
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সাহসী ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে ‘সাহসী সম্মাননা’ পেয়েছেন ফরিদপুরের আলোচিত ব্যক্তি শেখ ফয়েজ আহমেদ—যিনি ওই আন্দোলনে হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। তার এই সম্মাননা পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে সাংবাদিক মহল এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যে। সম্মাননা প্রত্যাহারের দাবিতে গতকাল বুধবার তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
গত মঙ্গলবার রাতে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্টে শেখ ফয়েজ জানান, সাংবাদিকতায় ২০২৪ সালে সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে তাঁকে সম্মাননাপত্র, ক্রেস্ট ও চেক প্রদান করা হয়েছে।
খবরটি ছড়িয়ে পড়লে ফরিদপুরের সাংবাদিক সমাজ ও জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অনেকেই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। তাঁদের মতে, একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে এই ধরনের স্বীকৃতি প্রদান আন্দোলনের মূল্যবোধ ও নৈতিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
বুধবার দুপুরে আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধিদল জেলা সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন এবং প্রকৃত সাহসী সাংবাদিকদের মূল্যায়নের দাবি জানান। উপস্থিত ছিলেন আবরার নাদিম ইতু, কাজী রিয়াজ, সোহেল রানা ও মাহমুদুল হাসান ওয়ালিদ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শেখ ফয়েজ আহমেদ ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের জেলা সভাপতি এবং বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের সহযোগী কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেছে। অতীতে সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি, দোকান বিক্রিতে অনিয়ম ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়, যা নিয়ে শহরে মানববন্ধন ও ঝাড়ু মিছিলও হয়। একপর্যায়ে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায়। রাজনৈতিক সংযোগ ব্যবহার করে তিনি পরে জামিন পান।
জুলাই আন্দোলনের সময় শেখ ফয়েজ আহমেদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারপক্ষের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিভিন্ন পোস্ট করেন এবং আন্দোলনকারীদের অনেককে “শিবির” ট্যাগ দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে সমালোচিত হন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১০ অক্টোবর ফরিদপুরে অনুষ্ঠিত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হামলার ঘটনায় শেখ মুজাহিদুল ইসলাম কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতাদের পাশাপাশি শেখ ফয়েজ আহমেদকে ৯৭ নম্বর আসামি করা হয়।
এমন একজন ব্যক্তিকে সাহসী সাংবাদিক হিসেবে সম্মাননা প্রদান করায় বিস্মিত সবাই। ৩ আগস্ট রাজধানীর তথ্য ভবনের ডিএফপি অডিটোরিয়ামে আয়োজিত সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম এবং সভাপতিত্ব করেন সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ। ফরিদপুর জেলার মধ্যে একমাত্র শেখ ফয়েজ আহমেদই এই সম্মাননা পান।
এ বিষয়ে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, “বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। ফরিদপুর থেকে একমাত্র আবেদনকারী ছিলেন তিনি। যাচাই-বাছাই না করায় এমন ভুল হয়েছে।”
শেখ ফয়েজ আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে তাঁর মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। একটি কল রিসিভ করার পরও কিছু না বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এ ঘটনায় জেলার সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক জানান, তাঁর কার্যালয়কে এ বিষয়ে কোনোভাবে সম্পৃক্ত করা হয়নি এবং কারও মতামতও নেওয়া হয়নি। তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন বলে জানান।
শীর্ষনিউজ