
মৎস্যসম্পদ রক্ষায় দেশবাসীকে পরিবেশের প্রতি সদয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেছেন, “পরিবেশের প্রতি সদয় না হলে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ মৎস্য সম্পদ টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।”
বাসস জানায়, সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, মৎস্যচাষী, উদ্যোক্তা ও গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন এ অনুষ্ঠানে।
উদ্বোধনী ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “মাছ আমাদের জন্য প্রকৃতির উপহার। এটি কোনো কারখানায় উৎপাদিত নয়, বরং আল্লাহর দান। অথচ আমরা এত নির্দয় হয়ে পড়েছি যে, একদিন মাছও হয়ত আমাদের কপাল থেকে হারিয়ে যাবে।”
প্রকৃতিকে আঘাত করলে আগামী প্রজন্ম ‘খাদ্য নিরাপত্তা ও জীবিকা থেকে বঞ্চিত হবে’ বলেও সতর্ক করেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, “আমরা নদী শাসনের কথা বলি, কিন্তু নদী পালনের কথা বলি না। আমরা তাকে শাসন করতে চাই এবং শাসনের নামে তার প্রতি যত নির্দয় হওয়া যায়, তা করছি। বর্জ্য তো নদীতে দিচ্ছি। নদী-নালা ও জলাশয়ে বর্জ্য ফেলছি, বিষাক্ত রাসায়নিক ঢুকিয়ে দিচ্ছি। পানিই যদি না থাকে, মাছ কোথা থেকে আসবে?”
বাংলাদেশের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ও জলসম্পদ মৎস্য উৎপাদনের বিপুল সুযোগ তৈরি করেছে, সে কথা তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বর্তমানে দেশে প্রায় ১২ লাখ নারীসহ লাখ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ খাতের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু প্রকৃত মৎস্যজীবীরা অনেক সময় প্রতিকূলতার মুখোমুখি হন।
“আমরা শুধু মাছের দাম বা মাছটা টাটকা কি-না সেটা দেখি, কিন্তু যারা প্রতিদিন শ্রম দিয়ে মাছ আমাদের কাছে পৌঁছে দেন, তাদের কথা ভুলে যাই। আজকের দিনটা অন্তত তাদের কথা মনে করার দিন।”
গভীর সমুদ্রের বিশাল সম্ভাবনা কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বঙ্গোপসাগর আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে তার উপহার নিয়ে। এটি শুধু বেশি মাছ ধরার বিষয় নয়, বরং একটি নতুন শিল্প গড়ে তোলার সুযোগ। এজন্য আমাদের গবেষণা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পাঠ্যক্রমে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।”
অবৈধ জাল ব্যবহার ও নির্বিচার মৎস্য আহরণকে তিনি ‘প্রকৃতির প্রতি নির্মমতা’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ইউনূস বলেন, এটা ঠেকানো শুধু সরকারের কাজ নয়, বরং নাগরিক দায়িত্বও বটে।
“আগামী প্রজন্ম যেন এই সম্পদ থেকে বঞ্চিত না হয়, সেজন্য আমাদের সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে,” বলেন তিনি।
মৎস্য খাতে সম্ভাবনার পাশাপাশি ‘দুর্ভাবনাও’ আছে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের প্রতিদিন সকালে প্রতিজ্ঞা করতে হবে–‘আমি আজ প্রকৃতির প্রতি সদয় হব’। প্রকৃতির প্রতি সদয় না হলে আমাদের ভবিষ্যৎ টেকসই হবে না।”
পরিবেশবান্ধব চাষাবাদ ও তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণে এই শিল্পকে সমৃদ্ধ করা সম্ভব বলেও মত দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে মৎস্য খাতে বিশেষ অবদানের জন্য নয়টি ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় মৎস্য পদক দেওয়া হয়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে রুটিন দায়িত্বে নিয়োজিত সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
এবারের মৎস্য সপ্তাহের মূল প্রতিপাদ্য হল– ‘অভয়াশ্রম গড়ে তুলি, দেশি মাছে দেশ ভরি’।
মৎস্য সপ্তাহে প্রদর্শনী, কর্মশালা ও আলোচনা সভার মাধ্যমে চাষাবাদে আধুনিক প্রযুক্তি, মাছের রক্ষণাবেক্ষণ এবং বাজারজাতকরণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হবে।