Image description

স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা নিরসনে ৫ মে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সংস্কার প্রস্তাব জমা দেয় স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন। ওই সময় যেসব সুপারিশ করা হয়েছিল তা বাস্তবায়নের জন্য দ্রুত উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু তিন মাস পার হলেও ৩২ সুপারিশের একটিও আলোর মুখ দেখেনি। ফলে, জনগণের প্রত্যাশা ও বাস্তবতার মাঝে বড় ফারাক তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্বাস্থ্য খাতের যে কাক্সিক্ষত পরিবর্তনের আশায় মানুষ বুক বেধেছিল, তা আজ আশাহত হওয়ার পথে। তারা বলছেন, কেবল পরিকল্পনা হাতে রেখে রাখলেই হবে না, দ্রুত হাতে হাতে কাজ শুরু করতে হবে। এছাড়া সুপারিশগুলো সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয় হলেও বাস্তবায়নে অনীহা ও দেরি হলে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পরিবর্তনের বড় সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে এবং জনগণের ভরসা অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশজুড়ে নতুন আশার সঞ্চার হয়। ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দেশে কাক্সিক্ষত পরিবর্তনের ঘোষণা দেয়। বিভিন্ন সেক্টরের মতো স্বাস্থ্য খাতেও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়, যার অংশ হিসেবে গঠিত হয় ‘স্বাস্থ্য কমিশন’। দেশব্যাপী জরিপ চালিয়ে আলোচনার পর স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়ন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্য ছিল এই সুপারিশে। 
জুলাই অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পাওয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক থেকে শুরু করে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার পদে পরিবর্তন ও রদবদল হয়। কাউকে করা হয় ওএসডি, কাউকে করা হয় বদলি। আবার যারা দেড় দশক নানাভাবে বঞ্চিত হয়েছেন, তাদের প্রশাসনিক বিভিন্ন পদে বসানো হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এই পর্যন্ত এক বছরে আট হাজার ৩০০ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। তবে এতে কাজে কোনো গতি ফেরেনি।

স্বাস্থ্যের ১৪টি খাতে অর্থ বরাদ্দ হয় অপারেশন প্লানের মাধ্যমে। কিন্তু গত বছরের জুনে ওপি বন্ধ হওয়ায় সব উন্নয়নমূলক কাজ থমকে গেছে। বন্ধ আছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলা সদর হাসপাতালে এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম থেকে শুরু করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপকরণ সরবরাহ। বর্তমানে বেতন ও অফিস পরিচালন ব্যয় ছাড়া কোনো অর্থ ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে নতুন কোনো যন্ত্র কেনা ও উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি।

অর্থ বরাদ্দ না থাকায় হাসপাতালগুলো থেকে নিয়মিত চাহিদা এলেও এক্স-রে যন্ত্র, আল্ট্রাসনোগ্রামসহ কোনো যন্ত্র সরবরাহ করা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, সরকারি ১৪টি হাসপাতালে আইসিইউ সেবা বন্ধ আছে। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে রোগীর ওপর। প্রতিদিন শত শত সংকটাপন্ন ও জটিল রোগীকে ছুটতে হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালে, কয়েকগুণ বেশি খরচে সেবা নিতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন তারা। অথচ কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস (ইআরপিপি) প্রকল্পের আওতায় স্থাপন হওয়া এসব আইসিইউয়ের প্রতিটির জন্য খরচ হয়েছে সাড়ে ১০ কোটি টাকা। সে হিসাবে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার যন্ত্র এখন নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে। জানা গেছে, দেশের ১৪ সহ¯্রাধিক কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রায় চার মাস ধরে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ। এতে চরম  ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগী।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন একটি বড় ধরনের স্বাস্থ্য সংস্কার বাস্তবায়ন করতে কয়েক বছর সময় লাগবেই; তবে শুরু না করলে এই সময় আরও দীর্ঘ হয়ে যাবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, যারা সুপারিশগুলো থেকে সর্বাধিক উপকৃত হওয়ার কথা ছিল। এছাড়া, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবও বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগের কারণ। তারা মনে করেন, স্বাস্থ্য খাতের এই সংস্কার কেবল স্বাস্থ্য বিভাগের কাজ নয়, এটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অগ্রাধিকার হওয়া দরকার। সুপারিশগুলো সফল করতে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক নেতৃত্ব উভয়েরই সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি। নাগরিক সমাজ এবং জনস্বাস্থ্য পেশাজীবীদের অংশগ্রহণ ছাড়া এই ধরনের সংস্কার সফল হওয়া কঠিন।

