Image description

আলাস্কায় গতকাল শুক্রবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠকের সময় নিজেদের সামরিক শক্তি দেখাল যুক্তরাষ্ট্র। পুতিন যখন ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসতে উড়োজাহাজ থেকে অবতরণ করে লালগালিচায় ট্রাম্পের সঙ্গে হেঁটে যাচ্ছিলেন, তখন আকাশে গর্জে ওঠে এক বিশাল বি-২ স্পিরিট স্টেলথ বোমারু বিমান। এটির সঙ্গে ছিল আরও কয়েকটি মার্কিন যুদ্ধবিমান।

বি-২ যুদ্ধবিমান সহজেই শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ভেদ করে নির্ভুল নিশানায় হামলা চালাতে সক্ষম। গত জুনে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মার্কিন বাহিনী এই যুদ্ধবিমান দিয়েই হামলা চালিয়েছিল।

২২ সেকেন্ডের একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, আলাস্কার জয়েন্ট বেস এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসনে দুই প্রেসিডেন্ট লালগালিচা ধরে মঞ্চের দিকে হাঁটছেন, এমন সময় তাঁদের মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যায় বি-২ বোমারু ও যুদ্ধবিমান। পুতিনও সেই মুহূর্তে আকাশের দিকে তাকান।

এই প্রদর্শন আসলে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার আগে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তির স্পষ্ট বার্তা বহন করছিল।

প্রতিটি বি-২ বোমারু যুদ্ধবিমানের দাম প্রায় ২০১ কোটি মার্কিন ডলার, যা ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল সামরিক বিমান। নর্থরপ গ্রুম্যান কোম্পানি এটি তৈরি করে। ১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে উৎপাদন শুরু হলেও সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এর সংখ্যা সীমিত করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, অনেকগুলো বানানোর কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত মাত্র ২১টি বি–২ বোমারু বিমান তৈরি করা হয়।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিন লালগালিচায় হেঁটে যাচ্ছিলেন তখন তাঁদের মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যায় বি–২ বোমারু বিমান
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিন লালগালিচায় হেঁটে যাচ্ছিলেন তখন তাঁদের মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যায় বি–২ বোমারু বিমানছবি: গিগার ক্যাপিটাল নামে এক এক্স ব্যবহারকারী দেওয়া ভিডিও থেকে নেওয়া

এই যুদ্ধবিমান একটানা ৬ হাজার নটিক্যাল মাইল (১১ হাজার ১১২ কিলোমিটার) উড়তে পারে, তা–ও আবার জ্বালানি ভরার প্রয়োজন হয় না। আকাশে জ্বালানি ভরলে এটি পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় আঘাত হানতে সক্ষম। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের মিজৌরি থেকে আফগানিস্তান, লিবিয়া ও ইরান পর্যন্ত দীর্ঘ মিশনে অংশ নিয়েছে এই বিমান।

বি–২ বোমারু বিমান ৪০ হাজার পাউন্ডের (১৮ হাজার ১৪৪ কেজি) বেশি ওজনের অস্ত্র বহন করতে পারে, যার মধ্যে থাকতে পারে পারমাণবিক বোমাও। সর্বোচ্চ ১৬টি বি-৮৩ পারমাণবিক বোমা বহন করতে সক্ষম এই যুদ্ধবিমান। ভেতরে অস্ত্র রাখার জায়গা এমনভাবে বানানো, যাতে বিমানটির গোপন ক্ষমতা বজায় থাকে। এর মধ্যে এমনকি বিশাল ৩০ হাজার পাউন্ডের ‘বাংকার বাস্টার’ (বাংকারবিধ্বংসী) বোমাও বহন করা যায়। ভূগর্ভস্থ স্থাপনা ধ্বংসের জন্য এই বিমান ব্যবহার করা হয়।

প্রতিবেদন বলছে, এ বছরের জুনে ইরানের ফোর্দো গবেষণাকেন্দ্রে এমন ছয়টি বাংকারবিধ্বংসী বোমা ব্যবহার করা হয়েছিল।

বি-২-এ মাত্র দুজন পাইলট লাগে। আধুনিক অটোমেশন সিস্টেমের কারণে কম জনবল দিয়েই কার্যকরভাবে এই বিমান চালানো সম্ভব।

বিমানটির গোপন প্রযুক্তি এমনভাবে তৈরি যে, শত্রুর রাডারে এটি ধরা পড়ে না। বলা হয়, এর রাডার প্রতিচ্ছবি একটি ছোট্ট পাখির মতো অর্থাৎ কার্যত অদৃশ্য।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ওই সময় মস্কো ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে হামলা চালায়। ইতিমধ্যেই হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে এবং যুদ্ধ এখনো চলছে। বৈঠকের ঠিক আগেও রাশিয়া নতুন অগ্রগতি দেখিয়েছে। ইউরোপে গত ৮০ বছরে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাত।

তিন ঘণ্টার বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘চুক্তি তখনই হবে, যখন সত্যিই চুক্তি হবে।’ এর মাধ্যমে ট্রাম্প আলোচনায় কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারার দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন।

অন্যদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন আলোচনাকে ‘গভীর ও কার্যকর’ বলে বর্ণনা করেন।

পুতিন আরও বলেন, রাশিয়া আন্তরিকভাবে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে চায়। তবে তাদের কিছু ‘যৌক্তিক উদ্বেগ’ বিবেচনা করতে হবে।