
ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে কুষ্টিয়ায় পদ্মা ও গড়াই নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গেল এক সপ্তাহে দুই নদীতে পানি বেড়েছে প্রায় ১৫০ সেন্টিমিটার। বুধবার দুপুর ৩টায় পদ্মা ও গড়াইয়ের পানি বিপৎসীমার মাত্র এক সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এভাবে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে কয়েক দিনের মধ্যেই বিপৎসীমা ছাড়িয়ে যাবে বলছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
এদিকে ধারাবাহিক পানিবৃদ্ধির ফলে নদীর পার্শ্ববর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলার দৌলতপুর উপজেলার অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির ফসলের খেত। চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দুই ইউনিয়নের বহু রাস্তাঘাট ও স্কুল প্লাবিত হয়েছে। ইউনিয়ন দুটিতে অবস্থিত প্রায় ১৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। ফসলি মাঠ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। চরের গরু-মহিষের বাথান ভেঙে গরু-মহিষ নিয়ে সবাই নিরাপদে চলে যাচ্ছেন।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণের ব্যবস্থা করছি। পানি আরও বাড়তে পারে। সেজন্য আমরা যথাযথ প্রস্তুতি নিচ্ছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, ভারত থেকে ফারাক্কা হয়ে পানি পদ্মায় পড়ছে। ২ আগস্ট থেকে ধারাবাহিকভাবে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত আছে। প্রতিদিন গড়ে দশমিক ১২ থেকে দশমিক ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানি বাড়ছে। বুধবার দুপুর ৩টায় ভেড়ামারার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানির উচ্চতা ছিল ১২ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টের বিপৎসীমা হলো ১৩ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। একই পয়েন্টে গড়াইয়ের পানির উচ্চতা ছিল ১১ দশমিক ২৯ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার। কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়ায় শহীদ তিতুমীর সড়কে সরেজমিনে দেখা যায়, পাশ দিয়ে প্রভাবিত গড়াই নদী ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। সড়কের পাশে নদীর তীরে শতাধিক পরিবারের বসবাস। তাদের অধিকাংশ বাড়িতে ঢুকে পড়েছে পানি।
অপরদিকে পদ্মার আশপাশে দেখা যায়, দুদিন আগেও যেসব এলাকা শুকনো ছিল, এখন সেখানে পানি থৈ থৈ করছে। দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ইউনিয়ন দুটি মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা হয়ে পড়েছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। এদিকে ফিলিপনগর, মরিচা, চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর চরাঞ্চলের প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির মরিচ, কলা, ধানসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের খেত তলিয়ে গেছে।
চিলমারী এলাকার জনপ্রতিনিধি শেখ নুরুজ্জামান বলেন, পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় কয়েক শ বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
মরিচা ইউনিয়নের ভুরকাপাড়া গ্রামের জামিরুল ইসলাম বলেন, গ্রামের হাজার হাজার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। কারণ নদীপাড়ের বিশাল অংশ অরক্ষিত। যে কোনো সময় লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, রাস্তাঘাটে পানি ঢুকে পড়ায় চিলমারী ইউনিয়ন মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডল বলেন, নদীর ওপারে অন্তত ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। যার অধিকাংশই পানিবন্দি।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুশতাক আহম্মেদ বলেন, বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ১৩টি বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে বিদ্যালয়গুলো খোলা থাকবে, যাতে বন্যাকবলিত মানুষ সেখানে আশ্রয় নিতে পারেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, চরাঞ্চলের প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির মরিচ, রোপা আউশ, কলা ও বিভিন্ন ধরনের সবজি, ভুট্টা বন্যার পানিতে নষ্ট হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল হাই সিদ্দিকী জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক বন্যা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া, শুকনো খাবার সরবরাহসহ দুর্যোগ মোকাবিলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে।