Image description

পানি টইটম্বুর, তিস্তা নদী এখন আগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে। এরই মধ্যে রংপুরে তিস্তা সেতুর রক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দেওয়ায় ৩০ লাখ মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তিস্তার বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন :

রংপুর : জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুরে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় সড়ক সেতুর পশ্চিম তীরে সেতু রক্ষা বাঁধের প্রায় ৬০ মিটার এলাকা ধসে পড়েছে।

এতে বাঁধে প্রায় ৭০ ফুট গভীর গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। কয়েক দিনের লাগাতার বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় তীব্র স্রোতের ধাক্কায় পুরো বাঁধই এখন ঝুঁকির মুখে। স্থানীয়রা বলছে, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সেতু ও সংলগ্ন রংপুর-লালমনিরহাট মহাসড়ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রায় ৩০ লাখ মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তিস্তা সেতুর পশ্চিম পাশের প্রায় ৯০০ মিটার দীর্ঘ সেতু রক্ষা বাঁধের বিভিন্ন অংশে স্রোতের তীব্রতা বেড়েই চলছে।

এর ফলে বাঁধের নিচের মাটি ধুয়ে গিয়ে ব্লকগুলো ধসে পড়ছে এবং বাকি অংশও ধীরে ধীরে দেবে যাচ্ছে। তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী, আলমবিদিতর, কোলকোন্দ, লক্ষ্মীটারী, গজঘণ্টা ও মর্নেয়া ইউনিয়ন, কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া, টেপামধুপুর ইউনিয়ন এবং পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নে তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর, দ্বীপচরের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। বন্যার আশঙ্কায় অনেকে ঘরবাড়ি নিয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
 
গঙ্গাচড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, বন্যায় তিস্তার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

নীলফামারী : উজানের ঢলে নীলফামারীতে তিস্তা নদীর পানি ফের বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বিকেল ৩টায় তিন সেন্টিমিটার কমে ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী, গয়াবাড়ী ও জলঢাকা উপজেলার গোলমুণ্ডা, ডাউয়াবাড়ী, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে করে এসব ইউনিয়নের অন্তত ২৫ গ্রামের ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

ভূরুঙ্গামারী : কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে গত কয়ক দিনের টানা বৃষ্টি আর ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার দুধকুমার, ফুলকুমার ও কালজানীসহ সব নদ-নদীর পানি বেড়েছে। বিপৎসীমার ছয় সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে দুধকুমার নদের পানি। নদীতীরবর্তী এলাকা ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে সদর ইউনিয়নের নলেয়া, চরভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের ইসলামপুর, পাইকেরছড়া ইউনিয়নের পাইকেরছড়া, পাইকডাঙ্গা, আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের চর ও বীর ধাউরারকুঠি, তিলাই ইউনিয়নের দক্ষিণ তিলাই ও শিলখুড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

হাতীবান্ধা : লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গোতামারী ইউনিয়নের দক্ষিণ গোতামারী এলাকার একটি রাস্তা পানিতে তলিয়ে গিয়ে দুর্ভোগে পড়েছে দুই ইউনিয়নের মানুষ। গোতামারী ও নওদাবাস ইউনিয়নের বাইপাস সংযোগ সড়কটি পানিবন্দি হয়ে পড়ায় চিকিৎসা নিতে যাওয়া বৃদ্ধা আনোয়ারা বেগমকে কলাগাছের ভেলায় করে পার করছে স্থানীয়রা। জানা গেছে, কয়েক দিনের ভারি বৃষ্টির কারণে গোতামারী ও নওদাবাস ইউনিয়নের একমাত্র সংযোগ সড়কটি পানিতে তলিয়ে গেছে। সড়কটি পানিবন্দি হয়ে পড়ায় দুই ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুর খাবার সংকটে পড়েছে। রোপণকৃত আমন ধান পানিতে তলিয়ে নষ্ট হচ্ছে। পানিবন্দি পরিবারগুলো বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে পড়েছে।