
মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ পাঠ্যবই থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম কমিটি (এনসিসি)। একই সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ ভাষণ কাটছাঁট করে সংক্ষিপ্ত রূপে পাঠ্যবইয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে আয়োজিত সভায় ৭ মার্চের ভাষণ রাখা-না রাখা নিয়ে কিছুটা বাকবিতণ্ডাও হয়েছে।
সোমবার (১৮ আগস্ট) রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কার্যালয়ে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তক অনুমোদন সংক্রান্ত সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় অংশ নেওয়া জাতীয় শিক্ষাক্রম কমিটির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এনসিটিবির পক্ষ থেকে সভায় পাঠ্যবই থেকে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন পুস্তক পর্যালোচনায় জড়িত শ্রেণি শিক্ষকরাও বই থেকে এ ভাষণ বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করেন।
তবে সভায় উপস্থিত শিক্ষা প্রশাসনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ৭ মার্চের ভাষণ বাদ দেওয়ার বিপক্ষে অবস্থান নেন। একই সঙ্গে তারা ভাষণ রেখে সংক্ষিপ্ত করার পক্ষে মতামত দেন। এ নিয়ে সভায় কিছুটা বাকবিতণ্ডাও হয়। তবে শেষ পর্যন্ত আলোচনার মাধ্যমে ভাষণ রাখার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়।
অন্যদিকে, জুলাই আন্দোলন নিয়ে লিখিত ‘আমাদের নতুন গৌরব গাঁথা’ প্রবন্ধে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের খণ্ডিত চিত্র তুলে ধরার অভিযোগ করেন কয়েকজন সদস্য। পাশাপাশি নৃশংস গণহত্যার ইতিহাস থেকে কৌশলে শেখ হাসিনার নাম বাদ যাওয়ার অভিযোগ তোলেন তারা। পরে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হয়, প্রবন্ধটি সংশোধন করা হবে এবং সেখানে গণহত্যাকারী হিসেবে শেখ হাসিনার নাম আনা হবে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া দুজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে জানান, সভায় এনসিটিবির চেয়ারম্যানের রুটিন দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমসহ কয়েকজন কর্মকর্তা ৭ মার্চের ভাষণ পাঠ্যবইয়ে রাখার পক্ষে অবস্থান নেন। তারা এ ভাষণকে ইতিহাসের অংশ হিসেবে পাঠ্যবইয়ে রেখে দেওয়ার পরামর্শ দেন।
তারা আরও জানান, বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা প্রশাসনের আরেকটি পক্ষ তুমুল বিরোধিতা করলেও সেটি টেকেনি। বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উচ্চবাচ্য হয়। তবে শেষ পর্যন্ত অষ্টম ও দ্বাদশ শ্রেণির বইয়ে ৭ মার্চের ভাষণ সংক্ষিপ্ত আকারে রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী সোমবার রাত ১০টার দিকে জাগো নিউজকে বলেন, মাধ্যমিকের অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে আগেও বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল। এটি সংক্ষিপ্ত আকারে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়াও একাদশ শ্রেণির বইয়ের ক্ষেত্রেও একই সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য হবে। বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা উপদেষ্টা গণমাধ্যমকে ব্রিফিং করবেন।