কমিশনের সুপারিশ ও সংস্কার নিয়ে চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারে যারা দায়িত্বে রয়েছে তাদের প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিল কিছু সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ করে এবং তা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে একটি  বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণ করবে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন করা হয়। এসব প্রস্তাবের মধ্যে অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের নিষ্পত্তি করা দরকার রয়েছে বলে আমরা মনে করি। তবে তা বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ দেখছি না। স্বাস্থ্য কমিশনের যে প্রস্তাব প্রদান করা হয়েছে সেগুলো শুধু মুলার মতো ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নের কোনো লক্ষণ আমরা দেখছি না। আমরা চাই এই প্রস্তাবটি অন্তত বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হোক।

স্বাস্থ্যের এ বেহাল দশা কি দীর্ঘদিনের অবহেলার ফল? প্রশ্নের জবাবে ডাঃ লেলিন চৌধুরি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য খাতে কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করা হয়নি। বাস্তবায়ন হলে অনিয়মের পর অনিয়ম যুক্ত হয়ে একটা জরাজীর্ণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা  তৈরি হয়েছে। এটি শুধু বর্তমান সরকারের বিষয় না স্বাধীনতার পর আজ পর্যন্ত বিগত প্রত্যেকটি সরকারের দায়ভার রয়েছে।

স্বাস্থ্য খাত সংস্কার ও প্রত্যাশা নিয়ে স্বাস্থ্য খাত কমিশনের একজন সদস্য অধ্যাপক সৈয়দ আকরাম হোসেন বলেন, আমরা ছয়জন সংস্কার কমিশনের সদস্য একত্রে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি একটি খোলা চিঠি প্রদান করেছি। চিঠিতে আমরা জরুরি ভিত্তিতে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব উত্থাপন করেছি: প্রথমত, প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে স্থায়ী পরামর্শক কমিটি। দি¦তীয়ত, স্বাধীন ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন’ গঠন স্বাস্থ্য খাতে নীতি নির্ধারণ ও তদারকির জন্য স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। তৃতীয়ত, শহরে ও গ্রামে বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ ও রাষ্ট্রীয় বাজেটে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ ও বাস্তবায়ন নীতি প্রয়োজন। এছাড়াও জুলাই চার্টারে স্বাস্থ্যকর কমিশনের সুপারিশমালা অন্তর্ভুক্ত করা। প্রস্তাবনাগুলো আমরা বিশ্বাস করি, বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গঠনমূলক উন্নয়নের জন্য অতি জরুরি।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য কমিশনের প্রধান এ কে আজাদ খান পৃথকভাবে একটি চিঠির মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ কামনা করেছিলেন, যার উদ্দেশ্য ছিল স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার নিয়ে সরাসরি আলোচনা। আমাদের প্রত্যাশা ছিল বড়। ভেবেছিলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই সুপারিশগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে, তবে সেটি হয়নি। এদিকে গত এক বছরে দেখা গেছে, বাস্তবতা ভিন্ন। স্বাস্থ্য খাত কার্যত নিস্তেজ থেকেছে। বিশেষত, হেলথ অ্যান্ড পপুলেশন সেক্টর প্রোগ্রাম (এইসপিএসপি) থেকে জেনারেল প্রোগ্রাম অব ইনভেস্টমেন্টে (জিপিপি) ট্রানজিশনের বিষয়টি এখনো কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। এই বিষয়ে স্বাস্থ্য কমিশনের একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ছিল, কিন্তু সেটি অনুসরণ করা হয়নি।

একটি সিস্টেম থেকে আরেকটিতে সফল ট্রানজিশন নিশ্চিত করতে যে পরিকল্পনা প্রয়োজন, সেটি বাস্তবে ঘটেনি। মেডিক্যাল কলেজসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতেও আমরা কাজ করেছি এবং আমাদের সুপারিশগুলো জনমত জরিপের ভিত্তিতে  তৈরি হয়েছে। অতএব, আরেকবার জরিপ করার প্রয়োজন নেই। এখন প্রয়োজন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের। আমরা মনে করি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যদি আমাদের কমিশনের সদস্যদের নিয়ে কাজ করে, তবে বাস্তবায়ন অনেক সহজ হবে। আমরা লক্ষ্য করছি, ঐকমত্য কমিশনের চেয়ারপারসন আমাদের পাঁচ সদস্যকে যুক্ত করে মিটিং ও পরিকল্পনা করছেন, কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত আমাদের কমিশনের সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক  বৈঠক করেনি বা আমাদের মতামত চায়নি।

