
নিত্যপণ্যের বাজারে হঠাৎ অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। গত এক মাসে পটোল, ঢ্যাঁড়শ, বেগুনসহ সাধারণ ভোক্তা বেশি কিনে এমন ১০ ধরনের সবজির দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পিঁয়াজ ও ডিমের দাম।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত এক মাসে দেশি পিঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। এক মাস আগে প্রতি কেজি পিঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। একই সময়ে ফার্মের ডিমের দাম বেড়েছে প্রতি হালিতে প্রায় ২২ শতাংশ হারে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ১৭ আগস্ট রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলো ঘুরে ওই দিনের পণ্যমূল্যের যে প্রতিবেদন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে- তাতে দেখা যায়, গত এক মাসে ১০ ধরনের সবজির মধ্যে ঢ্যাঁড়শ ১০০ শতাংশ, মিষ্টিকুমড়া ৮০ শতাংশ, পটোল ৭৫ শতাংশ, ধুন্দল ৭০ শতাংশ, চিচিঙ্গা ও লাউ ৫৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ, বেগুন ও উচ্ছে/ করলা ৫৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ, চালকুমড়া ৫০ শতাংশ এবং কাকরোলের দাম বেড়েছে ৫৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ হারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতিবৃষ্টির কারণে সবজির দাম বেড়ে থাকতে পারে। এটি সাময়িক। বৃষ্টি কমে গেলে এসব সবজির দাম কমে যেতে পারে। তবে এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পিঁয়াজ ও ডিমের দাম বৃদ্ধির শঙ্কা তৈরি করছে। এই পণ্য দুটির দাম বৃদ্ধির সঙ্গে বৃষ্টির কোনো সম্পর্ক নেই।
ডিমের দাম নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)-এর সভাপতি সুমন হাওলাদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত ছয় মাস ডিমের দাম কম ছিল। এতে প্রান্তিক খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দাম বাড়ানোর পেছনে ভূমিকা রাখছে সিন্ডিকেট। তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে বড় মাপের উৎপাদনকারীরা মিলে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।
পিঁয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও পিঁয়াজের দাম কেন বেড়েছে- তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মশলা জাতীয় এই পণ্যটির বার্ষিক উৎপাদন ও মজুত সম্পর্কে জরুরি প্রতিবেদন চেয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পণ্যটির অবৈধ মজুতদারি এবং দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা রুখে দেওয়ার জন্য জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে মনিটরিং জোরদার করতে বলা হয়েছে। মজুতদারি বন্ধে জেলা টাস্কফোর্সের নজরদারি বাড়াতে জেলা প্রশাসকদেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত মৌসুমে পিঁয়াজের উৎপাদন ছিল প্রায় ৪৪ লাখ মেট্রিক টন, যা আগের মৌসুমের চেয়ে প্রায় ৫ লাখ মেট্রিক টন বেশি। আগের মৌসুমে পণ্যটির উৎপাদন ছিল প্রায় ৩৯ লাখ মেট্রিক টন। গতকাল পর্যন্ত পিঁয়াজের মজুত ছিল ৯ লাখ ২৭ হাজার মেট্রিক টন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর তথ্য অনুযায়ী গত অর্থ বছরে বিদেশ থেকে পিঁয়াজ আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ৬৩ হাজার মেট্রিক টন। তার আগের অর্থবছরে ৫ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টন পিঁয়াজ আমদানি হয়েছিল। কর্মকর্তারা জানান, গত মৌসুমে পিঁয়াজের উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম স্থিতিশীল ছিল। কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার জন্য আমদানি কম হয়েছে। তবে পিঁয়াজের দাম যদি উর্ধ্বমুখী থাকে- সরকার আমদানির অনুমোদন বাড়িয়ে দেবে। এরই মধ্যে আমদানিকারকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পণ্যটি আমদানির জন্য বেশ কিছু অনুমতি দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। রবিবার পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দর দিয়ে প্রায় দেড় শ মেট্রিক টন পিঁয়াজ আমদানির তথ্য পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (মনিটরিং ও বাস্তবায়ন) ড. মো. জামাল উদ্দীন বলেন, বর্তমানে পিঁয়াজের যে দাম এটি বেশি নয়। প্রতি কেজি পিঁয়াজে কৃষকের উৎপাদন খরচ হয়েছে প্রায় ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। মৌসুমে এই পিঁয়াজ তারা বিক্রি করেছেন ২৫ টাকা কেজি দরে। ফলে গত পাঁচ মাস কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন দাম বাড়ায় কৃষক কিছুটা লাভের মুখ দেখছেন।