
ভারতীয় দুই জ্বালানি কোম্পানির পারফরম্যান্স ব্যাংক গ্যারান্টি প্রত্যাহার করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। ভারতীয় কোম্পানি দুটি হলো ওএনজিসি ভিদেশ (ওভিএল) এবং অয়েল ইন্ডিয়া (ওআইএল)। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চলমান কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানির ব্যাংক গ্যারান্টি প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটল। এই দুটি কোম্পানি বাংলাদেশের দুটি অফশোর তেল ও গ্যাস ব্লকে কাজ করছিল।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু বিজনেস লাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেট্রোবাংলা ব্যাংক গ্যারান্টি প্রত্যাহারের পর কোম্পানি দুটি বাংলাদেশের দুটি অফশোর ব্লক থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
গত বছর ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিনি ভারতে আশ্রয় নেন এবং সেখানেই অবস্থান করছেন। বিচারের মুখোমুখি করতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাঁকে ফেরত দেওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠালেও নয়াদিল্লি সাড়া দেয়নি।
মূলত শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই ভারত ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। এই টানাপোড়েনের জেরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেমন, ভারত তৈরি পোশাক, জুস, খাদ্যসামগ্রী এবং তুলাজাতীয় পণ্যের ওপর আমদানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর জবাবে বাংলাদেশ স্থলবন্দরের মাধ্যমে ভারতীয় সুতা রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে।
শেখ হাসিনা সরকারের সময় ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত ওভিএল, ওআইএল এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স) দুটি ব্লকে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য একটি কনসোর্টিয়াম গঠন করেছিল। এতে ভারতীয় কোম্পানি দুটির প্রত্যেকের ৪৫ শতাংশ করে শেয়ার ছিল এবং বাপেক্সের ছিল বাকি ১০ শতাংশ।
অয়েল ইন্ডিয়া গত মঙ্গলবার বিএসই-তে তাদের আর্থিক প্রতিবেদন দাখিল করে জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশে দুটি ব্লক (SS 04 এবং SS 09) থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে অনুযায়ী কূপ, অন্যান্য সম্পদ এবং অসম্পূর্ণ কাজের জন্য ৩০৭ দশমিক ৪৩ কোটি রুপি তারা প্রভিশন দেখিয়েছে।
উল্লেখ্য, ব্যাংকঋণের বিপরীতে সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলায় ব্যাংকগুলোকে নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণ করতে হয়, এটিকে প্রভিশন বলা হয়।
আলাদাভাবে, ওএনজিসিও গত মঙ্গলবার বিএসই-তে তাদের প্রতিবেদন দাখিল করে বলেছে, সাবসিডিয়ারি সংস্থা ওভিএল-এর ক্ষেত্রে, ২০২৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পেট্রোবাংলা বাংলাদেশের যথাক্রমে ব্লক SS-04 এবং ব্লক SS-09-এর জন্য ১৬ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার এবং ১৬ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারের ব্যাংক গ্যারান্টি (বিজি) প্রত্যাহার করেছে। ২০২৫ সালের ২৭ জুন ওভিএল-এর বোর্ড ব্লক SS-04 এবং SS-09-এর জন্য উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি (পিএসসি) বাতিলের অনুমোদন দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেহেতু পেট্রোবাংলা ব্লকের ন্যূনতম কাজের বাধ্যবাধকতা (এমডব্লিউও) পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংক গ্যারান্টিগুলো প্রত্যাহার করেছে, এ কারণে ওভিএল তাদের ২০২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের প্রতিবেদনে ব্লক SS-04 এবং ব্লক SS-09-এর জন্য যথাক্রমে ১৪০ কোটি রুপি (১৬.৪০ মিলিয়ন ডলার) এবং ১৪৩ কোটি রুপি (১৬.৭০ মিলিয়ন ডলার) লাভ-ক্ষতির বিবরণীতে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
তাদের ২০২৪ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে, ওএনজিসি বলেছে, SS-04 এবং SS-09 ব্লকে বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলন যোগ্য জ্বালানি আবিষ্কারের কোনো নিশ্চয়তা না থাকায় অনুসন্ধান সময়ের জন্য প্রায় ৩১ কোটি রুপি (আগের বছর প্রায় ২৯ কোটি টাকা) লোকসান হিসেবে ধরা হয়েছে।
অয়েল ইন্ডিয়া তাদের ২০২৪ বার্ষিক প্রতিবেদনে বলেছে, ২০১২ সালে বাংলাদেশ অগভীর সমুদ্রের ব্লক SS-04 এবং SS-09-এ তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের দায়িত্ব দিয়েছিল। ব্লক দুটির মোট আয়তন ১৪ হাজার ২৯৫ বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে SS 04 ব্লকের আয়তন ৭ হাজার ২৬৯ বর্গ কিলোমিটার এবং SS-09 ব্লকের আয়তন ৭ হাজার ২৬ বর্গ কিলোমিটার।
উভয় ব্লকের উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি (পিএসসি) ২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় পাঁচ বছরের প্রাথমিক অনুসন্ধান সময়ের জন্য স্বাক্ষরিত হয়। এতে আরও বলা হয়, দুটি ব্লকেরই মেয়াদ ২০২৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
অয়েল আরও বলেছে, ব্লকগুলোতে বাধ্যতামূলক সিসমিক জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। SS-04 ব্লকে ১টি (এক) অনশোর কূপ কাঞ্চন-১ এক্স-এর খনন কাজ শেষ হয়েছে। দুটি অফশোর কূপ (SS-04 এবং SS-09 ব্লকে একটি করে) খননের জন্য চুক্তি কৌশল চূড়ান্ত করা হচ্ছিল। ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত দুটি ব্লকেই কোম্পানির শেয়ারের বিনিয়োগ ছিল ৩১ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন ডলার।