স্বাস্থ্যের কিছুটা উন্নতি হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্য কমিশনের এ সদস্য বলেন, বিভিন্ন জটিলতা ও বিশৃঙ্খলা দূর করতে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বটে, যেমন মাইলস্টোন ইস্যু  মোকাবিলা এবং  বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের সেবা প্রদান, কিন্তু বৃহত্তর কাঠামোগত সংস্কারে বাস্তব অগ্রগতি খুব সীমিত।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কমিশনই একমাত্র সংস্থা, যারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী গোষ্ঠীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে  বৈঠক করেছে। আমরা স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের ৩২টি সুপারিশ সরকারের কাছে জমা দেওয়ার দীর্ঘ সময় পার হলেও বাস্তবায়নে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি। এই ধীর গতির জন্য জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তাদের মতে, শুধু সুপারিশগুলো  তৈরি করলেই হবে না, এগুলো বাস্তবে রূপায়ণের জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা, কর্মপরিকল্পনা ও শক্তিশালী প্রশাসনিক কাঠামো থাকা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু বাস্তবে এই দিকনির্দেশনা বা রোডম্যাপ না থাকায় সুপারিশগুলো এখনো কার্যকর হয়নি।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রধান জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে একটি চিঠি দিয়েছেন। এতে তিনি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন এবং কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে জাতীয় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উচ্চ পর্যায়ের জাতীয় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। এই কমিটি স্বাস্থ্য খাতের পরিকল্পনা, তদারকি, মান নিয়ন্ত্রণ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবে এবং সরাসরি সরকারকে প্রতিবেদন দেবে। এ ছাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা জনগণের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় নীতিগত, প্রশাসনিক, সাংগঠনিক ও বাজেট ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

এ প্রসঙ্গে অবশ্য স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, দীর্ঘদিনের সমস্যা রাতারাতি সমাধান হবে না। জনবল সংকট নিরসনে ইতোমধ্যে তিন হাজার চিকিৎসকের পরীক্ষা শেষ হয়েছে, তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন। এ ছাড়া বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে আরও সাড়ে তিন হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হবে। আরও ১০ হাজার চিকিৎসকের পদোন্নতি প্রক্রিয়াধীন আছে। নূরজাহান বেগম বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম কাজ ছিল আন্দোলনে শহীদদের তালিকা প্রণয়ন ও প্রকাশ এবং আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা। এ পর্যন্ত ৭৮ জন আহতকে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজনকে জরুরি ভিত্তিতে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে।

নানাদিক পর্যালোচনা করতে গিয়ে কয়েক মাস ওষুধ সরবরাহে বিঘœ হয়েছে দাবি করে স্বাস্থ্যের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, জিপি ক্লিনিকের প্রস্তাব ডিপিপিতে পাস হয়েছে। অবশ্যই এটি বাস্তবায়ন হবে। তিন-চার মাসের মধ্যেই দৃশ্যমান হবে। ডা. সায়েদুর রহমান অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে স্বাস্থ্য খাতের অর্জন ও ভবিষ্যৎ সংস্কার পরিকল্পনা নিয়ে বলেন, কয়েক মাসের বিশ্লেষণে স্বাস্থ্য খাতের ১০টি সংকটকে রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছি। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মেধা, জ্ঞান ও যোগ্যতা থেকে বিচ্ছিন্ন; অধিক ও অতিরিক্ত কেন্দ্রীভূত; বিশেষায়ননির্ভর চিকিৎসা ও প্রাথমিক সেবা উপেক্ষা; স্বচ্ছতার অভাব ও দায়মুক্তির সংস্কৃতি; উৎসাহ ও মনোবলহীন স্বাস্থ্যকর্মী; চিন্তাশীলতা, হীন-নৈতিকতার অবজ্ঞা ও স্বার্থের দ্বদ্ব; মনন-মানসিকতা ও নৈতিকতার অভাব; যন্ত্রপাতি পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণে পরনির্ভরতা; ওষুধের কাঁচামাল এমনকি চিন্তাগুলোও বিদেশের ওপর নির্ভরশীল এবং নেতৃত্বের দুর্বলতা ও পরিকল্পনার অভাব।

ডা. সায়েদুর রহমান আরও বলেন, লক্ষণ-উপসর্গের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ ওষুধ দেওয়ার নাম সঠিক চিকিৎসা নয়। লক্ষণ-উপসর্গকে বিশ্লেষণ করে আমরা যখন আসল রোগ নির্ণয় করব, শুধু তখনই সঠিক ওষুধ দিয়ে রোগ সারাতে পারব। এ স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের ক্ষেত্রেও আমরা একই ধরনের প্রক্রিয়া অবলম্বনের চেষ্টা করব।