সেখানে অবশ্য ভিপি নুরের স্বাক্ষর ছিল না। এই সিদ্ধান্তে সমর্থন ছিল না তৎকালীন ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক ও বর্তমানে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনেরও।
 
এরই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে ইমি লেখেন, ‘১৯ সালে শেখ হাসিনাকে ডাকসুর আজীবন সদস্য করার ব্যাপারে আমার বক্তব্যের কিছু খন্ডিত অংশ দেখলাম প্রচার করা হচ্ছে। অনেকেই এই ব্যাপারে আমার বর্তমান অবস্থান জানতে চাচ্ছেন। আমার অবস্থান আমি খুব পরিষ্কারভাবে জানাতে চাই। আমি নিরপরাধ মানুষ এবং ছাত্রখুনের নির্দেশ দাতার সর্বোচ্চ বিচার চাই। ফুলস্টপ।’