
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পথনকশা (রোডম্যাপ) প্রণয়নের বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রাথমিক আলোচনায় সেপ্টেম্বরজুড়ে অংশীজনদের সঙ্গে নির্বাচনি ইস্যুতে সংলাপের জন্য সময় রাখার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইসির দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা জানান, ইসি থেকে নির্বাচনি রোডম্যাপের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৮ আগস্টের মধ্যে এ রোডম্যাপের খসড়া চূড়ান্ত করে উত্থাপনের তাগিদ রয়েছে কমিশনের।
কমিশনের নির্দেশনার আলোকে সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের সভাপতিত্বে গতকাল বুধবার প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রাথমিক আলোচনায় রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীর আচরণবিধি চূড়ান্তকরণ ও সময়সীমা নির্ধারণ, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর সংশোধনী চূড়ান্ত করে দ্রুত আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো, নির্বাচনি মালামাল কেনার সময়সীমা এবং অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপসহ বেশকিছু এজেন্ডা ছিল। এ বিষয়ে সিরিজ সভার পর নির্বাচনি রোডম্যাড চূড়ান্ত করে নির্বাচন কমিশনের সম্মতির জন্য উত্থাপন করা হবে।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রণীত রোডম্যাপ ধরে আলোচনা শুরু হয়। সেখানে কী ধরনের কম্পোনেন্ট ও নির্বাচনের কাজের ধারাবাহিকতা অনুসরণ করা হয়েছিল, সেগুলো গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেওয়া হয়। সংক্ষিপ্ত এ সভায় রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্নের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করা, অক্টোবরের মধ্যে ৯ ধরনের নির্বাচনি মালামাল কেনা এবং সেপ্টেম্বরের মধ্যে অংশীজনদের সঙ্গে নির্বাচন ইস্যুতে সংলাপ করার বিষয়ে আলোচনা হয়।
আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য সংলাপ করতে চায় ইসি। সংলাপে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি সংস্থার আইটি বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, সিনিয়র গণমাধ্যমকর্মী এবং নির্বাচনের প্রধান স্টেকহোল্ডার নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া হবে।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, যে কোনো নির্বাচনের আগে দলগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপ ইসির কর্মকাণ্ডকে অর্থবহ করে তোলে। বর্তমান কমিশনের অধীন সেপ্টেম্বরের সংলাপটিও গুরুত্বপূর্ণ হবে। প্রধান উপদেষ্টা নিজেও বিভিন্ন সংস্কার ইস্যুতে দলগুলোর সঙ্গে সভা করেছেন। তবে এই সংলাপ ঘিরে মতামতে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব উঠে এসেছে। সরকার নির্বাচন ইস্যুতে সংলাপ করার পর ইসির এই সংলাপ কতটুকু ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়েও ধাঁধায় রয়েছে ইসি। এতকিছুর পরও নির্বাচনি রোডম্যাপে সংলাপের ইস্যুটি রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা আসার পর ইসিও কোমরবেঁধে কাজে নেমে পড়েছে। ইতোমধ্যে আরপিও সভা করে কমিশন অনুমোদন দিয়েছে। এর আগে সংসদ নির্বাচনের আচরণ বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়। এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী এখন আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া নতুন রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রাথমিক শর্তপূরণ করা ২২টি দলের মাঠের তথ্য যাচাইয়ে চিঠি দিয়েছে ইসি। আগামী অক্টোবরের মধ্যে এ কার্যক্রম শেষ করার জন্য রোডম্যাপে সময় নির্ধারণ করা হচ্ছে। একইভাবে সংসদীয় আসনের সীমানা বিন্যাসের কাজটিও সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাথমিক রোডম্যাপে।