
পুরোনো বিল্ডিং কোড অনুসরণ করেই চলছে বাংলাদেশের নির্মাণশিল্প। এতে নির্মিত ভবনগুলো শুধু নিরাপত্তাকেই ঝুঁঁকিতে ফেলছে না, বরং নির্মাণ ব্যয়ও অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে। যেখানে উন্নত দেশগুলো নিয়মিত বিল্ডিং কোড সংশোধন করে আধুনিক, সাশ্রয়ী নির্মাণপ্রযুক্তি ও সামগ্রী ব্যবহার করছে, সেখানে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) পরিবর্তনের দীর্ঘসূত্রতা এ শিল্পকে পিছিয়ে রাখছে এবং খরচ বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলছে। ফলে দেশে নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে ৩০ শতাংশ।
বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের প্রফেসর ড. রাকিব আহসান বলেন, বাংলাদেশে নির্মাণশিল্পে যে বিল্ডিং কোড অনুসরণ হয় তা বর্তমানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যে বিল্ডিং কোড বিএনবিসি-২০২০ হিসেবে গেজেট হয়েছে তা মূলত এসিআই ৩১৮-০৮ ভার্সনকে অনুসরণ করা হয়েছে। ফলে নির্মাণের নতুন উপকরণের ব্যবহারের বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে, যা প্রকৌশলীদের বিভ্রান্ত করছে। এতে করে খরচ যেমন বাড়ছে তেমনই এ শিল্প নানান দিকে পিছিয়ে পড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিএনবিসি সর্বশেষ ২০২০ সালে ‘এসিআই ৩১৮-০৮’ অনুসরণ করে হালনাগাদ করা হয়। উন্নত বিশ্বে বিল্ডিং কোড ‘এসিআই ৩১৮-২৫’ অনুসরণ করা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের যুগে শক্তি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব নির্মাণের ওপর বিশ্বব্যাপী গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নতুন এবং উন্নতমানের নির্মাণসামগ্রী প্রচলিত উপকরণের চেয়ে অনেক সাশ্রয়ী, কার্যকর এবং টেকসই হয়। নিয়মিত কোড আপডেটের মাধ্যমে নির্মাণশিল্পে আধুনিক উপকরণের ব্যবহারকে উৎসাহ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে নির্মাণ খরচ অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। অথচ উল্টো পথে হাটছে বাংলাদেশ। দেশের সব নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এখনো বিএনবিসি-২০২০ সালের কোড ব্যবহার করছে। এমনকি কেউ কেউ বিএনবিসি-২০০৬ সালের কোড অনুসরণ করছে, যা লেখা হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। পুরোনো এ কোডগুলো বর্তমান সময়ের নির্মাণসামগ্রী, প্রযুক্তি এবং ডিজাইন দর্শন থেকে অনেকটাই পিছিয়ে। পুরোনো বিল্ডিং কোড অনুসরণ করায় নতুন প্রকৌশলীদের মাঝে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। ফলে কাঠামোর নকশাও ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে স্টিল-কংক্রিট কম্পোজিট কাঠামোয় উন্নত মানের শক্তি, সাশ্রয়ী উপকরণ ব্যবহারের সুযোগ কমে যাচ্ছে। নির্মাতারা বাধ্য হচ্ছেন সনাতনী ও ব্যয়বহুল নির্মাণ পদ্ধতির ওপর নির্ভর করতে। পুরোনো কোডে নির্মিত ভবনগুলোর বাসিন্দাদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ও আলোকায়নে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হচ্ছে। এ ছাড়াও পুরোনো কোড স্থপতি ও প্রকৌশলীদের নকশার স্বাধীনতাকে সীমিত করে, পরোক্ষভাবে বাড়ে প্রকল্প ব্যয়।
নির্মাণশিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড অ্যানফোর্সমেন্ট, জেনারেল বিল্ডিং রিকুয়ারমেন্টস, কন্ট্রোল অ্যান্ড রেগুলেশন ও ফায়ার প্রটেকশনের মতো বিষয়ে আইন হওয়া উচিত। কিন্তু নকশা ও নির্মাণের বিষয়টি গবেষণাভিত্তিক, যা সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হয়। এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করার মতো বিষয় নয়। সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার বিল্ডিং কোডের কতটুকু অংশ গেজেটেড হবে আর কতটুকু হবে না।