Image description

গত ৩১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সিনেটে শিক্ষাবিদ ক্যাটাগরিতে ৫ সদস্যকে মনোনয়ন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেই প্রজ্ঞাপনের সূত্র ধরে সংশ্লিষ্টদের মেনশন (ট্যাগ) দিয়ে অভিনন্দনের বন্যা বইয়ে যায় ফেসবুকে। সংবাদ প্রকাশ হয় গণমাধ্যমেও। তবে সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই একই ইস্যুতে নতুন আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রণালয়; যেখানে একজন অধ্যাপকের নাম বদলে আরেকজনকে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে। মূলত এরপরই অভিযোগ, রাষ্ট্রপতির আদেশে জারি হওয়া ওই প্রজ্ঞাপনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ‘প্রেশার ক্রিয়েট’ করে বদলানো হয়েছে; যেখানে মূল ভূমিকা রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত মাসের শেষের দিকে রাষ্ট্রপতির আদেশে সিনেট সদস্যদের নাম প্রকাশের পর হঠাৎ তালিকায় পরিবর্তন আসে। অভিযোগ, সাদা দলের প্রভাবশালী নেতারা এ তালিকা পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছেন। বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে অন্তত ৪ জন শিক্ষক জানিয়েছেন, তারা আগের প্রজ্ঞাপনটি দেখেছেন।

গত ৩১ জুলাই জারি করা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে আগামী তিন বছরের জন্য মোট পাঁচজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তারা হলেন— ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক (অব.) ড. সদরুল আমিন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেছানী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা। 

পুরোনো প্রজ্ঞাপনে নাম থাকা ঢাবির উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং সাদা দলের একাংশের যুগ্ম-আহ্বায়ক ড. মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেছানীর নাম থাকলেও চলতি সপ্তাহে (৭ আগস্ট) নতুন জারি করা প্রজ্ঞাপনে এই অধ্যাপককে বাদ দিয়ে সাদা দলের আহবায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসানের নাম যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ রাষ্ট্রপতির আদেশে জারি করা প্রজ্ঞাপন বদলে দিয়ে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে— এমনটাই অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কয়েকজন। এতে সাদা দলের মূল অংশের শিক্ষকরা প্রভাব খাটিয়েছে বলে দাবি ওই শিক্ষকদের।

তাদের দাবি, রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের সদয় অনুমোদনক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ, ১৯৭৩ এর আর্টিক্যাল ২০ (১) (ই) ও ২০ (২) ধারা অনুযায়ী পাঁচজন শিক্ষাবিদকে সিনেট সদস্য হিসেবে ৩ বছরের জন্য নির্দেশক্রমে মনোনয়ন প্রদান করা হলো। তবে এই মনোনয়ন প্রদানের মাত্র সপ্তাহের মধ্যে একজনকে পরিবর্তন করে দেওয়া ৭৩-এর অধ্যাদেশ লঙ্ঘন।

‘‘এই সরকার যে খুবই নাজুক সেটা এরই মাধ্যমে প্রমাণিত হলো। চাইলেই ‘প্রেশার ক্রিয়েট’ করে এরকম নাম বদলে ফেলতে পারে। সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা বিরল— ড. জোবাইদা নাসরীন, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এই ঘটনাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে নজিরবিহীন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরীন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এই সরকার যে খুবই নাজুক সেটা এরই মাধ্যমে প্রমাণিত হলো। চাইলেই ‘প্রেশার ক্রিয়েট’ করে এরকম নাম বদলে ফেলতে পারে। সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা বিরল।

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেছানী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশে সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষাবিদ ক্যাটাগরিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে ৫ জন সদস্য নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখানে আমার নামও ছিল। তবে সেই প্রজ্ঞাপনটি আমাদের কাছে আর আসেনি। আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, সেই প্রজ্ঞাপনটি প্রকাশ না করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি গ্রুপ প্রেশার ক্রিয়েট করেছে। ফলে সেটি বদলে গেছে। এ কারণে পরের প্রজ্ঞাপনে আমার নামটি আর আসেনি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয় করেছে। এ সংক্রান্ত কোনো চিঠি আমরা এখনও পায়নি। যেহেতু এখন আমাদের অগ্রাধিকার ডাকসু নির্বাচন, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন কিংবা সমাবর্তনের মতো কাজগুলো। তাই আমরা সেদিকে মনযোগ দিচ্ছি। তাছাড়া সিনেটের এখন কোনো ফাংশন নেই তা বিষয়টি নিয়ে আমরা মাথা ঘামাচ্ছি না।

জানা গেছে, গত ৩১ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি হলে বিষয়টি জানাজানি হয়। পরে সাদা দলের শিক্ষকদের প্রতিবাদের কারণে প্রজ্ঞাপনটি সংশ্লিষ্টদের কাছে আর পাঠানো হয়নি। যদিও ওই প্রজ্ঞাপনের অনুলিপি মন্ত্রণালয় ও  মনোনয়ন দেওয়া সদস্যদের পাঠানোর কথা উল্লেখ ছিল। 

নাম প্রকাশে না করার শর্তে সাদা দলের এক শিক্ষক দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, প্রজ্ঞাপন জারি হলে বিষয়টি জানাজানি হলে সাদা দলের শিক্ষকরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের কাছে গিয়ে অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসানের নাম যুক্ত না করার কারণে জানতে চান। এ সময় অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেছানীর নাম কেন তালিকায় আছে তাও জানতে চান তারা। প্রজ্ঞাপনে  অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসানের নাম যুক্ত করার দাবি জানান তারা।