Image description

চলতি সপ্তাহে নির্বাচন কমিশনের ( ইসি ) ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করার কথা । তবে ইসি নির্বাচন আয়োজনে নিজেদের প্রস্তুতি তুলে ধরলেও রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি এবং বাস্তবায়ন নিয়ে মতবিরোধ দূর করতে পারেনি । জাতীয় নাগরিক পার্টি ( এনসিপি ) , বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী , ইসলামী আন্দোলনসহ ইসলামপন্থী দলগুলো নির্বাচনের আগে এটির বাস্তবায়ন চায় । অন্যদিকে বিএনপি ও সমমনা জোট - দলগুলো সাংবিধানিক বিষয়গুলো আগামী জাতীয় সংসদের মাধ্যমে বাস্তবায়নের পক্ষে ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন , রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানের কারণে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে বড় শর্ত হয়ে দাঁড়াচ্ছে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন । এই অবস্থায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিচ্ছে । আগামী সপ্তাহে কমিশন জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় ধাপে সংলাপ করবে । জুলাই সনদে ৮৪ টি বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্যের কথা বলা আছে । এগুলোর মধ্যে মৌলিক বিষয়গুলো হলো সংবিধান - সম্পর্কিত ।

গণপরিষদে , জামায়াত অধ্যাদেশ বা গণভোটের মাধ্যমে এবং বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শরিক গণতন্ত্র মঞ্চ সংবিধান সংস্কার সভায় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবি করেছে । নির্বাচনের আগে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দাবি করা দলগুলো বলছে , এর আগে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের শেষ সময়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৭ দল , আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ৮ দল , বামপন্থীদের নেতৃত্বাধীন ৫ দল মিলে সরকারব্যবস্থার রূপরেখা দিয়েছিল । ১৯৯০ সালের ১৯ নভেম্বর ওই তিন জোট আলাদা সমাবেশে ওই রূপরেখা তুলে ধরে । ৬ ডিসেম্বর গণ - অভ্যুত্থানে এরশাদের পতন হয় ।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় এসেছিল বিএনপি । পরে শুধু সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন ছাড়া ওই রূপরেখার কিছুই বাস্তবায়ন করা হয়নি । তাই এবারও নির্বাচনের আগে আইনি ভিত্তি না দিলে জুলাই সনদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হবে বলে আশঙ্কা এসব দলের । এ জন্য এনসিপি , জামায়াত এ ক্ষেত্রে ছাড় দিতে রাজি নয় । এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন , জুলাই সনদকে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে কার্যকর করতে হবে । আইনি ভিত্তি দিতে হবে । জুলাই সনদের ভিত্তিতে সামনের নির্বাচন হতে হবে । জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের ( জেএসডি ) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন , জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য না হলে সংকট তৈরি হবে । তিনি বলেন , শুধু সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে মৌলিক সংস্কার হলে বৈধতার সংকট দেখা দিতে পারে , যেমন ত্রয়োদশ সংশোধনী সংসদে পাস হলেও আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে । সংবিধান সংস্কার সভার মাধ্যমে সংস্কার হলে তা টেকসই হবে । এদিকে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির দাবিতে গত বুধবার রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে জামায়াত ।

ওই সমাবেশে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা . সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন , জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি দেওয়া ছাড়া এবং বিদেশিদের দ্বারা কোনো পাতানো নির্বাচনে জামায়াত যাবে না । জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন , সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় বলেছিল , সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংস্কার করবে । তাই তাঁরা মনে করেন , সংস্কারের আইনি ভিত্তি ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয় । সরকার দাবি না মানলে তাঁরা আন্দোলনে যাবেন । ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, বিএনপি ছাড়া সবাই চায় অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন । এদিকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিতে গতকাল শনিবার আলোচনা সভা করেছে এনসিপি ।

সভায় বলা হয়েছে , বাংলাদেশে নতুন সংবিধানের বাস্তবতা তৈরি হয়েছে , এটা পাশ কাটানো যাবে না । নির্বাচন যেকোনো সময় হতে পারে । কিন্তু সামনে যে নির্বাচন হবে , তাতে যেন পুরোনো ব্যবস্থা টিকিয়ে না রাখা হয় । সভায় এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন , বাংলাদেশে সামনে যদি কোনো নির্বাচন হয় , তবে সেটা গণপরিষদ নির্বাচন হতে হবে । গণপরিষদের মধ্য দিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা হবে । আগামী জাতীয় নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কার পরিষদের নির্বাচন দাবিতে গতকাল দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে গণপদযাত্রা ও গণসংলাপ করেছে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক গণসংহতি আন্দোলন ।

গণতন্ত্র মঞ্চ বলছে , যেহেতু সংবিধানের সংস্কার করতে হবে । তাই ভোটের মাধ্যমে ওই সংস্কারের ক্ষমতা জনগণের কাছ থেকে নিতে হবে । এ জন্য জাতীয় নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কার সভার নির্বাচন একই সঙ্গে করা যেতে পারে । জনপ্রতিনিধিরা প্রথমে সংবিধান সংস্কার করে পরে সংসদের স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন করবেন । এতে নির্বাচন প্রলম্বিত হওয়ার সুযোগ থাকছে না । গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন , তাঁরাও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চান । কিন্তু এটাকে এখনো নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত করার বিষয়ে ভাবেননি । এটির আইনি ভিত্তি চাওয়ার অনেক যৌক্তিক কারণ রয়েছে । কারণ , অতীতে সব দল মিলে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও পরবর্তী ক্ষমতাসীনেরা পাত্তা দেয়নি । নব্বইয়ের পরের ঘটনা এর উদাহরণ । বিএনপি এবং তার সমমনা দল- জোটগুলো মনে করছে , পরবর্তী নির্বাচিত জাতীয় সংসদের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করে জুলাই সনদের সাংবিধানিক বিষয়গুলোর সমাধান হবে । বাকিগুলো অধ্যাদেশের মাধ্যমে আগেই করা যেতে পারে । বর্তমান সরকার সংবিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছে , সে ক্ষেত্রে তারা সংবিধান বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারে না । নির্বাচিত সংসদই সেটা করবে ।

বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শরিক এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ বলেন , জুলাই সনদের যেসব বিষয় সংবিধান - সম্পর্কিত , তা নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে করা হবে । তিনি বিশ্বাস করেন , যে দলই ক্ষমতায় আসবে , তারা জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করবে । বেশির ভাগ দল জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চায় বলে জানান এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু । তিনি বলেন , বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে এখন আলোচনা হচ্ছে । কোনো না কোনো প্রক্রিয়া বের হবে । তখন বিতর্ক কমে আসবে ।